এই শহর এই সময় I উদ্দাম-উচ্ছ্বাস
প্রখর রোদ ও তীব্র গরমের পর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বেশ কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে যেন শরতে বর্ষা ঋতুর দেখা পেয়েছিল নগরবাসী। হোক দাবদাহ কিংবা হিমশীতল আবহাওয়া, রাজধানীর বাসিন্দাদের জীবনচিত্রে ব্যস্ততার অন্ত থাকে থাকেনি এ মাসেও। এর ভিড়ে, তাদের মনে প্রাণজুড়ানো দোলা এনে দিতে বরাবরের মতো শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনজুড়ে ছিল নানান আয়োজন।
৪ সেপ্টেম্বর রোববার দৃকের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দৃক গ্যালারিতে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘দ্য লং জার্নি হোম’। চলে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় আলোকচিত্রী অমিয় তরফদারের (১৯৩৫—২০০৬) তোলা ৬৩টি দুর্লভ ছবি জায়গা পায় এই একক প্রদর্শনীতে। কিউরেটর ছিলেন এ এস এম রেজাউর রহমান। জানা যায়, এ প্রদর্শনীর বেশির ভাগ ছবিই তোলা হয়েছে যুদ্ধের ময়দানে। মুক্তিযুদ্ধের অদেখা এই ছবিগুলো এত দিন ছিল অমিয় তরফদারের পরিবারের সদস্যদের কাছে। বাংলাদেশের কেউ সংরক্ষণে রাখুক, এমন চাওয়া ছিল তাদের। দৃক সেই উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে, গুলশানের এজ গ্যালারিতে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হয়ে গেল প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রোকেয়া সুলতানার একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘অ্যান অডি টু জয়’। শুরু হয়েছিল ২৭ আগস্ট। আধুনিক দুনিয়ায় একজন নারীর তাৎপর্য কী—এটিই এই চিত্রশিল্পীর চিত্রকর্মের কেন্দ্রীয় জিজ্ঞাসা। তার কাজে হরদমই দাপুটে ন্যারেটিভ, সংবেদনশীল অন্বেষণ ও বিমূর্ত কম্পোজিশন ছবি হয়ে ধরা দেয়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টির প্রিন্টমেকিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক। ‘অ্যান অডি টু জয়’ প্রদর্শনী প্রসঙ্গে রোকেয়া সুলতানা জানান, নারী হওয়া সব সময় সহজ ব্যাপার নয়; নারীরা অনেক সময় উপেক্ষার শিকার হন। নারীর কাজকে সমাজ সব সময় মূল্যায়ন করে না। ‘আমার কঠোর পরিশ্রম, নানান পুরস্কার কিংবা অর্জন সত্ত্বেও শুধু লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে জীবনে বহুবার আমাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি। বলে রাখা ভালো, এই শিল্পী যে নিজের চিত্রকর্মে ফিমেল ফর্মের জয়গান এবং নারীত্বের আনন্দ ও লড়াইয়ের প্রকাশ ঘটান, তার দারুণ প্রমাণ মেলে প্রদর্শনীটিতে জায়গা পাওয়া ‘ম্যাডোনা’, ‘বনবিবি’ ও ‘ফ্লেমিং ডিজায়ার’ সিরিজগুলোতে।
অন্যদিকে, ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত যমুনা ফিউচার পার্কের পঞ্চম তলায় আয়োজিত হয়েছে ‘কে-কন বাংলাদেশ ২০২২’ কনসার্ট। সহজ ভাষায়, কোরিয়ান মিউজিক কনসার্ট। তাতে উদ্দাম-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিল এ প্রজন্মের একদল ছেলে-মেয়ে। এরা কোরিয়ান সংস্কৃতি, বিশেষত এ সময়ে মিউজিকের তুমুল জনপ্রিয় ধারা কে-পপের বিশেষ অনুরাগী। তাদের পরনে ছিল কে-পপশিল্পীদের মতো পোশাক। কেউ গেয়েছেন, কেউ নেচেছেন। আয়োজক এসকেবি প্রডাকশন, কমিউনিটি পার্টনার বিডি কে-ফ্যামিলি, স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ট্যাশ এন্টারটেইনমেন্ট এবং ইভেন্ট পার্টনার যমুনা ফিউচার পার্ক। প্রথম বাংলাদেশি কে-পপ ও কোরিয়ান কালচার কমিউনিটি—বিডি কে-ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্যাশ এন্টারটেইনমেন্টের সিইও তাসনুভা জাহানের ভাষ্য, ‘দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের গান ও নাচ বেশ জনপ্রিয়। ওদেশের শিল্পীরা বাংলাদেশের গান-নাচ নিয়ে প্রায়ই অনুষ্ঠান করেন। আমরা দুই দেশের মধ্যে মিউজিককে আরও এগিয়ে নিতে কে-পপের আদলে পোশাক পরে নেচে-গেয়ে এই অনুষ্ঠান করেছি।’ এতে শতাধিক অংশগ্রহণকারীর পাশাপাশি দর্শকসারিতে ছিলেন আরও পাঁচ শতাধিক তরুণ-তরুণী।
i লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ