ত্বকতত্ত্ব I গুয়াশা ওয়াশিং
ত্বকের যত্ন নেওয়ার জাদুযন্ত্র। অপরিচ্ছন্নতায় কার্যকারিতা কমে যেতে পারে কিন্তু
সেমি প্রেশাস স্টোনে তৈরি ফ্ল্যাট ফেশিয়াল মাসাজ টুল গুয়াশা। ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ হিলিং প্র্যাকটিস থেকে অনুপ্রাণিত হলেও মেইন স্ট্রিম বিউটি রুটিনে ইতিমধ্যেই পোক্ত অবস্থান এর। ফলে সৌন্দর্যসচেতনদের সংগ্রহে গুয়াশার উপস্থিতি এখন চোখে পড়ার মতো। এর সঠিক ব্যবহারবিধি নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। কিন্তু উদ্বেগের ব্যাপার হলো, এর সঠিক সংরক্ষণের বিষয়টা বরাবরই অবহেলিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেকআপ ব্রাশের মতোই গুয়াশার মতো স্কিনকেয়ার টুলে অনায়াসে বাসা বাঁধতে পারে ব্যাকটেরিয়া। যার ব্যবহারে ত্বকে সংক্রমণ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। ফেস টাওয়েল পরিষ্কার না করে পুনরায় ব্যবহারে ত্বকে যেমন ক্ষতি হতে পারে, অপরিষ্কার গুয়াশা ব্যবহারের ফলাফলও ঠিক তেমন। খালি চোখে মনে হতেই পারে, গুয়াশায় কোনো ময়লা জমেনি। কিন্তু এ ধরনের টুল সাধারণত বাথরুমে অন্য সৌন্দর্য রসদের সঙ্গেই রেখে দেওয়া হয়। ফলাফল—ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। তাই গুয়াশা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। সহজ কিছু উপায়েই এটা সম্ভব।
হাত ঈষদুষ্ণ পানিতে ভিজিয়ে সামান্য ক্লিনজিং সোপ নিয়ে ফেনা তুলে নিতে হবে। তারপর গুয়াশাতে সেই ফেনা মেখে রেখে দিতে হবে অন্তত ত্রিশ সেকেন্ড। তারপর উষ্ণ পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে মুছতে হবে নরম কাপড় দিয়ে। মাইক্রোফাইবার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো। তবে এভাবে ধোয়ার সময় সাবধান। পলিশড স্টোনে তৈরি হয় বলে সহজেই হাত থেকে পিছলে যেতে পারে গুয়াশা। বেকায়দায় পড়লে ভেঙেও যেতে পারে।
সময় বেশি থাকলে এ পদ্ধতিতে গুয়াশা পরিষ্কার করে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো। এতে হাত থেকে পিছলে পড়ার আশঙ্কাও এড়ানো যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে একটা বাটিতে সামান্য উষ্ণ পানি নিতে তাতে পরিমাণমতো হ্যান্ড সোপ অথবা ফেশিয়াল ক্লিনজার দিয়ে নিতে হবে। ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তাতে গুয়াশা ডুবিয়ে রাখতে হবে কিছু সময়ের জন্য। তারপর তুলে ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে নিতে হবে। তারপর ডিসইনফেক্ট স্প্রে দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এতে গুয়াশায় জমে থাকা সৌন্দর্যপণ্যের অবশিষ্টাংশও দূর হয়ে যাবে। পরে ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে বিউটি বক্সে পুরে রাখতে হবে।
গুয়াশাতে কার্ভের পরিমাণ বেশি থাকলে তা পরিষ্কারের জন্য ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে টুলের আনাচে–কানাচে জমে থাকা ময়লা দূর করা সহজ হবে। সাধারণত জ লাইনে ব্যবহার উপযোগী ক্লেফট শেপের গুয়াশার জন্য ব্রাশ ব্যবহার করতে হতে পারে। এ ছাড়া কপাল, চিবুক আর চোয়ালে ব্যবহার উপযোগী টিথ এজের গুয়াশা পরিষ্কার করতেও ব্রাশ দারুণ কার্যকর।
গুয়াশা কোন ধরনের ম্যাটেরিয়ালে তৈরি, তার ওপরও নির্ভর করবে এটি পরিষ্কারের প্রক্রিয়া। সিলভার আর কপারের মতো ধাতু সাধারণত কম ছিদ্রযুক্ত হয়ে থাকে। তাই এগুলো ঘন ঘন পরিষ্কার না করলেও তেমন ক্ষতি নেই। কিন্তু গুয়াশা তৈরিতে এ ধরনের ধাতুর ব্যবহার একদমই প্রচলিত নয়; বরং গুয়াশা তৈরিতে সাধারণত ব্যবহৃত হয় জেড আর রোজ কোয়ার্টজের মতো সেমি প্রেশাস স্টোন। এগুলো নন–পোরাস অর্থাৎ ছিদ্রহীন হয়ে থাকে। ফলে পরিষ্কার করাটাও তুলনামূলক ঝক্কিহীন। এ ছাড়া মাসাজের সময় ত্বকে ব্যবহৃত তেল বা সেরাম একদমই শুষে নেওয়ার সুযোগ নেই এই ম্যাটেরিয়ালে তৈরি গুয়াশাগুলোর। তাই এ সৌন্দর্যপণ্যগুলোর পুরো উপকারিতা পাবে ত্বক। তবে কিছু কাঠের তৈরি গুয়াশা রয়েছে বাজারে। ত্বকচর্চায় কার্যকর হলেও এগুলো পরিষ্কার করা বেশ কঠিন। কারণ, কাঠ সাধারণত অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত হয়ে থাকে। কাঠের গুয়াশা যদি ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে তা ঘন ঘন পরিষ্কার করতে হবে। তারপর মাখিয়ে রাখতে হবে তেল। নতুবা ঘন ঘন পানির সংস্পর্শে এলে কাঠ ফেটে যেতে পারে।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্রতিবার ব্যবহারের পর গুয়াশা টুল ধুয়ে নেওয়া যায়। কারণ, যত সময় ধরে এতে তেল অথবা অন্যান্য প্রডাক্ট লেগে থাকবে, এর ওপর আস্তর পড়ে যাওয়ার শঙ্কা বাড়বে। আর যদি গুয়াশা একবার তা শুষে নেয়, পরে তা ত্বকের সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠবে।
যাদের ত্বক ব্রণ বা অ্যাকনে আক্রান্ত, তারা গুয়াশা পরিষ্কার করে নেওয়ার পর অ্যালকোহলযুক্ত ডিসইনফেকটেন্ট স্প্রে করে নিতে পারেন। এতে অ্যাকনে সৃষ্টিকারী জীবাণু যদি টুলে রয়েও যায়, তাধ্বংসহয়েযাবে।তবেস্প্রেকরারপরতাভালোভাবেমুছেনিতেহবে।
পরিষ্কারের পাশাপাশি রিচার্জও করে নেওয়া যায় গুয়াশা। মুন বাথের মাধ্যমে। এ জন্য লাগবে এক কাপ হিমালয়ান লবণ। এই লবণ একটা বাটিতে নিয়ে এর ওপর গুয়াশা রেখে দিতে হবে। অথবা লবণের ভেতরও পুরে নেওয়া যায় টুলটি। তারপর বাটিটা চাঁদের আলো পায় এমন জায়গায় রেখে দিতে হবে রাতভর। পরদিন সকালের সূর্যের আলোয় কয়েক ঘণ্টা রেখে দিলেও ক্ষতি নেই। তবে বেশি বেলা পর্যন্ত রেখে দিলে সরাসরি সূর্যালোকে গুয়াশার স্টোনের ক্ষতি হতে পারে।
জাহেরা শিরীন
ছবি: ইন্টারনেট