সেলুলয়েড I ডোন্ট ডাই উইদাউট টেলিং মি হোয়ার ইউ আর গোয়িং
অরিজিনাল শিরোনাম: No te mueras sin decirme adónde vas
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: এলিসেও সুবিয়েলা
অভিনয়: দারিও গ্রান্দিনেত্তি, মারিয়ানা আরিয়াস, অস্কার মার্তিনেজ, মনিকা গালান
সিনেমাটোগ্রাফি: হুগো কোলেস
সময়ব্যাপ্তি: ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট
ভাষা: স্প্যানিশ
দেশ: আর্জেন্টিনা
মুক্তি: ৪ মে ১৯৯৫
১৮৮৫ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি। কিংবদন্তি উদ্ভাবক টমাস আলভা এডিসনের এক সহকারী নিজের সদ্য প্রয়াত স্ত্রীকে জানালেন শেষ বিদায়। এমন ওপেনিং দৃশ্যেই শুরু আর্জেন্টাইন মাস্টার ফিল্মমেকার এলিসেও সুবিয়েলার মাস্টারপিস সিনেমা ‘ডোন্ট ডাই উইদাউট টেলিং মি হোয়ার ইউ আর গোয়িং’। এ দৃশ্যের পর আমরা একঝলকে চলে আসি বর্তমান কালে। দেখি, আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে লিওপলদো (দারিও গ্রান্দিনেত্তি) নামে এক মাঝবয়সী উদ্ভাবক তার উদ্ভাবিত এক আজব যন্ত্রে অচেনা নারীর সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক ঘিরে দেখা স্বপ্নের রেকর্ডিং করছে! ঘুমের ভেতর দেখা স্বপ্নকেও ক্যামেরাবন্দি করা সম্ভব—নিজের এমন উদ্ভাবন নিয়ে একই সঙ্গে ব্যাপক ঘোরগ্রস্ত ও দ্বিধান্বিত সে। কেননা, স্থানীয় এক সিনেমা হলের এই প্রজেকশনিস্ট ব্যক্তিজীবনে সুজানার (মনিকা গালিন) সঙ্গে সংসার করছে ২০ বছর ধরে। তার স্বপ্নে এসে ক্যামেরার ফিতায় বন্দি হওয়া ওই নারী তাহলে কে?
সেই ধোঁয়াশাকে বাড়িয়ে দিয়ে, পরের দিনই সেই নারীকে (মারিয়ানা আরিয়াস) সে বাস্তব জীবনেও দেখতে পায়—নিজ কর্মক্ষেত্র, ওই সিনেমা হলের ঠিক বাইরে। বিহ্বল লিওপলদোকে মেয়েটি জানায়, তার নাম র্যাচেল। আরও জানায়, লিওপলদোর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার, শতবর্ষ আগে; লিওর নাম ছিল তখন উইলিয়াম! শুধু তা-ই নয়, শত শত বছর ধরে দুনিয়ার নানা প্রান্তে নানা পরিচয়ে পুনর্জীবন ঘটেছে দুজনের! একই সঙ্গে জানায় এক করুণ বার্তা: লিও তাকে দেখতে পাবে ঠিকই, ছুঁতে পারবে না। তক্ষুনি নারীটিকে আলিঙ্গন ও চুম্বনের তীব্র বাসনা লিওপলদোর ভেতর জেগে উঠলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় মহাকালের অমোঘ নিয়ম।
এমন সাক্ষাৎ লিওর মনে জাগিয়ে তোলে ভীতি। নিজের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঁকি দেয় তার মনে। সব সময় ভাবতে থাকে, এই বুঝি তার পাশে অদৃশ্য হয়ে দাঁড়াল এসে কেউ। একদিকে নারীটির প্রতি তার প্রেমবোধ ক্ষণে ক্ষণে গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে, অন্যদিকে তারা দুজনেই নিজেদের পরম ভয়কে জয় করার পথে লড়তে থাকে বিষম লড়াই। পরস্পর এক হয়ে যাওয়ার পথে র্যাচেলের ভয়—জীবনকে গ্রহণ করার; লিওর ভয়—মৃত্যুকে আলিঙ্গনের। এখানে আমাদের পৃথিবীর আভা, আত্মা ও পুনর্জীবনের এক অদৃশ্য মাত্রাকে জলজ্যান্ত করে তুলেছেন ‘সিনেমায় জাদুবাস্তবতার কবি’খ্যাত নির্মাতা সুবিয়েলা।
সিনেমাটি দেখতে দেখতে আপনি ক্ষণে ক্ষণে হেসে উঠবেন, কেঁদে উঠবেন, হয়ে উঠবেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়; কিন্তু এর জোরালো আবেগাত্মক ঘোর নিজের মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন না কিছুতেই। তবু বলি, বাস্তব-অবাস্তব-পরাবাস্তব-জাদুবাস্তবে একাকার দুনিয়ায় প্রেমের সফল পরিণতি—মিলনের প্রশ্নে র্যাচেল কিংবা লিওর মতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই আসলে। কেননা, মৃত্যু মানেই সব শেষ নয়, বরং শরীর ও আত্মার মধ্যে এক অন্যতর ও শাশ্বত সম্পর্ক গড়ে তোলার একটি পথমাত্র—এই বার্তা দেয় সিনেমাটি।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। এলিসেও সুবিয়েলা কোন উপাধিতে খ্যাত?
[ক] সিনেমায় জাদুবাস্তবতার কবি
[খ] সিনেমায় নিওরিয়ালিজমের প্রবর্তক
[গ] পোয়েটিক নিওরিয়ালিজমের অনুসারী
[ঘ] রিয়ালিস্টিক ফিল্মমেকার
২। লিওপলদো কী ধরনের যন্ত্রের উদ্ভাবক?
[ক] বিধ্বংসী আগ্নেয়াস্ত্র
[খ] স্বপ্নকে ক্যামেরাবন্দি করার যন্ত্র
[গ] স্লিপওয়াকিং মেশিন
[ঘ] না খেয়ে দীর্ঘায়ু লাভের যন্ত্র
৩। লিওপলদোর পেশা কী?
[ক] অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার
[খ] প্রজেকশনিস্ট
[গ] টাইপরাইটার
[ঘ] ফিল্মমেকার
গত পর্বের বিজয়ী
১. লামিয়া আক্তার, ধানমন্ডি, ঢাকা।
২. হাসান আজিজুল, গুলশান, ঢাকা।
৩. জিনাত জাহান মুন্নি, হালি শহর, চট্টগ্রাম।