ইন্টেরিয়র I নান্দনিক অন্দর
অন্দরসজ্জায় হাত দেয়ার আগে বসবাসকারীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানা দরকার। ভূ-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও ভাবনায় রাখা জরুরি। লিখেছেন ফায়জা আহমেদ
অন্দরসজ্জায় বাঙালিয়ানা টিকিয়ে রাখা আজকাল কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদেশি পণ্যের আধিপত্যে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ভূ-সাংস্কৃতিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপকরণ।
বাংলাদেশ শীতপ্রধান নয়; এ দেশের স্থাপত্যে গ্রীষ্মের প্রভাবই সংগত। পুরোনো বাড়িগুলোর দিকে তাকালে সেটাই লক্ষ করা যায়। কিন্তু আজকাল পাশ্চাত্য ডিজাইনের প্রভাবে স্থাপত্যের এই ঐতিহ্য থেকে সরে আসার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে খানিকটা সুযোগের অভাবে ভবনগুলোয় ভৌগোলিক নিজস্বতা রক্ষা করা যাচ্ছে না।
রঙিন অন্দর
ঘরের কোনো একটা অংশ প্রিয় রঙে-ঢঙে সাজাতে চাইছেন প্রায় সবাই। কিন্তু সিদ্ধান্ত কীভাবে নেবেন, বা কোন অংশ বেছে নেবেন, এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনেকটাই জড়িয়ে আছে। পরামর্শও জরুরি।
আপনার প্রিয় রঙ লাল হতেই পারে; কিন্তু এই রঙ মানসিক স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করবে কি না, জানা প্রয়োজন। তেমনি বোঝা দরকার এতে ঘরের আলো কমে অস্থিরতা তৈরি হবে কি না। ভালো ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা এসব মাথায় রাখেন।
গাঢ় কোনো রঙ বাড়ির অভ্যন্তরে এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আকাশি, সমুদ্র-সবুজ, হালকা খয়েরি, হলুদ, ধূসর ঘরের অন্দরকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। তবে এগুলোর সঙ্গে আলোর কী সম্পর্ক হবে, সেটা মাথায় রাখা জরুরি। স্টাডি রুম বা পড়ার ঘর ছাড়া অন্যান্য কামরায় সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে হলুদাভ আলো।
দেয়ালে রঙের বিস্তার একটু বেশি হলে কাঠের সঙ্গে ভারসাম্য আসে। পাশাপাশি থাকতে পারে খোদাইয়ের কাজ। পছন্দের গান বা কবিতা খোদাই করে কাঠে সাজিয়ে নিতে পারেন। আজকাল অবশ্য ওয়ালপেপারের ব্যবহার দেখা যায়। কিন্তু এগুলো মূলত শীতপ্রধান দেশের আবহাওয়াকে বিবেচনায় রেখে তৈরি। অনেকে অবশ্য শখের বশে ডিজাইন দেখে দেয়ালে লাগিয়ে ফেলেন। এগুলো বর্ষা আসতে না-আসতেই খুলে যেতে পারে। অবশ্য একটু মাথা খাটিয়ে ওয়ালপেপার লাগানো উচিত। এ ক্ষেত্রে প্লেইন বোর্ড প্যানেলিং করে পেপারে আঠা লাগালে খুলে যাবার ঝুঁকি থাকে না। তবে খরচ একটু বেশি পড়বে।
দেয়ালে নিজেও টেক্সচার তৈরি করতে পারেন বা করিয়ে নিতে পারেন। রঙের সঙ্গে কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে অথবা কোনো নরম কাপড় দিয়ে আইকা মিশিয়ে মনমতো স্টোন ইফেক্ট আনতে পারেন।
ঘরের মেঝেতে বর্তমানে টাইলসের বিকল্প নেই; কিন্তু এর উপর অর্থাৎ মেঝেতে মাদুর, নাকি শতরঞ্জি- তা যার যার নিজস্ব পছন্দের বিষয়। তবে যাদের বাসা ছোট এবং যারা দেশীয় পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী, তাদের জন্য রঙিন শতরঞ্জিই ভালো; মেঝে রঙিন হলে সাদা পর্দাতেও ঘর হয়ে যায় সুন্দর।
যারা খুব স্মৃতিকাতর এবং নিজেদের তৈরি জিনিস ব্যবহার করে আনন্দ পান, তারা পুরোনো শাড়ি বা কাঁথায় ৪-৫ রকমের অ্যাপ্লিকে করে ঘরের মেঝেতে ম্যাট হিসেবে পেতে রাখতে পারেন। তাতে অন্য রকম সৌন্দর্য আসবে।
বাসিন্দার বয়স, পেশা, ব্যক্তিত্ব, রুচি ইত্যাদি জানা দরকার, যিনি অন্দরসজ্জার কাজটি করবেন তার জন্য এটা আবশ্যিক একটি বিষয়।
অর্থাৎ যিনি বসবাস করবেন, তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে না জেনে কোনো ডিজাইনারেরই উচিত নয় অন্দরসজ্জায় হাত দেয়া। কেননা আরাম, উপযোগ, স্বাস্থ্যরক্ষার সঙ্গে রুচিও গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: স্বত্বাধিকারী, স্টুডিও গ্রিন
faiza.designer@gmail.com
ছবি: স্টুডিও গ্রিন