সাক্ষাৎকার I যা শিখেছি সব ভুলে যেতে চাই —ফুয়াদ আল মুক্তাদির
তুমুল জনপ্রিয় সুরকার ও মিউজিক কম্পোজার। ‘মায়া’, ‘বন্য’র মতো অ্যালবামের স্রষ্টা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। সম্প্রতি ঘুরে গেছেন দেশে…
ক্যানভাস: এবার দেশে আসার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
ফুয়াদ আল মুক্তাদির: এবার ঢাকা এসে শো আর রেকর্ডিং প্রজেক্টেই বেশির ভাগ সময় কাটাতে হয়েছে আমাকে। যদিও এ বেশ ক্লান্তিকর অভিজ্ঞতা, তবু তা আমার জন্য বড় একটা থেরাপিউটিক বেনিফিট। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে; বিশাল অডিয়েন্সের সামনে পারফর্ম করতে পেরেছি। সব মিলিয়ে দারুণ লেগেছে। এবার আমি আমার ব্যান্ড ‘এফএনএফ’-এর সঙ্গে পাঁচটা শোতে পারফর্ম করেছি। তা ছাড়া একটা টেলকোর জন্য মিউজিক ভিডিওর শুটেও অংশ নিয়েছি।
ক্যানভাস: প্রবাসে আপনার জীবন কেমন কাটছে?
ফুয়াদ: গত সাত বছর আমি ‘অ্যাম্বুলেটরি সার্জিক্যাল প্যাভিলিয়ন অব নিউ জার্সি’ নামের একটা সার্জিক্যাল ফ্যাসিলিটি পরিচালনা করেছি। ১৭ হাজার বর্গফুটের এই সার্জিক্যাল ফ্যাসিলিটি আসলে আমার ভাইয়ের চালু করা আমাদের ফ্যামিলি হেলথকেয়ার বিজনেসের অংশ। মাস কয়েক আগে আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর দিয়ে আমি লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে এসেছি। এখানে ‘ব্ল্যাকবক্স স্টুডিও এলএ’ নামে একটা রেকর্ডিং স্টুডিও চালু করেছি। তাই এখন বোধ হয় বলতে পারেন, আমি হলিউডের একটা রেকর্ডিং স্টুডিওর কো-ওনার; হা হা হা…!
ক্যানভাস: আপনার ডেইলি রুটিন সম্পর্কে জানতে চাই।
ফুয়াদ: আমি সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। এরপর সাধারণত আমার মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসি। তারপর কফি খেয়ে দিনের কার্যঘণ্টা শুরু হয়। এ মুহূর্তে আমার স্টুডিওটার নির্মাণকাজ চলছে। তাই বাসার একটা ছোট্ট কোনায় নিজের কাজকারবার চালিয়ে নিচ্ছি। স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানোটাই আমার কাছে মুখ্য। এটাই আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি।
ক্যানভাস: কী পরতে ভালো লাগে? কী খেতে ভালোবাসেন?
ফুয়াদ: আমার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রিয় পোশাক নেই। যা শরীরে মানায়, যে পোশাকে আমাকে দেখতে ভালো লাগে, সেটাই পছন্দ। অন্যদিকে, ভাত, ভর্তা, শুঁটকি…এসব খেতে বেশ ভালো লাগে। কিন্তু এই খাবারগুলো আমার জন্য বেশ বিরলই।
ক্যানভাস: নতুন কোনো অ্যালবামের কাজ করছেন?
ফুয়াদ: গত ২২ বছরে যা কিছু শিখেছি, সেগুলো ভুলে যাওয়ার ওপরই এই মুহূর্তে আমার মনোযোগ। পুরোনো অভ্যাসগুলো থেকে বের হয়ে নিজের জন্য নতুন অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তাতে যদি সফল হই, তারপরে অ্যালবাম নিয়ে ভাবব। কিন্তু এখন আমি নিজেকে পুনরাবিষ্কার করতেই মগ্ন।
ক্যানভাস: ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে আপনাকে। সেই লড়াই কেমন ছিল?
ফুয়াদ: সত্যি কথা বলতে, আমার প্রাইমারি ডাক্তার যখন বুঝতে পারলেন, আমাকে ক্যানসারের টেস্ট করাতে হবে, তখন তিনি অ্যান্টিঅ্যাংজাইটি/অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস (ওষুধ) দিয়েছিলেন। আমার ধারণা, সেটি আমাকে আবেগের জায়গায় যথেষ্ট হালকা করে দিয়েছিল। তবে ঝড় যা যাওয়ার, পরিবারের ওপর দিয়ে গেছে। সবাই আমার পাশে এমনভাবে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করেছেন, তাতে প্রতিটি পদক্ষেপেই ভীষণ আত্মবিশ্বাস অনুভব করেছি। আমি নিশ্চিত, এ ক্ষেত্রে নিজের চেয়ে আমার পরিবারের ট্রমা অনেক গভীর।
ক্যানভাস: বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক—এমন কোনো শিল্পী আছেন, যার বা যাদের সঙ্গে আপনার কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও এখনো করতে পারেননি?
ফুয়াদ: এমন অনেক ইন্টারন্যাশনাল আর্টিস্টই রয়েছেন, যাদের সঙ্গে কাজ করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। লস অ্যাঞ্জেলেসে একটা স্টুডিও থাকা সেই সুযোগ নিশ্চিতভাবেই তৈরি করে দেয়। তবে আগেই যেমনটা বলেছি, নিজেকে একজন আর্টিস্ট হিসেবে খুঁজে পাওয়াই এখন আমার প্রথম কাজ। আগে যা করেছি, এখন তা করব না। কেননা, বাংলাদেশে একটা ফর্মুলায় পাওয়া সাফল্যকে আমি আর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। এই মুহূর্তে আমি আমার রাস্তা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। সঠিক সময় যখন আসবে, এই যুক্তরাষ্ট্রে আমি অনেক আর্টিস্টকে নিয়েই কাজ করব।
ক্যানভাস: আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা কেমন বলে মনে করেন?
ফুয়াদ: ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশি মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে আমার কাছে বেশ এক্সাইটিং বলেই মনে হয়। সেখানে অনেকগুলো প্যারালাল মুভমেন্ট চলছে। তাপস ও গানবাংলা তো তাদের বৈপ্লবিক বর্ণচ্ছটা ছড়াচ্ছে। রয়েছে ইন্ডি রক সিন। আমরা অবশেষে কোক স্টুডিও-ও পেয়েছি। বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কিছুই ঘটছে। আমি খুবই এক্সাইটেড। আমার চোখে সমস্যা শুধু একটাই—রয়্যালটি কালেকশন ও ডিস্ট্রিবিউশন। সেই অবকাঠামো যখন দাঁড়িয়ে যাবে, আশা করছি আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির মুশকিল আসান হবে।
ক্যানভাস: এবারের ঈদ ঘিরে আপনার পরিকল্পনা কী?
ফুয়াদ: আমার কাছে ঈদ মানেই পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ঈদের দিনটা পরিবারের অন্যদের কাছ থেকে দূরে কাটাতে হবে। কেননা, তারা থাকে ইস্ট কোস্টে, আর আমরা লস অ্যাঞ্জেলেসে। তবে ঈদের দিনটা যতটা সম্ভব দারুণভাবে কাটানোর চেষ্টা তো অবশ্যই করব।
ক্যানভাস: জীবনকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ফুয়াদ: আমার কাছে জীবনের অর্থ একেবারেই পরিষ্কার। জীবন জীবনের মতো বয়ে চলে। আমরা নানা কাজে ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাই বলে প্রায় সময়ই ছোট ছোট মুহূর্ত উপভোগ করতে পারি না। আমি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নিজের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে চাই। প্রতিদিনই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকি।
রুদ্র আরিফ
ছবি: মায়া মাহজাবিনের সৌজন্যে