ই-সোসাইটি I টাকা দেবে ইউটিউব!
ইউটিউব ছাড়া যেন আমাদের চলেই না! কিন্তু আমরা কি শুধু দর্শকই থাকব? না!
আমেরিকান অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে নিয়েছে বহুদিন ধরেই। এই ই-সোসাইটির স্রেফ একজন ভোক্তা বা দর্শক না হয়ে, এটিকে উপার্জনের পথ হিসেবেও বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। তাদেরই একজন হতে চান যদি, জেনে নিন কিছু উপায়।
আয়ের আগে
শুরুতেই থাকা চাই আপনার একটি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল। ইউটিউব যেহেতু গুগলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, তাই এখানে সব কাজেই আপনার দরকার একটি গুগল অ্যাকাউন্ট। সেই অ্যাকাউন্ট দিয়ে ইউটিউবে লগ-ইন করুন। তারপর ফলো করুন আরও কিছু ধাপ।
ইউটিউবের ওয়েবসাইটে [Youtube.com] গিয়ে ‘সাইন ইন’ বাটনে করুন ক্লিক। তারপর ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করুন।
আপনার অ্যাকাউন্ট পিকচারের ওপর ক্লিক করুন। তারপর ক্লিক করুন ‘ক্রিয়েট চ্যানেল’ বাটনে। চ্যানেলের নাম ইচ্ছেমতো দিতে পারবেন। তবে উপার্জনের উদ্দেশ্যে যেহেতু চ্যানেল খুলছেন, তাই কোনো ব্র্যান্ডের নাম দেওয়াই ভালো। কেননা, তাহলে ‘ইউটিউব অ্যানালাইসিস’ সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি এমন অনেক কিছুই করতে পারবেন, যা ব্যক্তিগত চ্যানেলে সম্ভব নয়।
ব্র্যান্ড চ্যানেল খোলার জন্য নিজের প্রোফাইল পিকচার বা আইকনে ক্লিক করে ‘সেটিং’য়ে প্রবেশ করুন। তারপর ‘ক্রিয়েট আ নিউ চ্যানেল’ অথবা ‘অ্যাড অব ম্যানেজ ইউর চ্যানেল(স)’-এ ক্লিক করে ব্র্যান্ড চ্যানেল খুলতে পারেন।
চ্যানেলটি সাজিয়ে-গুছিয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন। প্রাথমিকভাবে প্রোফাইল পিকচার, ব্যানার ও ভিডিও ওয়াটারমার্ক যুক্ত করুন। এসব যুক্ত করতে studio.youtube.comএ প্রবেশ করে জিমেইল দিয়ে সাইন ইন করুন।
পার্টনার প্রোগ্রাম
ইউটিউব থেকে আয় করার সেরা মাধ্যম ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম বা ওয়াইপিপি। এতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউটিউবের ‘পার্টনার’ হবেন। ওয়াইপিপি ছাড়া সরাসরি ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা উপার্জনের উপায় নেই।
পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে চাইলে ন্যূনতম চারটি যোগ্যতা থাকতে হবে। আপনাকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে, চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ন্যূনতম এক হাজার হতে হবে, আবেদনের আগের এক বছরে ন্যূনতম ৪ হাজার ঘণ্টা ওয়াচটাইম থাকতে হবে এবং একটি অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট থাকা চাই। একটু খোলাসা করে বলি। আপনার চ্যানেলে দর্শক কতটুকু সময় ভিডিও দেখেছে, সেই হিসাবকে বলে ওয়াচ টাইম। অন্যদিকে, গুগল থেকে আয় করার প্রথম ধাপ বলা চলে অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট খোলাকে। ইউটিউব থেকে শুরু করে গুগলের সব ধরনের পরিষেবার মাধ্যমে আপনি যে পরিমাণ ডলার আয় করবেন, সেটি আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে। তবে সেই ডলার তুলতে হলে আপনার অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ১০০ ডলার জমা পড়া চাই।
আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি ওয়াইপিপির শর্তগুলো পূরণ না করা পর্যন্ত ‘নোটিফাই মি হোয়েন আই অ্যাম এলিজিবল’ বাটন দেখতে পাবেন। শর্তগুলো পূরণের পর সেখানে দেখতে পাবেন কার্ড (অপশন)—‘রিভিউ পার্টনার প্রোগ্রাম টার্মস’। এর পাশে ‘স্টার্ট’ বাটনে ক্লিক করলেই দেখানো হবে নীতিমালা। তাতে সম্মতি দিলে কার্ডে দেখবেন ‘ডান’ লেখা। ক্লিক করলে আসবে ‘সাইন আপ ফর গুগল অ্যাডসেন্স’ নামে আরেকটি কার্ড। ক্লিক করুন সেই বাটনে।
গুগল অ্যাডসেন্স খুলতে যা লাগবে: একটি গুগল অ্যাকাউন্ট; আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্ত ফোন নম্বর ও ঠিকানা; সাইটের সঙ্গে অ্যাডসেন্স যুক্তকরণ।
অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট খোলার পর মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করে একটু অপেক্ষায় থাকুন। সাধারণত এক মাসের মধ্যেই রিভিউ হয়ে যায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে সময় আরেকটু বেশি লাগতে পারে।
অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনার দেওয়া ঠিকানা গুগল পরীক্ষা করে দেখবে। আপনার অ্যাকাউন্টে ১০ ডলার জমা পড়লে ঠিকানামতো পাঠাবে একটি পিন নম্বর। সেই পিনের সাহায্যে নিজের ঠিকানা নিশ্চিত করতে হবে আপনাকে। এ জন্য সাকল্যে সময় পাবেন ৪ মাস। অন্যথায় আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টটি বাতিল হয়ে যাবে।
খেয়াল রাখুন, আপনার যদি আগে থেকেই অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট খোলা থাকে, তাহলে ইউটিউবের জন্য নতুন করে খোলার দরকার নেই; আগেরটিতেই কাজ চলবে। অন্যদিকে, আগে অ্যাকাউন্ট থাকা সত্ত্বেও নতুন করে খোলা হলে আপনার আগের অ্যাকাউন্ট কিংবা নতুন অ্যাকাউন্ট—যেকোনো একটি অকার্যকর হয়ে যাবে। কেননা, এক ব্যক্তির নামে মাত্র একটি অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টই কার্যকর থাকে।
আয়ের উৎস
ইউটিউবের পার্টনার প্রোগ্রামের প্রক্রিয়াটি পুরোটাই মূলত বিজ্ঞাপনভিত্তিক। এই প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন যে বিশাল পরিমাণ বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়, সেই আয় থেকেই একটি অংশ পাবেন আপনি। কেননা আপনার মনিটাইজ করা ভিডিওগুলো সেই সব বিজ্ঞাপন প্রচারেরই মাধ্যম। তবে ইউটিউব আপনাকে কত টাকা কেন দেবে, সেটা বোঝার জন্য সিপিএম ও আরপিএম সম্পর্কেও জানা থাকা দরকার।
সিপিএম বা ‘কস্ট পার মাইল’ আসলে ‘কস্ট পার থাউজেন্ড’ নামে বেশি পরিচিত। আপনার ভিডিওগুলোতে কোনো বিজ্ঞাপন প্রতি এক হাজারবার দেখালে বিজ্ঞাপনদাতা ইউটিউবকে কত টাকা দেবে, এটি তার হিসাব। সব ইউটিউবারের সিপিএম সমান হয় না। এটি ভৌগোলিক অবস্থান, সময়, চ্যানেলের ধরন ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে হেরফের হয়ে থাকে।
আরপিএম বা ‘রেভিনিউ পার মাইল’ হলো আপনার ভিডিওতে প্রতি এক হাজার বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য ইউটিউবের কাছ থেকে আপনি কত টাকা পাবেন, সেই হিসাব। সাধারণত বিজ্ঞাপনদাতার কাছ থেকে পাওয়া টাকা থেকে ৪৫ শতাংশ কেটে রাখবে ইউটিউব; বাকি টাকা জমা দেবে আপনার অ্যাকাউন্টে। তবে হিসাবটা সব সময় এত সরল না-ও হতে পারে!
শুধুই বিজ্ঞাপনের ভাগ থেকে পাওয়া টাকার ওপর নির্ভর না করে, আপনার ইউটিউব চ্যানেলকে উপার্জনের আরও বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নিজস্ব পণ্য বিক্রির মাধ্যম করে তুলতে পারেন একে। এ জন্য চ্যানেলটির জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে।
স্পন্সরশিপ ও অ্যাফিলিয়েটেড মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেও ইউটিউব চ্যানেল থেকে করতে পারেন আয়।
রাখুন খেয়াল
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়। নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে। তাই সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে গিয়ে নিজেকে হাস্যকর করে তুলবেন না। এ ছাড়া ইউটিউবের কিছু বিধিবিধানও মানতে হবে:
কনটেন্টে কোনো ধরনের অশ্লীল বা বাজে ভাষা ব্যবহার করবেন না।
কোনো ধরনের হিংস্রতা বা ধ্বংসাত্মক জিনিস দেখাবেন না।
বাড়াবাড়ি রকমের যৌনতা দেখানো বারণ।
বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর কোনো কিছু দেখানোর চেষ্টা করবেন না।
কারও প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়াবেন না।
কনটেন্টে তামাক, মাদক কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র-সম্পর্কিত কোনো কিছু রাখবেন না।
স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে চলুন।
আপনার ইউটিউবযাত্রা অর্থময় হোক—আক্ষরিক ও রূপক—দুই অর্থেই।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট