ফরহিম I ইনগ্রোন ইকুয়েশন
অতিশয় অস্বস্তিকর। বিশেষ করে মুখত্বকে। নিবারণের উপায় শিরীন অন্যার লেখায়
শেভিং, ওয়াক্সিং কিংবা টুইজিংয়ের পর অনেক সময় দাড়ি গোড়ার দিকে না বেড়ে পাশ দিয়ে বাড়ে। বেশির ভাগ সময় ত্বকে জমে থাকা মরা কোষের কারণে দাড়ি চামড়ার ভেতর আটকে এমনটা হতে পারে। ফলাফল ব্যথাদায়ক ফোড়ার মতো বস্তু। কিন্তু আদতে ফোড়া বা পিম্পল কোনোটাই নয়। ইনগ্রোন হেয়ার ইফেক্ট। দাড়ি প্রাকৃতিকভাবে কোঁকড়া হলে এর শঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
ইনগ্রোন হেয়ারের প্রথম লক্ষণ হলো ত্বকে উঁচু লালচে বাম্প। এটি দেখতে সিস্ট বা ফোড়ার মতো ব্যথাদায়ক হতে পারে। ইনগ্রোন হেয়ার ত্বকে চুলকানি এবং অস্বস্তিকর ভাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিছু অতি সাধারণ সাবধানতা অবলম্বন করলেই ইনগ্রোন হেয়ারের সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। ইনগ্রোন হেয়ার থেকে ত্বকে ইনফেকশন হতে শুরু করলে ঝামেলা বাড়ে। এমনটা হলে শরণাপন্ন হতে হবে একজন অভিজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্টের। খেতে হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিকও। তাই আগে থেকেই এ বিষয়ে সচেতন হলে অনেকাংশে ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রিভেনশন
ত্বকের ওপর যেকোনো ধরনের প্লাকিং, শেভিং কিংবা ওয়াক্সিং ইনগ্রোন হেয়ার উৎপত্তির কারণ হতে পারে। যেহেতু এসব বাদ দেওয়া যাবে না, তাই চুলগুলো যেন কোনো বাধা ছাড়া ত্বকের ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে পারে, সে পথ সুগম করতে হবে।
ডিসইনফেক্টিং ক্লিনজার
ত্বকে ইনগ্রোন হেয়ারের প্রবণতা থাকলে শেভ করার আগে সালফার বা বেনজয়েল পার-অক্সাইডযুক্ত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এটি এমন সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া দূর করে দিতে পারে, যেগুলো ত্বকের নিচের আটকে থাকা চুলের সংস্পর্শে ত্বকে ইনফেকশন তৈরি করে। সেই সঙ্গে শেভিংয়ের কারণে তৈরি হওয়া ত্বকের জ্বালাপোড়া কিংবা শেভিং বাম্প দূর করতেও কার্যকর এগুলো।
স্লো শেভিং
কোনো রকম তাড়াহুড়া ছাড়া, ধাপে ধাপে শেভ করার প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে নিরাপদ। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই স্কিন কন্ডিশনিং এবং হেয়ার সফটেনিং শেভিং অয়েল, সেনসিটিভ শেভিং এবং পোস্ট শেভিং টোনিং বাম ব্যবহার জরুরি। শেভ করার সময় এদিক-সেদিক স্ট্রোক না করে খুব সাবধানতার সঙ্গে ধীরে ধীরে সময় নিয়ে একেকটা স্ট্রোক দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিটি স্ট্রোকের পর কুসুম গরম পানিতে খুব ভালোভাবে রেজরটা বারবার ধুয়ে নিতে হবে। বেশি সময় নিয়ে শেভ করাটা ত্বকের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী, পাশাপাশি থেরাপিউটিকও বটে।
নো ড্রাই শেভিং
সব সময় চেষ্টা করতে হবে ভেজা কিংবা আর্দ্র ত্বকে শেভ করার। সাধারণত গোসলের পরপরই শেভিংয়ের মোক্ষম সময়। ত্বকের পোরগুলো খুলে দিতে এবং দাড়ি গোড়া থেকে নরম করতে উষ্ণ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নেওয়াটা বেশ কার্যকর। এর ফলে খুব কম এবং হালকা স্ট্রোকেই শেভিং সেরে নেওয়া যাবে। ফলে ত্বকে কম ঘষা লাগবে, ইনগ্রোন হেয়ারের প্রবণতা কমে যাবে। কারণ, বারবার রেজরের টান শুধু বিরক্তিকরই নয়, ত্বকের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতেও যথেষ্ট। মসৃণ শেভিংয়ের জন্য একটি ভালো ব্র্যান্ডের শেভিং ক্রিম বা জেলও ব্যবহার করা জরুরি। এতে ত্বক আর্দ্র থাকবে, কমে আসবে ইনগ্রোন হেয়ারের সমস্যা।
ফ্রেশ ব্লেড অর সেফটি রেজর
শেভিংয়ের সময় নতুন কিংবা পরিষ্কার ব্লেইড ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকে বারবার রেজরের টান দিতে না চাইলে পরিষ্কার এবং ধারালো ব্লেড ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ৬ থেকে ৮ বার শেভিংয়েই পরেই ব্লেড পাল্টে ফেলা প্রয়োজন কিংবা ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পরপর ব্লেড পাল্টে নিলেও চলবে। এ ছাড়া সিঙ্গেল ব্লেডেড সেফটি রেজর ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা ডাবল এজড ব্লেড দাড়িগুলোকে আরও ভেতর থেকে কেটে নিয়ে আসে, যা ইনগ্রোন হেয়ারের প্রবণতা বাড়ায়।
শেভ উইথ দ্য গ্রেইন
দাড়ি যেদিক দিয়ে বাড়ে, সেদিকেই শেভিংয়ের স্ট্রোক দেওয়া জরুরি। হেয়ার গ্রোথের দিকে শেভ করলে সহজে ত্বকের ফেশিয়াল হেয়ারজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয় না।
ট্রিটমেন্ট
যদি ইনগ্রোন হেয়ারের সমস্যা ইতিমধ্যে দেখা দিয়েই থাকে, সে ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ধাপ অবলম্বন করে এগুলো সারানো যেতে পারে সহজেই।
স্টেরিলাইজ: শুরুতেই সংক্রমিত স্থান খুব ভালো করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। রাবিং অ্যালকোহল ব্যবহার করে ত্বক স্টেরিলাইজ করে নেওয়া যায়। এটি ইনগ্রোন হেয়ারের আশপাশের অংশের ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং এর ইনফেকশনের আশঙ্কা কমিয়ে আনে।
ওয়ার্ম কমপ্রেস: সংক্রমিত স্থানে পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে চেপে নিতে হবে। এটি পোর খুলে দিয়ে দাড়ি ওপরের দিকে ত্বকের খুব কাছাকাছি নিয়ে আসে। তবে কখনোই সরাসরি ত্বকে গরম পানি দেওয়া যাবে না। বারবার কাপড় ভিজিয়ে নিয়েই মুখে চেপে ধরতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে এভাবে করে নিলেই চলবে।
টুইজ ইট, ডোন্ট স্কুইজ ইট: যদি ত্বকের নিচে ইনগ্রোন হেয়ার দৃশ্যমান হয়, তবে টুইজারের সাহায্যে সেটি বের করে আনা যায়। তবে প্লাকিং বারণ। শুধু ত্বকের ভেতর থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে হবে ইনগ্রোন হেয়ার। এতে দাড়ি নিজের মতো করে বাড়তে পারবে এবং আশপাশে ইনফেকশন হওয়ারও শঙ্কা কমবে। তবে চুল ভালোভাবে দেখা না গেলে অযথা খোঁটাখুঁটি করতে না যাওয়াই ভালো। আর কোনোভাবেই জোরে চাপাচাপি করা যাবে না।
সব শেষে আরও একবার রাবিং অ্যালকোহল হাতে নিয়ে আলতো করে মুখে চেপে চেপে মেখে নিতে হবে। এর ফলে ত্বক পরিষ্কার থাকবে এবং ইনগ্রোন হেয়ারের সমস্যা খুব জলদিই সেরে উঠবে।
মডেল: যশ মির্জা
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: তানভীর খান