ফিচার I উপবাস উপাদেয়
নবরাত্রির উপবাসে খাবারে আনা চাই পরিবর্তন। সাত্ত্বিক খাবারের দিকে ঝুঁকে তা খেতে হবে সঠিক সময়ে, অল্প করে। নয়তো অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা। রয়েছে নির্দিষ্ট ডায়েটও। কিছু খাবার এড়িয়ে গেলে সুস্থতা নিশ্চিত হবে
আশ্বিনে উদযাপিত হয় শারদীয় নবরাত্রি। অনেকে এই কদিন উপবাস করেন; পাশাপাশি নানান বিধি-নিষেধের মধ্যে থাকতে হয়। খানাখাদ্যেও কিছু আচার-আপত্তি রয়েছে নবরাত্রির উপবাসে। এই নয় দিন উপবাসীরা সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করেন। যেসব খাদ্য মনকে শান্ত রেখে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মানুষকে সত্য বলতে সাহায্য করে, সেগুলো সাত্ত্বিক খাবার। সাত্ত্বিক খাদ্যের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন, এ ধরনের খাবার সাধারণত হালকা, রসালো ও মিষ্টি স্বাদের হয়। এগুলোতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব উপাদানই থাকে। মানে খাদ্যগুলো হয় সুষম। সাত্ত্বিক খাবার খেলে যৌনস্পৃহা ও রাগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভেষজ গুণে পূর্ণ থাকে এ ধরনের আহার্য। এগুলো বেশি খেলেও শরীরে খারাপ প্রভাব পড়ে না। মূলত উদরের সংযম ছাড়াও চারিত্রিক সংযম রক্ষার জন্য সাত্ত্বিক খাবারের প্রয়োজন পড়ে নবরাত্রিতে। তাই এ সময়ে চাই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন খাবার।
নবরাত্রিতে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কেননা ওই সব খাবার সাত্ত্বিক গুণ নষ্ট করে। যেসব খাদ্য খেতে নিষেধ করা হয়, সেগুলো হলো পেঁয়াজ, রসুন, চাল, গম, মসুর ডাল, ডিম, মাংস ইত্যাদি। কিছু মসলাপাতি আছে যা মনের ওপর মন্দ প্রভাব ফেলতে পারে। সেগুলো খেতেও বারণ করা হয় নবরাত্রিতে। যেমন হলুদ, হিং, গরমমসলা, ধনে, লবঙ্গ ও শর্ষে। সাধারণ লবণ খাওয়াও পুরোপুরি বারণ। এর বদলে খাওয়া যেতে পারে রক সল্ট। শরীরে তাপ বাড়াতে পারে এমন তেল খাওয়া থেকেও বিরত থাকা চাই। শর্ষে ও তিলের তেল শরীর উষ্ণ করে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা দরকার। এসবের বদলে খাওয়া যেতে পারে ঘি কিংবা পিনাট বাটার। তামাক ও অ্যালকোহলযুক্ত খাদ্য খাওয়া এ সময় একেবারেই নিষেধ।
নবরাত্রিতে বেশ গরম পড়লে সে সময় এমন খাবার খাওয়া প্রয়োজন, যাতে শরীরের পানির চাহিদা দূর হয়। এ জন্য খাওয়া যেতে পারে কাঁচকলা। যারা উপবাস করেন, তাদের জন্য কাঁচকলার পুডিং কিংবা টিকিয়া বেশ উপাদেয়। খাওয়া যেতে পারে তরমুজ, শসা কিংবা টমেটো। এগুলো শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে। আর্দ্রতা বজায় রাখতে খাওয়া যেতে পারে মিষ্টি আলুও। এটি দিয়ে সবজি রান্না করে খাওয়া ছাড়াও পুডিং কিংবা স্যালাড করে খেলে সুফল মিলবে। পানিফল খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় পানি পূরণ হবে, পাশাপাশি শক্তিও মিলবে। সবচেয়ে বেশি উপকার মিলবে লাউ খেলে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপাদেয়। উপবাসের সময় লাউয়ের পুডিং খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীরের পানি পূরণ তো হবেই, সুগার লেভেলও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
অনেকেই ডায়েট চার্ট মেনে খাবার খান। উপবাসের দিনগুলোতে তাদের খাবার ও খাদ্য গ্রহণের সময়ের হেরফের ঘটতে পারে। এই পরিবর্তন স্বাস্থ্যে যেন কোনো খারাপ প্রভাব না ফেলে, তাই নবরাত্রিতে বিশেষ ডায়েট মেনে চলা জরুরি। যেমন প্রথম দিন করা যেতে পারে ফলের ডায়েট। এদিন আপেল, কলা, পেঁপে, তরমুজ কিংবা আঙুর খাওয়া যেতে পারে। চেষ্টা করতে হবে জুস খাওয়ার। সবচেয়ে ভালো হবে ডাবের পানি পান করলে। এই ডায়েট মেনে চলা যেতে পারে নবরাত্রির প্রথম তিন দিন। এর পরের তিন দিনে পাতে রাখা যেতে পারে দুধ কিংবা বাটার মিল্ক। অবশ্য এ খাবার দুটি দিনে একবার। দিনের বাকি অংশে ফলের রস খেলে ভালো হবে। শেষের তিন দিন করা যেতে পারে বিশেষ ডায়েট। মানে খাবারে বাছবিচারের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। শরীর ঠান্ডা রাখে এমন খাবার উপবাসের শেষের তিন দিন খাওয়া যেতে পারে। নাশপাতি, আপেল, পেঁপে, ঘি—এগুলো দেহ শীতল রাখে। খাওয়া যেতে পারে কুমড়া, লাউ ও দই। পেট ভরাতে রাঙা আলু, মিষ্টি আলু, কচু ইত্যাদি রাখা যেতে পারে পাতে। শরীর আর্দ্র রাখতে উপবাসের দিনগুলোতে স্যুপ খাওয়া ভালো। এ সময় আমিষ এড়িয়ে চলাই স্বাস্থ্যসম্মত। পেঁয়াজ ও রসুন যোগে রান্না খাবার থেকেও বিরত থাকতে হবে। খাওয়া যাবে না ভাজাপোড়া। ভারী খাবার খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি কোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক হবে না। ভাপে কিংবা গ্রিল ও রোস্ট করে খাওয়া যায়—এমন পদগুলো খেলে এ সময় শরীর ফুরফুরে থাকবে।
উপবাস ভাঙার সময় হালকা খাবার খাওয়া উত্তম। ভারী খাবার খেলে তা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সহজে হজম হয় সে ধরনের খাবার অল্প করে খেয়ে উপবাস ভাঙা যেতে পারে। নবরাত্রিতে খেজুর কিংবা গ্রিন টি খেলে সারা দিন উদ্যমী থাকা যাবে। নাশতায় কিশমিশ ও বাদাম রাখলে বাড়তি শক্তি মিলবে। ক্ষীর ও মিল্কশেক খেতে পারলে শরীর চনমনে থাকবে। বিকেলের দিকে পাতে রাখা যেতে পারে ফল ও দই। সন্ধ্যায় আলুর চাট ও পালংশাকের স্যালাড বেশ উপাদেয় হবে। ডিনারে স্যুপ ও হালুয়া জাতীয় খাবার খাওয়া ভালো। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ খাওয়া যেতে পারে। এসব নিয়ম মেনে খাওয়া গেলে নবরাত্রির দিনগুলোতে সুস্থ থাকা যাবে। তবে এগুলো খাওয়ার কিছু তরিকা রয়েছে। যা-ই খাওয়া হোক, তা খেতে হবে অল্প ও নিয়মিত বিরতিতে। এতে মেটাবলিজম ঠিক থাকবে। শরীরে তরলের মাত্রা ঠিক রাখতে খাওয়া যেতে পারে স্মুদি। নবরাত্রিতে আলু খাওয়ায় বারণ না থাকলেও ভাজা আলুর চাট না খেয়ে সেদ্ধ আলুর চাট খাওয়াই ভালো। সম্ভব হলে লাউয়ের সঙ্গে আলু মিশিয়ে মুঠিয়া তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। দুধের ক্ষেত্রে স্কিমড দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকে।
তবে নবরাত্রিতে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীদের খাদ্য ও ডায়েটের বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। উপবাস যেন কাউকে অসুস্থ করে না দেয়। যেকোনো উপবাসই শরীরের পক্ষে ভালো বলে মত দেন অভিজ্ঞরা। তবে সে ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে খেতে হয়।
আহমেদ সজিব
ছবি: ইন্টারনেট