ফিচার I নামে নন্দিত পদ
মানুষের নামে খাবারের নাম। এ রকম পদ খুব কমই রয়েছে। তবে প্রতিটির পেছনে আছে মজার ঘটনা
খাবারের নামকরণ নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত। কখনো আবিষ্কারকের নামে, কখনো বিখ্যাত তারকার নামে খাবারগুলো পরিচিত হয়ে উঠেছে। বন্ধুত্বের ভালোবাসা দেখাতেও খাবারের নাম হয়েছে বন্ধুর নামে। মাঝেমধ্যে আবার স্ত্রীকে খুশি করতে কোনো প্রেমিক রসুইকরের ভালোবাসা মিশ্রিত পদের নাম রাখা হয়েছে সেই শেফের নামেই।
ফেতুচ্চিনি আলফ্রেদো: রোমে আলফ্রেদো নামের একটি রেস্তোরাঁ জনপ্রিয় হয়েছিল। এর মূল রসুইকর ছিলেন আলফ্রেদো দি লেলিও। ভদ্রলোক নিজের স্ত্রীকে ভীষণ ভালোবাসতেন। তাই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বিশেষ কিছু তৈরি করে খাওয়ানোর তাগিদ অনুভব করেছিলেন। পনির, মাখনসহ আরও উপকরণ দিয়ে তিনি একটি বিশেষ পদ বানিয়েছিলেন। তাই খাবারটির সঙ্গে তার নাম জুড়ে গেছে। এখন এটিকে ফেতুচ্চিনি আলফ্রেদো নামেই চেনে লোকে। যদিও পদের উপকরণে অনেক ফিউশন হয়েছে।
ম্যাগি: খুবই পরিচিত নাম। এসেছে জুলিয়াস মাইকেল জোহানেস ম্যাগির কাছ থেকে। কারখানার শ্রমিকদের জন্য ঝটপট ও স্বাস্থ্যকর একটি পদ তৈরির দরকার পড়েছিল তার। সেই ভাবনা থেকেই ১৮৬৬ সালে ম্যাগি সুপ ও প্রি কুকড ফুড তৈরি করেছিলেন তিনি।
ব্যানানাস ফস্টার: খাবারটির নামের সঙ্গে যুক্ত আছে বন্ধুত্বের নিদর্শন। এর উদ্ভাবন ১৯৫০ সালে, নিউ অরলিন্সে। ব্রেন্নান নামে এক রেস্তোরাঁর মালিক ছিলেন ওউয়েন ব্রেন্নান। তিনি তার রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ পল ব্ল্যাঞ্জকে অনুরোধ করেন কলা দিয়ে নতুন কোনো পদ তৈরি করতে। কথামতো টুকরা করে কাটা কলায় ক্যারামেল ও আইসক্রিম দিয়ে নতুন এই পদ তৈরি করা হয়। ব্রেন্নান সেটির নাম রাখলেন নিজের বন্ধু নিউ অরলিন্সের ক্রাইম কমিশনের চেয়ারম্যান রিচার্ড ফস্টারের নামে।
জার্মান চকোলেট কেক: এর সঙ্গে জার্মানির সম্পর্ক নেই, আছে আমেরিকার। উনিশ শতকের শেফ ছিলেন স্যাম জার্মান। তার একটি বেকারিও ছিল বেকার’স জার্মান’স সুইট চকোলেট নামে। ১৯৫৭ সালের দিকে বেকারির কেক বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি তার তৈরি কেকের রেসিপি প্রকাশ পেয়েছিল ডালাসের এক পত্রিকায়। কিন্তু দিনে দিনে স্যাম জার্মানের কেকের কদর কমতে থাকে। নামটিও ক্ষয় পেতে পেতে ‘জার্মান চকোলেট কেক’ হয়ে যায়।
এগস বেনেডিক্ট: হ্যাংওভার দূর করতে বিশেষ একটি পদ তৈরি করেছিলেন ল্যামুয়েল বেনেডিক্ট। তার নামানুসারেই এই পদের নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা। তবে এর বাইরে আরেকটি গল্প প্রচলিত আছে। ডেলমোনিকোর মূল শেফ এই পদ লেগ্রান্ড বেনেডিক্ট নামের একজনের জন্য তৈরি করেছিলেন বলে শ্রুত রয়েছে। এই দুজনের একজনের নামানুসারে খাবারটির নাম রাখা হয়েছে। দুজন বেনেডিক্টই ছিলেন স্টকব্রেকার।
সিজার স্যালাড: গত শতকে মেক্সিকোর তিহুয়ানাতে ইতালিয়ান-আমেরিকান একটি রেস্তোরাঁ ছিল। নাম ‘হোটেল সিজার’। এর প্রধান শেফ ছিলেন সিজার কার্ডিনি। তিনিই প্রথম সিজার স্যালাড তৈরি করেন। মূলত আমেরিকান পর্যটকদের সামনে বাহারি স্বাদের খাবার পরিবেশনের উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন পদ তৈরি করতেন। তার বানানো কিছু পদ জনপ্রিয়তা পায়, কিছু আবার তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়। তার তৈরি একটি স্যালাড মানুষ পছন্দ করেছিল। সেটিই ১০০ বছর ধরে টিকে আছে। এই স্যালাডের নামই সিজার স্যালাড।
ব্লাডি মেরি: ইংল্যান্ডের রানির নামে এর নাম। সালটা ১৯২১। প্যারিসের এক পানশালায় তৈরি হয় ভদকা ও টমেটোর জুসের এই পদ। তৈরি করেছিলেন ফেরনো পেঁতিও নামের এক যুবক। কিন্তু পদটির নাম কী দেওয়া যায়, তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে রানির নামেই সেটির নাম দেন তিনি।
মার্গারিটা পিৎজা: ইতালির রানির নামে নাম। নিজ দেশের শহর ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন রানি। তাকে খাওয়ানোর জন্যই এই পদ তৈরি করা হয়। পরে রানির নামানুসারে এর নাম হয়ে যায় মার্গারিটা পিৎজা।
রুবেন স্যান্ডউইচ: ১৯২০ সালের দিকে এ ধরনের স্যান্ডউইচের উদ্ভব। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে। নেব্রাস্কার হোটেল ওমাহার প্রধান শেফ ছিলেন বার্নার্ড শিমেল। একদিন কিছু পোকার খেলোয়াড় তার রেস্তোরাঁয় এসে স্ন্যাকস চাইলে তিনি একধরনের স্যান্ডউইচ তৈরি করে খাওয়ান। তিনি প্রথম যে খেলোয়াড়কে খাবার পরিবেশন করেছিলেন, তার নাম ছিল রুবেন কুলাকোফস্কি। রুবেনের কাছে খুব ভালো লেগে যায় স্যান্ডউইচটি। পরে তার নামেই এর নামকরণ হয়।
কব স্যালাড: ১৯৩৭ সালের রেস্তোরাঁ হলিউড ডার্বি। কর্ণধারের নাম বব কব। তার নামানুসারেই এই স্যালাডের নামকরণ। হলিউড আর্টিস্টদের আনাগোনায় মুখর থাকত হলিউড ডার্বি। একদিন প্রচন্ড ভিড় থাকায় কাজের চাপ এতই বেড়ে গিয়েছিল যে কিছুই খাওয়া হয়নি বব কবের। তাই দিন শেষে ফ্রিজ খুলে যা পেয়েছিলেন, তা-ই দিয়ে একটি পদ তৈরি করেন। সেটিই আজকের কব স্যালাড।
চিকেন সাঞ্জু বাবা: বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের নামে রাখা হয়েছে পদটির নাম। ঘটনা ১৯৮৬ সালের। মুম্বাইয়ের নূর মোহাম্মাদি হোটেল কর্তৃপক্ষ সঞ্জয় পরিবারকে আমন্ত্রণ জানায়। এরপর মাঝেমধ্যেই সেখানে খেতে যেতেন এই অভিনেতা। এমনকি রেস্তোরাঁ থেকে খাবার পাঠানো হতো তার বাড়িতে। ২০১০ সালে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ মুরগি দিয়ে বানানো তাদের একটি খাবারের নাম এ তারকার নামে রাখে।
সোনম কাপুর স্পেশাল কেক: নিজের জন্মদিনে মুম্বাইয়ের একটি বেকারিতে কেক অর্ডার করেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী সোনম। বিশেষভাবে তৈরি কেকটি বেশ পছন্দ করেছিলেন তিনি। এরপর বেকারিতে নিয়মিতই ওই কেক তৈরি হয়। মেলে ‘সোনম কাপুর স্পেশাল কেক’ নামে।
সালিসবারি স্টেক: আমেরিকান ফিজিশিয়ান জেমস হেনরি সালিসবারির নামে এই পদের নাম। তিনি সৈন্যদের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সেনাদের জন্য বিশেষ এক স্টেক তৈরি করতেন সালিসবারি। আলু ও গ্রেভির মিশ্রণে। তিনি দাবি করেছেন, তার উদ্ভাবিত এই স্টেক কানেক্টিভ টিস্যুর জন্য উপকারী। সহজে পরিপাকও হয়। সেই থেকেই স্টেকটি জনপ্রিয়। তার নামানুসারেই পরিচিত হয় পদটি।
হুমা কুরেশিজ ফেবারিট: দিল্লির অভিনেত্রী হুমা কুরেশি খাবার নিয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতে। একবার ইতালিতে শুটিংয়ে গিয়ে কোনো খাবারেই মন বসাতে পারছিলেন না। পরে কয়েকটি মেনু অর্ডার করে সেগুলো একসঙ্গে খেয়ে তৃপ্ত হন। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ সেই পদের নাম রাখেন ‘হুমা কুরেশিজ ফেবারিট’।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট