skip to Main Content

টেকসহি I নতুন মোড়কে

পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নেওয়া এই একটি পদক্ষেপ পাল্টে দিচ্ছে সৌন্দর্যবিশ্বকে। মিলছে সৌন্দর্যসচেতনদের পূর্ণ সমর্থনও

সৌন্দর্য প্রসাধন প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে টেকসই তত্ত্ব নিয়ে সচেতন হচ্ছে বিশ্ব। ওয়ার্ল্ড বিজনেস কাউন্সিল ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের মতে, টেকসই তত্ত্ব হচ্ছে একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পদ্ধতি, যা বর্তমানের ভোক্তাদের সেবা প্রদানের সময়ে নিশ্চিত করে, যেন তা ভবিষ্যতের ক্রেতাদের কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না করে।
উন্নত বিশ্বকে অনুসরণ করে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এখন টেকসই তত্ত্ব অবলম্বন করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। সৌন্দর্যপণ্যের বাজারও এর অন্তর্ভুক্ত। প্রসাধনের মূল উপাদান নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বহু কাজ হয়েছে, হচ্ছে। প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রেও ব্র্যান্ডগুলো এখন চেষ্টা করে যাচ্ছে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করার।
সৌন্দর্যবর্ধনে প্রসাধনশিল্প যেমন খ্যাতি পেয়েছে, তেমনি সমালোচিত হয়েছে পণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক উপাদানের যথেচ্ছ ব্যবহারে। এ ধরনের পণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা হয় সেসব। সংগ্রহ করা উপাদান প্রয়োজনের অতিরিক্ত সংগ্রহ ও ব্যবহৃত হওয়ায় পরিবেশে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তবে বিউটি ইন্ডাস্ট্রি এ সমস্যা উতরে যেতে পারে। প্যাকেজিংয়ে মনোযোগ এবং টেকসই তত্ত্বের উপযুক্ত ব্যবহার সাহায্য করবে এ ক্ষেত্রে।
কয়েক বছর ধরে প্রসাধন-বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ক্রেতাদের মাঝে পরিবেশ-সচেতনতা লক্ষ করেছেন। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদানযুক্ত পণ্য দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন তারা। প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে একই ধারা। ক্রেতার আস্থা অর্জন করেছে এমন ব্র্যান্ডগুলো নিয়মিত ক্রেতাদের মতামত ও চাহিদা সংগ্রহ করে। প্যাকেজিংয়ের বিষয়ে ঠিক একইভাবে ব্র্যান্ডগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হলে দেখা যায়, একটি বড় অংশের ক্রেতা পরিবেশবান্ধব পণ্য কিনতে বাড়তি খরচ করতেও বেশ আগ্রহী।
প্রতিবছর প্রসাধনশিল্পে নতুন নতুন পণ্য যোগ হয়। এসব পণ্যের জন্য মোড়কের দরকার হয়, আবার পুরোনো পণ্যগুলোও মোড়কজাত করার প্রয়োজন পড়ে। উৎপাদন ও পুনরুৎপাদনের চক্রে এটি নিয়মিত জরুরি একটি বিষয়। প্যাকেজিং প্রসেস এবং ম্যাটেরিয়ালস সংগ্রহ—উভয় কার্যক্রমেই পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ে। ইকো ফ্রেন্ডলি প্যাকেজিংয়ে যদি অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এ শিল্প, তাহলে এর ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও কমে আসবে।
প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে টেকসই তত্ত্ব ব্যবহারের উদ্দেশ্য শুধু বর্জ্য কিংবা গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদন কমানো নয়। এর বাইরেও পরিবেশ, সমাজসহ পৃথিবীর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে করণীয় রয়েছে। ব্র্যান্ড ভ্যালুর ক্ষেত্রে এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
টেকসই মোড়ক তৈরির ক্ষেত্রে বহু ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্লাস্টিক ও কাচ একাধিকবার ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু পরিবেশে এর প্রভাবের দিকও ভাবতে হবে। শুধু একাধিকবার ব্যবহার করার উপযোগিতাকে গুরুত্ব দিয়ে এই উপাদান দুটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। কাচের তৈরি পাত্র বহুবার ব্যবহার করা যায়। পরিবেশের ওপর তেমন ক্ষতিকর প্রভাবও ফেলে না। কিন্তু এটি ব্যবহারে সাবধানতা আবশ্যক এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি। সামান্য অসাবধানতায়ও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সৌন্দর্যপণ্য প্যাকেজিংয়ে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী এ ধরনের উপাদানের তৈরি পাত্র বেছে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
যদি প্রসাধনের রিফিল করে নেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে প্যাকেজিংয়ের আবর্জনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে আসবে এবং পরিবেশ ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা পাবে।
প্যাকেজিংয়ে পচনশীল উপাদান ব্যবহার করা হলে পরিবেশের সঙ্গে তা মিশে যায়। ফলে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব কমে আসে। প্ল্যান্ট বেইজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে প্যাকেজিং করা হলে প্রকৃতি থেকে উৎপাদিত পণ্য সময়মতো প্রকৃতির বুকে মিশে যায়। উড পাল্প ব্যবহারে প্রস্তুত পেপার বোর্ড, রিসাইকেলড পেপারের কার্ড বোর্ড দিয়ে তৈরি মোড়ক ব্যবহারের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ, এ উপাদান বায়োডিগ্রেডেবল হয়ে থাকে।
সৌন্দর্য প্রসাধনের সঙ্গে সঙ্গে সরঞ্জামেরও প্যাকেজিং দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে বলা যায় মেকআপ ব্রাশের কথা। ব্রাশের নিচের অংশ হাতে ধরার জন্য হ্যান্ডেল তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে বাঁশ। বাঁশ দ্রুত জন্ম নেয় এবং ব্যবহার উপযোগী হয়।
হেম্পও ব্যবহার করা যায় পণ্য মোড়কজাতে। এটি পেস্ট ও মোল্ড ধরে রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর। তাই সৌন্দর্য প্রসাধন সংরক্ষণের জন্য উপযোগী পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রিসাইকেলড পেপার বোর্ড ব্যবহার করে তৈরি করা যেতে পারে প্রসাধনের পাত্র। পেপার বোর্ড তৈরির জন্য ব্যবহার করা যাবে ব্যবহৃত পুরোনো পেপার। এতে নতুন পেপার ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না; বরং এগুলোর পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত হবে। ফোল্ডিং কার্টন, টিউব এবং কসমেটিক লেবেল তৈরির ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
কার্ড স্টক পেপার বোর্ডের চেয়ে সস্তা। এটি ব্যবহার করে প্রসাধনের হোলসেলিং কাস্টমাইজড বক্স ও লেবেল তৈরি করা সম্ভব।
বিউটি ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। যেমন একটি শ্যাম্পুর বোতল তৈরিতে প্রয়োজন পড়ে ১০ লিটার পানির। বর্তমানে পৃথিবী পানিসংকটে ভুগছে। খরা বাড়ছে। সুপেয় পানি কমে বাড়ছে সি লেভেল। এমন কঠিন সময়ে প্রতিটি ফোঁটা পানি ব্যবহারে সচেতনতা জরুরি। এ ক্ষেত্রে স্বস্তি আনতে পারে বায়োডিগ্রেডেবল ম্যাটেরিয়ালসের ব্যবহার।
বিউটি প্রডাক্টের বাইরের অংশ রিসাইকেল করা কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ কঠিন। কারণ, একাধিক উপাদান ব্যবহার। যেমন বেশির ভাগ লিপস্টিকের বাইরের অংশ তৈরিতে প্লাস্টিক ও মেটালের প্রয়োজন পড়ে। একই সঙ্গে একাধিক উপাদান ব্যবহার করা হলে রিসাইক্লিং সম্ভব হয় না। প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিংয়ের সময় মেটালকে কোনোভাবেই রিসাইকেল করা যাবে না। লিপস্টিকসহ অন্য যেকোনো পণ্যের মিক্সড মিডিয়ার মোড়কের রিসাইকেল এসব ক্ষেত্রে সহজ হয় না। আইশ্যাডো, নেইলপলিশের ক্ষেত্রেও এ ধরনের প্যাকেজিং দেখা যায়। উপাদানের মিশ্রণের জটিলতার কারণে সম্পূর্ণ মোড়কটি রিসাইকেল করা সম্ভব না হলে বাকি অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে আবর্জনা তৈরি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব আবর্জনা মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভাঙা অংশ, অর্ধগলিত প্যাকেট মানুষ ও পরিবেশ—উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।
পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনেক ব্র্যান্ড। বিশেষ করে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের প্রভাব পরিবেশের জন্য নেতিবাচক ধারণা করা হয়। মনে রাখা জরুরি, প্লাস্টিক রিসাইকেল যোগ্য কি না, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য গ্রহণ করে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পুনরায় ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য তুলনামূলক কম ক্ষতিকর। ভার্জিন প্লাস্টিক ব্যবহারে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে। ভার্জিন ফসিল বেইজড প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণ করে। অন্তত ২৫ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য, বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যবহার করতে হবে।
বিউটি ব্র্যান্ডগুলো পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমে মার্কেট রিসার্চ করে চাহিদা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে প্যাকেজিং সম্পন্ন করতে পারে। অতিরিক্ত পণ্য উৎপাদন না করে যতটা প্রয়োজন, ততটুকু পণ্য প্যাকেজিং করে বাজারজাত করা যায়।
প্রডাক্ট প্যাকেজিংয়ের ডিজাইনের সময় রিসাইক্লিংয়ের বিস্তারিত প্যাকেটের গায়ে লেখা যেতে পারে। ডিস্ট্রিবিউটর, দোকানি, বিক্রেতা ও ক্রেতা—সবাই জানবে কীভাবে এই পণ্যের প্যাকেট পুনর্ব্যবহার করা হবে। ঘরে বসে সহজে রিসাইকেল করার উপযুক্ত পণ্য হলে পুরো পদ্ধতিটির বিস্তারিত পণ্যের গায়ে লেখা থাকলে ব্যবহারকারীরা নিজেরাই তা সেরে নিতে পারবেন সহজে।
প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের উপাদান ব্যবহার না করে যেকোনো এক ধরনের পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
আশার খবর হচ্ছে, বিউটি ব্র্যান্ড লাশ, ম্যাক কসমেটিকস, ডিসিম, অরিজিনস, অ্যাভেডা ইতিমধ্যে নতুন প্রজন্মের প্যাকেজিং নিয়ে কাজ করছে। সাড়াও মিলছে আশাতীত।

i সারাহ্ রুশমিতা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top