নখদর্পণ I বুদবুদরোধী
ছোট ছোট বিন্দুসদৃশ। কিন্তু মসৃণ মেনিকিওরের সৌন্দর্যের বারোটা বাজিয়ে দিতে যথেষ্ট
বিরক্তিকরই বটে। সাধের নেইলপলিশ দিয়ে নখ রাঙানো শেষ, সঙ্গে সঙ্গেই তাতে ভেসে উঠল ছোট ছোট বুদ্্বুদ। পুরাই বাজ কিল! কিন্তু কেন হয় এটা? কোন ভুলে? মূলত নেইলপলিশ শুকানোর সময় পলিশের লেয়ারের মাঝে বাতাস আটকে গেলে এমনটা ঘটে। এ থেকে পরিত্রাণের কৌশল অবশ্য আছে।
অনেক বেশি ঝাঁকানো যাবে না নেইলপলিশের বোতল। এমনকি বারবার নেইলপলিশের ব্রাশ বোতল থেকে বের করা আর ঢোকানোর অভ্যাস থাকলে তা-ও বাদ দিতে হবে। কারণ, এতে করে বোতলের ভেতর আর ব্রাশে বুদবুদ তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়। আর বোতল থেকে ব্রাশ বের করার পর তাতে সামান্য বুদ্বুদ দেখা দিলে তা নিরোধেরও উপায় আছে। নেইলপলিশের বোতল দুই হাতের তালুর মাঝে নিয়ে রোল করে অর্থাৎ ভালো করে ডলে নিতে হবে। এতে বাবল দূর হবে, পলিশটাও সুন্দর করে মিক্স হয়ে যাবে। আর যদি ঝাঁকানো হয়েই যায়, তাহলে পলিশ মাখার আগে বোতলটা আধা ঘণ্টার জন্য রেখে দিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে। এতে বুদ্বুদের সমস্যা এড়ানো যাবে।
খুব ঘন ফর্মুলার নেইলপলিশ কেনা যাবে না। কারণ, ঘন হলেই বুদবুদ তৈরির আশঙ্কা বেড়ে যায়। পাতলা ফর্মুলার নেইলপলিশে বাবল ভেসে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে ঘন পলিশের বোতলে সামান্য থিনার অথবা নেইলপলিশ রিমুভার মিশিয়ে নেওয়া যায়। কয়েক ফোঁটা হলেই চলবে। তবে মনে রাখা চাই, অ্যাসিটোন অথবা রিমুভার পলিশ এবং নখের মধ্যকার বন্ধন দুর্বল করে দেয়। ফলাফল, নেইলপলিশ দ্রুত উঠতে শুরু করে নখ থেকে।
নেইলপলিশের বোতলের মুখ কোনোভাবেই খোলা রাখা যাবে না। যত বেশি সময় খোলা রাখা হবে, বাতাস তত বেশি ঢোকার সুযোগ পাবে। ফলাফল—পলিশ ঘন হতে শুরু করবে, তাতে বাবল ট্র্যাপও হবে বেশি। পরবর্তীকালে সেই নেইলপলিশ নখে মাখলেই তৈরি হবে বুদবুদ।
বেস কোট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে বুদবুদদের সমস্যা এড়ানো সম্ভব বলে ধারণা অনেক নেইল আর্টিস্টের। বেস কোটের মাধ্যমে নখের ওপর একটা সুন্দর ফাউন্ডেশন তৈরি হয়, যা পরবর্তীকালে বাবল রোধে সহায়ক।
নেইলপলিশ মাখার পর তাতে বাবল হবে কি না, তা নির্ধারণের একদম প্রথম ধাপ ব্রাশ পরীক্ষা করে নেওয়া। ব্রাশে বুদ্বুদ দেখা গেলে তখনই যদি তা সরিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে বাবলিংয়ের সমস্যা এড়ানো যাবে। বোতল থেকে বের করার সময় ব্রাশের বুদ্বুদগুলো বোতলের চারপাশে চেপে চেপে সরিয়ে নিলে খুব ভালো হয়। কারণ, ব্রাশে বাবল থাকলে সেটা নখে স্থানান্তরিত হবেই। এ ছাড়া ব্রাশ পুনরায় পলিশে ডুবিয়েও বুদবুদ দূর করা সম্ভব। রি-ডিপের পর পলিশ মেখে নিতে হবে।
নতুন নেইলপলিশ কেনা হয়েছে। পাতলা ফর্মুলার, একদম ব্র্যান্ড নিউ। কিন্তু সেটা মাখার পরও নখে ভেসে উঠছে বাবল? তাহলে সমস্যা প্রয়োগ কৌশলে। খুব বেশি ঘন করে দেওয়া হচ্ছে পলিশ। তাই দুই কোটের মধ্যবর্তী অংশে বাতাস বন্দি হয়ে যাচ্ছে, পরবর্তী সময়ে যা ভেসে উঠছে মেনিকিওরের সারফেসে। তাই পাতলা লেয়ারে নেইলপলিশ মাখতে হবে নখে। এতে পলিশ সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বুদবুদদের সমস্যাও তৈরি হবে না।
নেইলপলিশের বোতলকে বাঁচাতে হবে তাপ আর বাতাস থেকে। এ দুটোই নেইলপলিশের বারোটা বাজিয়ে দিতে যথেষ্ট। তাই এগুলোকে একটি ঠান্ডা, শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। সূর্যালোকের সংস্পর্শেও যেন না আসে। এ ছাড়া নেইলপলিশ মাখার সময়ও যত দ্রুত সম্ভব বোতলের মুখটা বন্ধ করতে ফেলতে হবে। কারণ, বাতাস এবং তাপ—দুটোই নেইলপলিশকে ঘন ও থকথকে করে ফেলে। আর সেই নেইলপলিশ মাখলেই বাবল তৈরি হয়।
ঠান্ডা আর শুষ্ক জায়গায় নেইলপলিশ শুধু সংরক্ষণ করলেই চলবে না, মাখার সময়ও বসতে হবে ঠান্ডা জায়গায়। হাতের কাছে একটা ছোট ফ্যান রাখা যায় পলিশ মাখার পর নখ ঠান্ডা ও শুষ্ক রাখার জন্য। এ ছাড়া ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে বা হাত ধরে রেখে নেইলপলিশ দ্রুত শুকিয়ে নিলে তাতে বাবল হওয়ার আশঙ্কা অনেকখানি কমে যাবে।
প্রথম কোট দেওয়ার পর তা পুরোপুরি শুকিয়ে নিতে হবে। এতে সেকেন্ড কোট মাখার পর বাবল তৈরির আশঙ্কা এড়ানো যাবে। প্রথম কোট দেওয়ার পর শুকিয়ে নেওয়ার মতো অতটুকু সময়ও হাতে না থাকলে এমন পলিশ ব্যবহার করতে হবে, যা কুইক ড্রাই ফর্মুলায় তৈরি। মাখার সময় ছোট ছোট স্ট্রোকের বদলে লম্বা স্ট্রোকে ব্রাশ বুলিয়ে নিলে ভালো। কারণ, কুইক এবং ছোট এ স্ট্রোকগুলো পলিশের ভেতর বাতাস পুরে দেয়, যা পরবর্তীকালে বাবল তৈরি করে।
অর্চনা সাহা
ছবি: ইন্টারনেট