এই শহর এই সময় I শিল্পরসে টইটম্বুর
গ্রীষ্মের দাবদাহ আর রাজধানীজুড়ে শিল্পের আসর। গ্যালারিগুলোতে পুরো বাংলার রূপ যেন একযোগে ফুটে উঠেছিল রং ও পারফর্মের মিশেলে। ছিল এক্সিবিশনের হুল্লোড়। চিত্রকর্মগুলো শহরবাসীর মনের তৃষ্ণা মিটিয়েছে এ মাসে। সেখানে উঠে এসেছে বাংলার সমতল ও পাহাড়ের দৃশ্যপট। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের আঁকা চিত্র নিয়ে ঢাকার প্রগতি সরণির অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের আয়োজনে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব গ্যালারিতে মে মাসে শুরু হয়েছে ‘পাহাড়ের চিত্রবুনন’ (Weaving Art of The Hills) নামের আর্ট এক্সিবিশন। সেখানে ৪৪ জন চিত্রশিল্পীর ৬৫টি শিল্পকর্ম রয়েছে। ওই সব ছবিতে কাগজে জলরঙের পাশাপাশি ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকের কাজ রয়েছে। চিত্রকর্মে রাঙামাটির মনোমুগ্ধকর নিসর্গ, জীবনযাপন ও পরিবেশকে ফুটিয়ে তুলেছেন আর্টিস্টরা।
মূলত এথনিক আর্টিস্ট ফোরামের উদ্যোগে রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত একটি আর্টক্যাম্পে করা চিত্রকলা দিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ওই ক্যাম্প ২০১৯ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফোরামটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও শিল্পী কনক চাঁপা চাকমা বলেন, ‘এথনিক আর্টিস্ট ফোরামের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিল্পীদের প্রতিভাকে বিকশিত করা। অনেক প্রতিভাবান শিল্পী সঠিক পর্যবেক্ষণ আর অনুপ্রেরণার অভাবে পিছিয়ে পড়ছেন, এমনকি হারিয়েও যাচ্ছেন। শিল্পচর্চায় তাদের সহযোগিতা করাই আমাদের কাজ।’
২১ মে শনিবার প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, প্রাচ্যকলার বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক মুস্তাফা মনোয়ার, তুর্কি রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা অসমান তুরান ও বার্জার বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপালি চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের চেয়ারপারসন নীলু রওশন মুর্শেদ। প্রদর্শনী চলবে ৪ জুন পর্যন্ত।
শিল্পকর্ম উপভোগের পাশাপাশি আলোকচিত্রীদের কর্মযজ্ঞেও ঢুঁ মেরেছিলেন শহরবাসী। দুনিয়াদারি আর্কাইভের আয়োজনে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে হয়ে গেছে বশীর আহমেদ সুজনের ‘দাঁড়াও, ঢাকা’ শীর্ষক একক প্যানোরমিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। ১৩ মে শুক্রবার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুনসহ অনেকে। সেদিন প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত আলোকচিত্রগুলো নিয়ে একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচিত হয়েছে। আমিরুল রাজিব ও নাঈম ঊল হাসান ছিলেন ‘দাঁড়াও, ঢাকা’ প্রদর্শনীর কিউরেটর এবং বইয়ের সম্পাদক।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘প্রদর্শনীর ধরন ও আলোকচিত্রের বইয়ের গঠনে অভিনবত্ব নিয়ে এসেছে “দাঁড়াও, ঢাকা”। বাংলাদেশের আলোকচিত্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্যানোরমিক আলোকচিত্রের প্রদর্শনী ও বই এটি।’
গ্যালারিতে আলোকচিত্রের প্রদর্শনেও রাখা হয় নতুনত্ব। দেয়ালে ছবি ঝোলানোর প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে বিশেষ কাঠামোতে মানুষসমান উঁচু প্রিন্টে এমনভাবে প্রদর্শনীটি সাজানো হয়েছিল, দেখে মনে হচ্ছিল শহরের দালানকোঠা গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আলোকচিত্রগুলো ঢাকার রাস্তায় ২০০৬ থেকে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে তোলা বলে জানা গেছে। করোনাকালীন তোলা কিছু ছবিও ছিল। প্রদর্শনীটি ২১ মে পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।
স্থির চিত্রকলার পাশাপাশি গতিময় কলাও ছিল মে-এর মঞ্চে। ‘হ্যাপি ডেজ’ মঞ্চনাটকে একক অভিনয় করেন জ্যোতি সিনহা। শুভাশিস সিনহার নির্দেশনায়। নাটকটির ২৫তম প্রদর্শনী হয়ে গেছে ২১ মে শনিবার, সন্ধ্যা ৭টায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। ২২ মে একই হলে একই সময়ে ছিল আরও একটি শো। ফরাসি দূতাবাস প্রযোজিত ওই নাটক পরিবেশন করছে মণিপুরী থিয়েটার ও হৃৎমঞ্চ। অ্যাবসার্ড নাটকের জন্য বিখ্যাত ‘ওয়েটিং ফর গডো’ খ্যাত নোবেলজয়ী নাট্যকার স্যামুয়েল বেকেটের লেখা ‘হ্যাপি ডেজ’ অবলম্বনে নাটকটি নির্মিত। তা বাংলায় ভাষান্তর করেছেন কবীর চৌধুরী।
নাটকটিতে উইনি নামের একজন নারীর জীবনের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের মধ্য দিয়ে মানুষের এক অভিনব মানসপটকে দেখানো হয়েছে। পুরো নাটকে উইনি তার স্বামী উইলির সঙ্গে প্রলাপ বকে যায়।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত