যাপনচিত্র I বহু স্তরের বহু বিন্যাস
মাল্টিটাস্কার মারিয়া মৃত্তিক। একাধারে বিউটিশিয়ান ও ডেন্টিস্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। নিজেকে এককথায় নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ব্যক্তিজীবনে তার অবসর কম। তবে যদি কখনো ফুরসত মেলে, কেমন কাটে দিন?
বহুমাত্রিক সকাল
মারিয়া মৃত্তিকের একেকটা সকালের শুরু হয় একেকভাবে। হাসপাতালে ডিউটি থাকলে সেদিন সকাল সকাল বিছানা ছাড়তে হয়। মাঝেমধ্যে নাশতা না করেই হাসপাতালে দেন ভোঁ-দৌড়। সেখান থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিজের মতো সময় কাটানোর শুরু। যেদিন হাসপাতালে ডিউটি থাকে না, সেদিন মারিয়ার সকাল শুরু হয় ১১টায়। এরপর ব্রেকফাস্ট। পাতে বেশ পরিমিতির পরিচয় দেন স্বাস্থ্যসচেতন এই ব্যক্তিত্ব। তাই দিনের শুরুর খাবারে ওটসের সঙ্গে রাখেন ইয়োগার্ট। তেল ও ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলেন। মাঝেমধ্যে খান ব্রাউন ব্রেড ও এগস। নিয়ম করে প্রতিদিন একটা করে ডিম খান।
মারিয়ার সকালের বেশভূষায়ও আছে বৈচিত্র্য। হাসপাতালের ডিউটি থাকলে কটনের সিম্পল একটি ড্রেস পরেই বেরিয়ে পড়েন। কাজের বেলায় আরামদায়ক পোশাককেই প্রাধান্য দেন, যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেন। মাঝেমধ্যে জিনসের সঙ্গে পরেন টপস। হিজাবও পরেন কটনের। হিজাবের সঙ্গে এমন কোনো ড্রেস পরেন, যাতে সাফোকেটেড ফিল না হয়। মানে কাজ যেন খুব আরামেই করা যায়, সেটার ওপর ভিত্তি করেই সকালের পোশাক পরেন তিনি।
পারিবারিক দুপুর
ছুটির দিনের দুপুরটা পরিবারকেই দেন মারিয়া। চেষ্টা করেন নিজের মেয়েকে সময় দিতে। কখনো কখনো বনে যান রাঁধুনি। ইউটিউব দেখে দেখে ট্রাই করেন কিছু রেসিপি। চিকেন স্যালাড কিংবা টেরিয়াকি চিকেনের মতো পদগুলো তৈরি করে খাওয়াতে পছন্দ করেন পরিবারের লোকদের। দুপুরে বাড়িতে খুব রিল্যাক্স কাপড় পরেন মারিয়া। সেই উদ্দেশে বাড়িতে নাইট স্যুট অথবা ঘরে যে স্যুটগুলো আছে, সেগুলোই পরেন তিনি।
বৈকালীন বিনোদন
দিনের মধ্যে বিকেলটাই বেশি পছন্দ মারিয়া মৃত্তিকের। ছুটির দিনে এ সময়টা ছাদে গিয়ে গান শুনে কাটাতে ভালো লাগে তার। অথবা ছাদের জিমটায় সামান্য ওয়ার্ক আউট। কখনো আবার বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা। এভাবেই বিকেল কাটে তার।
সন্ধ্যার গোছগাছ
সন্ধ্যায় ঘর গোছাতে লেগে পড়েন মারিয়া। সম্প্রতি ইন্টেরিয়রের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে তার। এই শখটা ডেভেলপ করেছে নিজের অজান্তেই। শোপিসগুলো একটু এদিক-সেদিক করা, ঘরের চাদর, কার্পেট কিংবা সোফার কুশন বদলে ফেলা, সেগুলোতে একটু ডিফারেন্ট কালার অ্যাপ্লাই করা—এসব করেই কাটে ছুটির সন্ধ্যা। তা ছাড়া সন্ধ্যায় একটু মিষ্টিজাতীয় খাবার তৈরি করেন। কখনো কখনো অন্য কোনো পদ। বেশির ভাগ সময়ে মাংসের পিঠা, নারকেল পিঠা কিংবা গাজরের পায়েস—এগুলোই তৈরি হয় তার হাতে।
রাতের ফিরিস্তি
সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত মুখ মারিয়া মৃত্তিক। বেশ ফ্যান-ফলোয়ার তার। তাই ইনবক্স ও নোটিফিকেশন থাকে টইটুম্বুর। ঘুমাতে যাওয়ার আগে সেগুলো একবার চেক করে নেন। প্রয়োজনীয়গুলোতে সাড়াও দেন। তা ছাড়া পরবর্তী দিনের কাজের তালিকাও করে নেন এ সময়ে। অবশ্য সব সময়েই যে রাতে ঘুমানোর আগে এই রুটিনে চলেন, তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো দেখেন মুভি। তা ছাড়া নতুন কোনো ভ্লগ এলে তাতেও চোখ বুলিয়ে নেন। রাতের মেনুতে হালকা খাবার রাখতেই পছন্দ করেন স্বাস্থ্যসচেতন মারিয়া। অল্প ব্রাউন রাইস, স্যালাড ও ফিশ, ব্যস। ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু গ্রিন টি। পরবর্তী দিন সকাল ৮টার দিকে কাজ থাকলে রাত ১০টাতেই বিছানায় যান মারিয়া। যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজ করেন, তাদের রাত জাগার একটা অভ্যাস থাকলেও মারিয়া তা এড়িয়ে যান। তবু প্রায় রাতেই ইনবক্স ও নোটিফিকেশনের রিপ্লাই দিতে দিতে ১২টা-১টা বেজে যায় ঘুমাতে।
মিটিং বা পার্টির সাজে
কাজের খাতিরে মিটিং বা পার্টি লেগেই থাকে মারিয়ার যাপিত জীবনে। করপোরেট মিটিং, লাইভসেশন কিংবা কোনো কোম্পানির সঙ্গে তার কোলাবোরেশন মিটিং—এসব জায়গায় খুবই সাধারণ পোশাকে উপস্থিত থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে ব্লেজার স্যুট তার সবচেয়ে পছন্দ। নানা রঙের ব্লেজারের সমারোহ রয়েছে তার। মূলত প্রোগ্রামের ধরন বুঝে পোশাক নির্বাচন করেন। ওয়েস্টার্ন থিমের পার্টিগুলোতে সাধারণত ওয়েস্টার্ন টাইপের গাউন, ফ্লোরাল গাউন কিংবা এ ধরনের লাইট কালারের গাউন পরে অ্যাটেন্ড করেন। ব্রাইডাল প্রোগ্রামে যান শারারা ঘারারা পরে। শাড়ি খুব একটা পরা হয় না। মারিয়ার ফ্যান-ফলোয়াররা তাকে শাড়িতে হয়তো খুবই কম দেখেছেন। মূলত হিজাব পরার জন্যই শাড়ি পরা হয় না। তার মতে, হিজাবের সঙ্গে শাড়িতে তাকে খুব একটা মানায় না। মেকআপের ক্ষেত্রে নিজের ও তার ক্লায়েন্টদের জন্য স্যাটেল মেকআপটাই পছন্দ করেন। মেকআপ যেন ওভার ডু মনে না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল থাকে তার। মারিয়া বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় গ্লামারাসের মধ্যেও যদি একটা সফট অ্যান্ড স্যাটেল লুক থাকে, তাহলে আমাদের টোটালি যে পোর্ট্রেট হয়, ছবিগুলো অনেক বেশি সুন্দর আসে।’
গোপন শখ
নিজের কাজগুলো ঠিকঠাকমতো করাই মারিয়া মৃত্তিকের শখ। নিজের পড়াশোনার সঙ্গে তার কাজ সম্পৃক্ত নয়। তবে ছোটবেলা থেকেই মিডিয়া কিংবা মিডিয়া-সংশ্লিষ্ট কাজে ঝোঁক ছিল মারিয়ার। যখনই বুঝতে পেরেছিলেন ডেন্টিস্ট হিসেবে তার ক্যারিয়ার হতে যাচ্ছে, তখনই চিন্তা শুরু করেছিলেন, দাঁতের চিকিৎসার বাইরে আর কী করা যায়। তখনই মেকআপ ও পোশাক নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। এখন অবসরে সেগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। হয়তো ড্রেসের নতুন কোনো স্কেচ করেন কিংবা মেকআপে ক্রিয়েট করেন নতুন কোনো আইডিয়া। এ ছাড়া বেশ গোপন একটি শখ রয়েছে মারিয়া মৃত্তিকের; তা হলো নৃত্য। বাসায় একা থাকলে নাচের প্র্যাকটিস করেন। বিষয়টা করেন একেবারেই ক্লোজড ডোর। কাউকে না দেখালেও নাচের চর্চা অব্যাহত রাখেন। একা একা রিহার্স করেন। নাচের নতুন কোনো ভিডিও পছন্দ হলে নিজে নিজে সেটি প্র্যাকটিস করেন। নাচের শখের বিষয়ে মারিয়া বলেন, ‘যদিও আমার অ্যাটায়ার অ্যান্ড এভরিথিং—সবকিছু যায় না এটার সাথে, কিন্তু মানুষের শখের কোনো লিমিটেশন নেই, তাই আমার শখ আমি লালন করি। এটা আমার গোপন শখ।’
জীবনদর্শন
‘লাইফ ইজ অল আবাউট দ্য মোমেন্ট, ইউ এক্সপ্লোর। আমার কাছে মোমেন্টই অনেক ইম্পর্টেন্ট। প্রতিটা মোমেন্টকেই এনজয় করতে চাই, এক্সপ্লোর করতে চাই, অ্যান্ড সেটাকে ফ্রুটফুল করতে চাই। এমন কোনো জিনিস করতে চাই, যেটা যখন আমি থাকব না, আমার অডিয়েন্সরা মনে রাখবে। আমার জন্য না হোক, আমার কাজের জন্য মানুষজন আমাকে মনে রাখুক—এভাবেই আমি আমার জীবনকে ভাবি। এ জন্যই মাল্টিপল ওয়ার্ক করি। কখনো একটা কাজে আটকে থাকি না। কখনো ডেন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছি, কখনো মেকআপ নিয়ে কাজ করছি, কখনো ইভেন্ট নিয়ে…কোনো না কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি। আমার তাই মনে হয়, লাইফ ইজ অল আবাউট এক্সপ্লোর’, বলেন মারিয়া মৃত্তিক।
শিবলী আহমেদ
ছবি: সৈকত ভদ্র