skip to Main Content

ফিচার I ভুল সবই ভুল!

যখন হয়েই গেছে, তা নিয়ে মন খারাপ করে কী লাভ; বরং সৃজনী উপায়ে তা শুধরে নেওয়া যায়। মেকআপ আর্টিস্টদের মন্ত্র মেনে। লিখেছেন সারাহ্ রুশমিতা

মেকআপ প্রডাক্ট কেনার সময় ত্বকরঙের দিকে নজর রাখা জরুরি। কারণ, স্কিন টোনের সঙ্গে মিল রেখে বেছে নিতে হয় প্রসাধনের শেড। তা লিকুইড হোক কিংবা পাউডারি। এখানেই বড় চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত ব্যবহার করা ব্র্যান্ডগুলোর বাইরের নতুন কোনো পণ্য প্রথমবার কেনার সময় শেডের হেরফের বেশি হয়। সোয়াচ স্যাম্পল দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকলেও অনেক সময় দেখা যায়, বাসায় এসে প্রডাক্টটি ঠিক মিলছে না ত্বকের সঙ্গে। আর মেকআপের পণ্যগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ তারতম্য কোনোভাবেই মানিয়ে নেওয়া যায় না।
আবার, কম ব্যবহারের কারণে অনেক সময় দেখা যায়, বেশ খানিকটা মেকআপ অব্যবহৃত রয়ে গেছে। মেয়াদ শেষের দিকে চলে এলেও তখন ডিক্লাটার করতে ইচ্ছা করে না, আবার রেখে দেওয়ারও উপায় থাকে না। এ ক্ষেত্রে রিইউজ বা পুনর্ব্যবহার সবচেয়ে ভালো অপশন।
পরিপূর্ণ মেকআপের জন্য ফাউন্ডেশন অতি প্রয়োজনীয় এক প্রসাধন। ক্রিমি টেক্সচার পণ্যটি কেনার সময় মিলিয়ে নিতে হয় ত্বকরঙের সঙ্গে। নয়তো ফাউন্ডেশনের উপযোগিতা হারায়। শেড মেলানোর ক্ষেত্রে জীবনে দু-একবার ভুল হয়নি এমন মেকআপপ্রেমী খুব কমই মিলবে। তবে এমন হলে কী করা দরকার?
প্রথমেই দেখতে হবে ফাউন্ডেশনের শেডটি ত্বকের শেডের ওপরের শেডে আছে, নাকি নিচের। যদি ওপরের শেড অর্থাৎ লাইটার শেড হয়, তাহলে এটি ব্যবহার করা যায় কনসিলার হিসেবে। আর যদি ফাউন্ডেশনটি স্কিন টোনের থেকে ডার্কার হয়ে থাকে, তাহলে এটি ব্যবহার করা যাবে ক্রিম কনটুর হিসেবে।
চোখের সাজে আইশ্যাডো চাই-ই চাই। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণের আগে পুরো আইশ্যাডো প্যালেট শেষ করা অনেকের জন্য প্রায় অসম্ভব। এতগুলো পছন্দের শেড ফেলে না দিয়ে বরং রিউজের প্রক্রিয়া জানা থাকলে অপচয় কম হবে। বেঁচে যাওয়া প্যালেটে ম্যাট ব্রাউন শেড থাকলে সেটি ব্যবহার করা যাবে ব্রোনজার হিসেবে। মেকআপে গ্লসি লুক পছন্দ হলে প্যালেটের শিমারি শেডগুলো ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। শিমার কিংবা হাইলাইটারের পরিবর্তে। আইশ্যাডো পিগমেন্ট পাউডারি আইলাইনার হিসেবেও ব্যবহার উপযোগী। এ ক্ষেত্রে প্যালেটের কালো অথবা ডার্ক ব্রাউন আইশ্যাডোই বেশি জুতসই। আরও একভাবে ব্যবহার করা সম্ভব এটি। নেইলপলিশ হিসেবে। ট্রান্সপারেন্ট টপ কোটের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করে নেওয়া যাবে নতুন নেইলপলিশ। তারপর বুলিয়ে নিতে হবে নখে। অনেক সময় অসাবধানতায় হাত থেকে পড়ে আইশ্যাডোর কেকটি ভেঙে যায়। তাই বলে বাতিলের খাতায় নাম লেখাতে হবে, এমন কিন্তু নয়। চাইলে ভ্যাসলিনের সঙ্গে মিশিয়ে লিপ টিন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায় গুঁড়িয়ে যাওয়া শ্যাডো। ভ্যাসলিন ও ক্লিয়ার লিপ বামের সঙ্গে আইশ্যাডো বেশ সুন্দর মিশে যায়।
চোখের সাজের আরেক উপকরণ মাশকারা। মোড়ক খোলার পর তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যেই দেখা যায় শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেকটাই রয়ে যায় তখনো। এ ক্ষেত্রে মাশকারা কিছুক্ষণের জন্য উষ্ণ পানির পাত্রে রেখে দিতে হবে। মাশকারাটি পুনর্ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে। আর যদি মাশকারার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে কোনোভাবেই চোখে ব্যবহার করা উচিত নয়। তাই বলে ফেলে দিতে হবে এমন কিন্তু নয়। মাথায় পাকা চুল অনেক সময় উঁকি মারে কালো চুলের মাঝে। এমন হলে হেয়ার ডু শেষে মাশকারা বুলিয়ে নিতে হবে সেই সাদা চুলে। ডাই না করে স্বল্প সময়ের জন্য ডাইয়ের বিকল্প হিসেবে দারুণ কাজ করবে এটি।
লিপস্টিকপ্রেমীদের সংগ্রহে একাধিক শেড থাকে বেশির ভাগ সময়ে। এই প্রসাধন ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে—লিপস্টিক ভেঙে যাওয়া এবং মেয়াদ শেষ হওয়া। দুই ক্ষেত্রেই সমাধান সম্ভব। লিপস্টিকের ওপরের অংশ কোনো কারণে ভেঙে গেলে ভাঙা অংশ বাদ দিয়ে বাকিটুকু ব্যবহার করা যায়। আর যদি মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নিকটবর্তী হয়, তাহলে ব্যবহার করা যায় ব্লাশ অথবা কালার কারেক্টর হিসেবে।
এ ছাড়া লিপস্টিকের কাস্টমাইজড শেড তৈরি করতে চাইলে রয়ে যাওয়া লিপস্টিকগুলো একটার সঙ্গে অন্যটা মিশিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালানোই যায়।
লিকুইড লিপ কালারের ক্ষেত্রে তারল্য কমে এলে গরম পানি ভর্তি একটি পাত্রে ডুবিয়ে রাখতে হবে কিছুক্ষণ। এতে পুনর্ব্যবহারের উপযোগী হবে এই প্রসাধন। ব্লাশ হিসেবেও যোগ করা যাবে সংগ্রহে। লিকুইড লিপ লাইনারে যে শুধু ঠোঁটই রাঙিয়ে নিতে হবে, এমন নয়। নেইলপলিশ হিসেবেও ব্যবহার করা যায় লিকুইড লিপস্টিক। টপ কোটে সম্পন্ন করতে হবে এই কর্মযজ্ঞ।
আইলাইনারও মেলে দুই ফর্মুলায়—লিকুইড ও পেনসিলে। এর সেলফ লাইফ তেমন দীর্ঘ হয় না। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে চোখের আশপাশে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে; বরং পেনসিল আইলাইনার ব্যবহার করা যায় স্কেচিংয়ে। আর লিকুইড আইলাইনার নেইল পেইন্ট কালার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে মেয়াদ শেষ হলে।
মেকআপ প্রডাক্ট শেষ হয়ে গেলে রয়ে যায় এর মোড়ক। এটা বাতিল করা জরুরি নয়। চাইলে ব্যবহার করা যায় ছোট ছোট জিনিস সংগ্রহের জন্য। পুরোনো মেকআপ কনটেইনার সাহায্য করবে ছোট ছোট সরঞ্জাম গুছিয়ে এক জায়গাতে রাখতে।
তবে সবকিছুর পর মনে রাখতে হবে, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে কোনোভাবেই প্রসাধনটি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না। কেনার সময়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পণ্য তৈরির এবং মেয়াদ শেষের তারিখের দিকে। পুরোনো অভিজ্ঞতা থেকে একটি প্রসাধন সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে কত দিন লাগে, সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে উৎপাদন আর মেয়াদের তারিখের তারতম্য হিসাব করে নিতে হবে। মেয়াদ শেষ হতে অল্প দিন বাকি—এ ধরনের প্রসাধন কেনা থেকে বিরত থাকাই ভালো।

মডেল: রিচি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top