ত্বকতত্ত্ব I কেবল কনট্যুরিংয়ে
সঠিকভাবে প্রয়োগে ফুটে ওঠে ফেশিয়াল ফিচারের সৌন্দর্য। সে ক্ষেত্রে শেড বাছাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
একটু খেয়াল করলেই নজরে আসবে ত্বকে কিছু জায়গা আন-ইভেন বা অসমান, ঠিক যেন আলো-ছায়া পড়েছে এমন। মেকআপ করার সময় যখন ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা হয়, তখন চেহারার এই আলো-ছায়াটা আর থাকে না, ফেস দেখতে একদম ফ্ল্যাট বা সমান লাগে। তখন মুখাবয়ব কিছুটা কৃত্রিম মনে হয়। সামনাসামনি কিংবা ছবি—কোনোটাতে ভালো দেখায় না। তখন মুখাবয়বের এই আলো-ছায়া বা শ্যাডোগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য কনট্যুরিং করা হয়। সাধারণত চিক বোনের নিচে, কপালের হেয়ার লাইনে, নাকের দুই পাশে, থুতনির নিচে ইত্যাদি অংশে। কারও কপাল হয়তো অনেক বেশি চওড়া এবং বড় কিংবা ডাবল চিন আছে, অথবা নাক খানিকটা মোটা, এসব বিষয় কনট্যুরিংয়ের মাধ্যমে ঢেকে ফেলা যায় অনেকটা।
এটা করা হয় যেকোনো ক্রিমি কনসিলার বা পাউডার দিয়ে। কনট্যুরিংয়ের জন্য সাধারণত ত্বকের স্বাভাবিক শেড থেকে ৪-৫ শেড ডার্কার বা গাঢ় কনসিলার ব্যবহার করাই নিয়ম। সে জন্য সবার আগে জানতে ও বুঝতে হবে নিজ ত্বকের রং আর ধরন। পরবর্তী সময়ে সে অনুযায়ী কনসিলার বেছে নিতে হবে।
ফর্সা ত্বক
গায়ের রং ফর্সা হলে কম ডার্ক কালারের কনসিলার বেছে নিতে হবে। অনেক বেশি ডার্ক বা অরেঞ্জ কালার কনট্যুরিং শেড বেছে নেওয়া যাবে না। এতে বরং ফল উল্টো হবে। ন্যাচারাল লুক বেশি পছন্দ হলে কুল টোন বেছে নিতে হবে। ফর্সা ত্বকে ন্যাচারাল ও ব্লেন্ডেড কনট্যুরিং দেখতে ভালো লাগবে।
শ্যামলা ত্বক
এ ধরনের ত্বকের অধিকারী যারা, তাদের ইচ্ছেমতো কনট্যুর করার স্বাধীনতা রয়েছে। কারণ, এমন ত্বকের সঙ্গে প্রায় সব ধরনের কনট্যুরিং শেড মানিয়ে যায়—ডার্ক ব্রাউন, অরেঞ্জ, কুল টোন—যেকোনোটাই। তবে কেনার আগে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, কোনটি ত্বকের সঙ্গে ভালো যাচ্ছে। সে অনুযায়ী কনট্যুর শেড বেছে নিতে হবে।
কালো ত্বক
ত্বকের কমপ্লেকশন একটু ডার্ক হলে খুব বুঝে-শুনে শেড বাছাই করা উচিত। অনেকেই কালো ত্বকে কমলা টাইপের শেড বেছে নিয়ে ভুল করেন। এতে ত্বকে কনট্যুরিং কোনো কাজেই আসে না; বরং আরও খারাপ দেখায়। ডার্ক কালার ব্যবহার করলে ত্বক আরও বেশি ডার্ক দেখাবে। এ জন্য ন্যাচারাল কনট্যুরিংকে প্রাধান্য দিতে হবে এ ধরনের ত্বকে। সবচেয়ে ভালো হয় নিউট্রাল শেড বেছে নিলে।
ত্বকের ধরন
একেকজনের ত্বকের ধরন একেক রকম। কারও শুষ্ক তো কারও তেলতেলে। অনেকেই আবার স্বাভাবিক ত্বকের অধিকারী। একেক ধরনের ত্বকে একেক রকম কনট্যুর করা চাই। এ জন্য ত্বকের ধরন বুঝে কনট্যুরিং বেছে নিতে হবে সব সময়। ত্বক তেলতেলে হলে কনট্যুরিং পাউডার ব্যবহার করলেই ফল বেশি ভালো মিলবে। ম্যাটিফায়িং লুক আসবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম জাতীয় কনট্যুর পণ্য বেছে নিতে হবে। এতে ত্বকে শুষ্কতার হার কমবে। আর স্বাভাবিক ত্বকের অধিকারী হলে পছন্দমতো যেকোনো কনট্যুর পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্লেন্ডিং টুল
পারফেক্ট ন্যাচারাল মেকআপের মূল শর্ত ব্লেন্ডিং। কনসিলার ব্যবহারের পর তা অবশ্যই ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। নতুবা ভালো দেখাবে না। সঠিকভাবে প্রয়োগের জন্য চাই পারফেক্ট কনট্যুরিং ব্রাশ। এ ক্ষেত্রে কনট্যুরিংয়ের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ব্রাশগুলো ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে ভুলভাল ব্রাশের ব্যবহার কনট্যুরিং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই শুধু প্রডাক্ট নয়, ব্রাশের দিকেও নজর দেওয়া চাই।
অনেকের ধারণা, ব্রোঞ্জিং আর কনট্যুরিং একই জিনিস। এটি ভুল ধারণা। ব্রোঞ্জার আউটার ফেসকে ওয়ার্মআপ করে এবং একটা গ্লোয়ি লুক দেয়, যা দিনের বেলায় বেশি ভালো লাগে। আর কনট্যুরিং ফেসকে ডিফাইন করে এবং শেপ দেয়। এটা অবশ্যই ম্যাট হওয়া আবশ্যক। অন্যদিকে ব্রোঞ্জারে কিন্তু শিমার থাকে। তাই কনট্যুরিং পাউডার দিয়ে ব্রোঞ্জিং বা ব্রোঞ্জার দিয়ে কনট্যুরিং করা যাবে না কোনোভাবেই।
i সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: মিয়াম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান