ফরহিম I দ্য ম্যানুয়াল
বাছাই করা এবং বিশেষভাবে তৈরি শুধু এ ধরনের ত্বকের জন্য। তাই সৌন্দর্যপণ্যের উপাদান তালিকায় এগুলোর উপস্থিতি গেম চেঞ্জারই বটে
রকেট সায়েন্স নয়, সৌন্দর্যচর্চা নিয়ে যাদের সামান্যতম ধারণা রয়েছে তারাও জানেন, পুরুষদের ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই নারীদের চেয়ে আলাদা। তাই তাদের পরিচর্যার পণ্যগুলোর উপাদান তালিকা খানিকটা ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। আর এখন সে সম্পর্কে দারুণ সচেতন সৌন্দর্যপ্রেমী পুরুষেরা। সৌন্দর্যচর্চা বা গ্রুমিংয়ের ব্যাপারটা এখন শুধু মহিলাদের কুক্ষিগত নেই। তাই এ নিয়ে খুঁটিনাটি জানার ব্যাপারেও পিছিয়ে নেই পুরুষেরা। ত্বকে কী মাখছেন, সে ব্যাপারে সচেতনেরা জানেন, প্রডাক্টের লেবেলে তারা কী দেখতে চান না। প্যারাবেনের মতো সিনথেটিক প্রিজারভেটিভ, প্লাস্টিক বেসড সলভেন্ট বা পেট্রোলিয়াম বেসড ফ্র্যাগরেন্স যে পুরুষালি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর, সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আছে তাদের। জানেন, এগুলো শুধু ত্বকের বারোটাই বাজাবে না, অদূর ভবিষ্যতে দেহেও নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি করবে।
তালিকায় কোনটা না থাকলে ভালো, সেটা না হয় জানা থাকল, কিন্তু কোনটা চাই, তা-ও তো জানতে হবে। বিশেষ করে বিগেনারদের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছরই আপডেট হয় পুরুষালি প্রডাক্টের ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্ট। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি।
সি বাকথর্ন
নিওন অরেঞ্জ রঙা বেরি জাতীয় এ ফল সৌন্দর্য উপাদান হিসেবে বছরের শুরু থেকেই ছিল চর্চায়। এতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ই-এর মতো প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মলিকিউল। হাই লেভেল বেটা ক্যারোটিন যুক্ত এটি। এ ছাড়া রয়েছে হাই কনসেনট্রেশনের ফ্যাটি অ্যাসিড।
i চর্চায় কেন: কারণ, সূর্য এবং নানা ধরনের তাপের ফলে ত্বককোষের যে ক্ষতি হয়, তা সারাইয়ে কার্যকর এটি। সেই সঙ্গে ত্বকের জ্বালাপোড়া দূরীকরণ আর চামড়া ওঠা ভাব থেকে পরিত্রাণ দিতেও সহায়ক। এমনকি দূর করে দেয় ক্ষতের দাগও।
i মিলবে: ফেস অয়েল অথবা সেরামে ব্যবহৃত হয় এই উপাদান। তবে সাবধান, পণ্যের গায়ে যদি লেখা থাকে ‘কোল্ড প্রেসড’, তাহলে তা না নেওয়াই ভালো। কারণ, সি বাকর্থন এভাবে প্রক্রিয়াজাত করা যায় না।
i সক্রিয়তায়: সুপার ফাস্ট কাজ করে এই উপাদান। তাই ত্বকে ব্যবহারের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই চোখে পড়ে পরিবর্তন। আর নিয়মিত ব্যবহারে শুষ্ক, লাল হয়ে যাওয়া ত্বকে জোগাবে স্বস্তি। সেই সঙ্গে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব অনেকাংশেই কাটিয়ে ওঠা যাবে। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখাবে ত্বক।
মারুলা অয়েল
সাউথ আফ্রিকান সুপার ফ্রুট থেকে তৈরি হয় এটি। নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ। সেই সঙ্গে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখার দারুণ প্রাকৃতিক উপাদানও বটে। যেহেতু পুরুষদের একটি দীর্ঘ সময় ঘরের বাইরে থাকতে হয়, সে ক্ষেত্রে দারুণ উপকারীও।
i চর্চায় কেন: সি বাকথর্নের মতো এটিও ত্বককে দিনভর সূর্যালোক থেকে রক্ষা করে। উপরি পাওনা হিসেবে এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টি ত্বকের জ্বালাপোড়া সারায়। কমায় ব্ল্যাকহেডস আর অ্যাকনে।
i মিলবে: ফেস অয়েল বা সেরামে আনরিফাইনড মারুলা অয়েল ব্যবহৃত হয়।
i সক্রিয়তায়: ত্বকে মাখার সঙ্গে সঙ্গেই সামান্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে। তবে ব্রণ আর জ্বালাপোড়া কমাতে নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহখানেক।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
আখ থেকে পাওয়া যায় এই হাইড্রোক্সি অ্যাসিড। ত্বকের মৃতকোষগুলোর মধ্যকার বন্ধন ভেঙে দেয় এই উপাদান। এর অ্যাসিড মলিকিউল এতই ছোট যে ত্বকের হেয়ার ফলিকল অব্দি সরাসরি পৌঁছে যেতে পারে এটি। ত্বক সমস্যা সৃষ্টিকারী সিবাম আর প্রোটিন বিল্ডআপকে পরিষ্কারে সহায়তা করে।
i চর্চায় কেন: কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হিসেবে দারুণ কাজ করে এটি। কোমলভাবে ত্বকে মৃতকোষ আর রোমকূপ আটকে দেওয়া ব্যাকটেরিয়া, তেল দূর করে দেয়। ফিজিক্যাল স্ক্রাবিং ছাড়াই। কোষ পুনরুৎপাদনে সহায়তা করে ত্বকের কোনো ক্ষতি না করেই। এটি তেলতেলে ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী। কারণ, ত্বকের তেলে ভাব দূর করার পাশাপাশি এটি অ্যাকনে প্রতিরোধেও কার্যকর।
i মিলবে: ক্লিনজার থেকে ময়শ্চারাইজার—সব ধরনের সৌন্দর্যচর্চার উপাদানে এর উপস্থিতি লক্ষণীয়। রোজকার ব্যবহারের পণ্যে ৫% গ্লাইকোলিক অ্যাসিড উপস্থিত থাকলেই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি মাত্রারগুলো বেশি শক্তিশালী। বিশেষত পরিণত, শুষ্ক কিংবা স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য।
i সক্রিয়তায়: মাসব্যাপী প্রতিদিন ব্যবহার করলে পরিবর্তন স্পষ্ট টের পাওয়া যাবে। ত্বক দেখাবে উজ্জ্বল; আনইভেন ভাব কেটে যাবে। সেই সঙ্গে ত্বক হয়ে উঠবে আরও বেশি কোমল ও মসৃণ।
হায়ালুরনিক অ্যাসিড
আরেকটি সুগার বেসড অ্যাসিড। এটি ত্বককোষে প্রয়োজনীয় পানি ধরে রাখতে সহায়ক; যা ত্বককে রাখবে আর্দ্র আর পরিপুষ্ট। ব্যাকটেরিয়া ফার্মেন্টেড প্ল্যান্ট থেকে তৈরি হওয়া এই অ্যাসিড আর্দ্রতাকে আকর্ষণ করে ত্বকে জমিয়ে রাখে। যা দীর্ঘ সময় ধরে ময়শ্চারাইজড রাখে এবং বাড়ায় ইলাস্টিসিটি।
i চর্চায় কেন: এর আর্দ্রতা ধারণ শক্তি জাদুর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়; যা ত্বকের তারুণ্যোজ্জ্বল ভাব বজায় রাখে। কমায় বলিরেখা, বাড়ায় উজ্জ্বলতা। আর অয়েলবেসড না হওয়া অ্যাকনে প্রন স্কিনেও সহজে ব্যবহারযোগ্য।
i মিলবে: হায়ালুরনিক অ্যাসিডের বহুল ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় সেরাম, ময়শ্চারাইজার আর হাইড্রেটিং মাস্কে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের মলিকিউলার ওয়েটের মিশ্রণ থাকলে তো আরও ভালো। সৌন্দর্যপণ্যের হাইড্রেটিং এবং প্লাম্পিং ইফেক্ট আরও বাড়বে। এই অ্যাসিডের মলিকিউল প্রাকৃতিকভাবেই বড়। তাই পণ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খেয়ার রাখতে হবে, যেন সেগুলোতে মাইক্রোনাইজড হায়ালুরনিক অ্যাসিডের উপস্থিতি থাকে। অথবা অবশ্যই অন্য কোনো উপাদান উপস্থিত থাকে, যা দ্রুত ত্বক শুষে নিতে পারবে।
i সক্রিয়তায়: তিন থেকে চার সপ্তাহ পর বোঝা যাবে এর প্রভাব। তা-ও ব্যবহার করতে হবে প্রতিদিন। এতে ত্বকের আউটার লেয়ার পুনরুজ্জীবিত হবে। দূর হবে বলিরেখা আর সূক্ষ্ম রেখা।
নিয়াসিনামাইড
সৌন্দর্য উপাদানের পাওয়ার হাউস বলা হয় একে। ভিটামিন বিথ্রি হিসেবেও পরিচিত। বহু গুণসংবলিত এই উপাদান নানা ধরনের ত্বক সমস্যা সমাধানের চমৎকার অপশন। দিন কিংবা রাতে যেকোনো সময় ব্যবহার উপযোগী। অন্য যেকোনো উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায় সহজেই।
i চর্চায় কেন: থাকবেই না বা কেন! একাই এক শ যে। বড় হয়ে যাওয়া লোমকূপের সমস্যা সারায়, আনইভেন স্কিন টোনকে ঠিক করে, বলিরেখা দূর করে, সেই সঙ্গে জোগায় প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা। ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষাবেষ্টনীকে আগলে রাখে দীর্ঘ সময়।
i মিলবে: নিয়াসিনামাইড কেনার সময় জরুরি সচেতনতা। একদম অথেনটিক সোর্স না হলে মুশকিল। লো নিকোটিনিক অ্যাসিডযুক্ত হলে সবচেয়ে ভালো। এটা নিয়াসিনামাইড ফ্ল্যাশ প্রতিরোধে সহায়ক। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে অস্বস্তিকর লালচে ভাব তৈরি হতে পারে ত্বকে।
i সক্রিয়তায়: নিয়মিত ব্যবহারের কিছুদিন পরেই ত্বকের রোমকূপগুলো লক্ষণীয়ভাবে ছোট দেখাবে। টেক্সচার এবং টোনেও আসবে পরিবর্তন। টোটাল ট্রান্সফরমেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে মাস তিনেক।
রেটিনল
প্রিমিয়াম স্কিনকেয়ার ইনগ্রেডিয়েন্ট। শক্তিশালী কোষ পুনরুদ্ধারকারী বৈশিষ্ট্যসংবলিত।
i চর্চায় কেন: কোলাজেন উৎপাদনের হার ত্বরান্বিত করে রেটিনল। দূর করে বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখা। তাই সৌন্দর্যবিশ্বে এর বিশেষ কদর রয়েছে। রাতে বেশি কার্যকর এর ব্যবহার। নতুন ত্বককোষগুলোকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। ত্বক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, আগের দিন রাতে রেটিনল ব্যবহার করলে পরদিন সকালে সানস্ক্রিনের ব্যবহার মাস্ট।
i মিলবে: রেটিনলের কার্যকারিতা খুব দ্রুত নিঃশেষিত হতে থাকে। তাই এমন পণ্য বেছে নিতে হবে যাতে রেটিনল মাইক্রোইনক্যাপসুলেশন প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়েছে। এই কেমিক্যাল কোটিং পণ্যের শেলফ লাইফ বাড়াতে সহায়ক।
i সক্রিয়তায়: রেটিনল কিছুদিন ব্যবহারেই বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখা বশে চলে আসবে। লক্ষণীয় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে চেহারায়।
সিউইড
প্রডাক্টের লেবেলে অ্যালগি নামেও উল্লেখ থাকতে পারে এর। প্রতিদিনের ব্যবহারযোগ্য অনেক পণ্যেই এর উপস্থিতি এখন উল্লেখযোগ্য। যেমন টুথপেস্ট, ক্যান্ডি, আইসক্রিম ইত্যাদি। মূলত বাইন্ডিং এবং ইমালসিফায়িং প্রোপ্রার্টিযুক্ত এই মেরিন প্ল্যান্ট ভিটামিন, মিনারেল আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ।
i চর্চায় কেন: এর উপকারিতা বহুমুখী। ধরনভেদে কোনো সিউইড ত্বকে কোলাজেন উৎপাদনের হার বাড়ায় তো কোনোটায় কমে বলিরেখা। পরিবেশের দূষণ থেকে রক্ষা করে ত্বককে। এমনকি ত্বককে পরিপুষ্ট করে দেখায় তারুণ্যোজ্জ্বল।
i মিলবে: ক্রিম থেকে ক্লিনজার নানা ধরনের পণ্যে। তবে খেয়াল করতে হবে পরিষ্কার উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সংগৃহীত সিউইড থেকে তৈরি হচ্ছে কি না সেই পণ্য। এতে পরিপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেল মিলবে।
i সক্রিয়তায়: ব্যক্তিভেদে নির্ভর করবে এর উপকারিতা। কারও ত্বকে খুব দ্রুত কাজ করে তো কারও ত্বকে সামান্য বেশি সময় লাগে।
i অর্চনা সাহা
মডেল: তমাল
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: তানভীর খান