সেলুলয়েড I রীনা ব্রাউন
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: শামীম আখতার
অভিনয়: প্রমা পাবনী, বরুণ চন্দ, মাহফুজ রিজভী, শম্পা রেজা
সিনেমাটোগ্রাফি: বরকত পলাশ, কাসেফ শাহবাজী
ভাষা: বাংলা
দেশ: বাংলাদেশ
মুক্তি: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭
মুক্তিযুদ্ধ। একই সঙ্গে গৌরব ও বেদনার ইতিহাস। ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ আসা স্বাধীনতায় জড়িয়ে রয়েছে অগুনতি মানুষের নানান ত্যাগ-তিতিক্ষা। শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই নয়, ব্যক্তিমানুষের অন্তরমহলের অলিগলিতেও ছড়িয়ে রয়েছে এর টকটকে লাল দাগ। এই লাল শুধু আক্ষরিক অর্থে রক্তের রং নয়, উদীয়মান সূর্যেরও। মহান মুক্তিযুদ্ধ দুই তরুণ-তরুণীর ব্যক্তিগত ও চেতনালব্ধ অস্তিত্বে যে দাগ কেটে গেছে, তারই ঝলমলে প্রকাশ ‘রীনা ব্রাউন’। বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার শামীম আখতার এর নির্মাতা।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার গল্প ‘রীনা ব্রাউন’-এর পরতে পরতে দেখা মেলে জীবন, যুদ্ধ, প্রত্যাশা, আত্মত্যাগ মিলেমিশে দুটি ছেলে-মেয়ের প্রবল আবেগাত্মক টানাপোড়েন এবং নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধে নামার কাব্যিক এক চিত্র। একসঙ্গে জীবনের পথচলার স্বপ্নে বিভোর ওই তরুণ-তরুণীর মাঝে বাধার পাহাড় হয়ে আসে মুক্তিযুদ্ধ। পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তারা। এরপর কেটে যায় অনেক দিন। সেই তরুণ-তরুণী এখন বুড়োবুড়ি। দীর্ঘকাল পর আবারও হয় দেখা তাদের। এবার কী কথা হবে, তবে?
সেই স্মৃতিকাতর কথোপকথনের সূচনা দিয়েই এই চলচ্চিত্র শুরু; তা দিয়েই শেষ। এর ফাঁকে ফাঁকে কখনো ফ্ল্যাশব্যাক, কখনো আবার বর্তমানে ফেরা—এমন দারুণ ন্যারেশনের খেলায় চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি, কাব্যিক সংলাপ ও দুর্দান্ত শট ডিভিশনের মধ্য দিয়ে আলগোছে উঠে আসে ইতিহাসের এক তিক্ত সত্যও। শুধু ১৯৭১ সাল নয়, বরং সুদীর্ঘকালের দীর্ঘ লড়াইয়ের সুফল হিসেবে যে গৌরবময় বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম, সেই গৌরবগাথার আড়ালে চাপা পড়ে থাকা কিছু নির্মম সত্য, কিছু মানুষের আপোস ও গোলামির কাহিনি উঠে আসে তাতে। ব্রিটিশদের ২০০ বছরের শাসনকালে তাদের গোলামি করা, পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাত, দেশভাগে কলকাঠি নাড়া, পর্যায়ক্রমিক সামরিক শাসন-শোষণের স্তুতি, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নীলনকশায় সংশ্লিষ্টতা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে বাঙালির মুক্তির দাবির বিপক্ষে কাজ করা, এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েও স্বাধীনতাবিরোধীর ভূমিকা রাখা—এই কাতারে, সংখ্যায় কম হলেও, এ ভূখণ্ডের কিছু মানুষ ছিল জড়িত। কেন্দ্রীয় চরিত্র রীনা ব্রাউন এবং তার একসময়ের প্রেমিকের কথোপকথনের ভেতর, রোমান্টিসিজমের মাত্রা ছাপিয়ে, সেই কালো ইতিহাসেও বিচক্ষণ চোখ রেখেছেন পরিচালক শামীম আখতার। তাতে একই সঙ্গে উঠে এসেছে একজন স্বপ্নবাজ নারীর অন্তরে পুষে রাখা আত্মত্যাগের এক দগ্ধ মহিমা। রীনা ব্রাউন তাই শুধু ব্যক্তি রীনাই থাকেনি, পরিণত হয়েছে অগুনতি নারীর প্রতিমায়।
এই চলচ্চিত্রে মূলত উঠে এসেছে দুটি সময়ের গল্প। প্রথমটি মুক্তিযুদ্ধকালের; দ্বিতীয়টি বর্তমানের। রীনার দুই সময়ের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন প্রমা পাবনী। অন্যদিকে, তার প্রেমিকের চরিত্রে তরুণ বয়সের অভিনয়ে দেখা গেছে মাহফুজ রিজভীকে, বুড়ো বয়সের অভিনয়ে ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় অভিনেতা বরুণ চন্দ।
নারীত্ব ও মুক্তিযুদ্ধকে একাকার করে তোলার উদাহরণ বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে বিরলই বলা চলে। সে ক্ষেত্রে ‘রীনা ব্রাউন’ এক উজ্জ্বল নাম।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। রীনার বুড়ো বয়সের চরিত্রে কে অভিনয় করেছেন?
[ক] শামীম আখতার
[খ] শম্পা রেজা
[গ] প্রমা পাবনী
[ঘ] বরুণ চন্দ
২। ‘রীনা ব্রাউন’-এর নির্মাতা কে?
[ক] শামীম আখতার
[খ] তারেক মাসুদ
[গ] তানভীর মোকাম্মেল
[ঘ] শেখ নিয়ামত আলী
৩। রীনার তরুণ বয়সের চরিত্রের অভিনেতা কে?
[ক] বরুণ চন্দ
[খ] মাহফুজ রিজভী
[গ] আহমেদ রুবেল
[ঘ] মাহফুজ আহমেদ
গত পর্বের বিজয়ী
১. নাজিয়া সুলতানা, বাড্ডা, ঢাকা।
২. রূপা দত্ত, উত্তরা, ঢাকা।
৩. অনিক তালুকদার, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।