skip to Main Content

সেলুলয়েড I আ ম্যারিড ওম্যান

চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: জ্যঁ-লুক গোদার
অভিনয়: মাশা মেরিল, বার্নার্ড নোয়েল, ফিলিপ লিরয়
চিত্রগ্রহণ: রাউল কুতার
সম্পাদনা: অঁদ্রি শোতি
সময়ব্যাপ্তি: ৯৪ মিনিট
ভাষা: ফ্রেঞ্চ
দেশ: ফ্রান্স
মুক্তি: ১৯৬৪

৯২ বছর বয়সে পা রাখার মাস তিনেক আগে, গেল ১৩ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করে আবারও সিনেমাবিশ্ব তোলপাড় করে দিয়ে গেলেন ফ্রেঞ্চ-সুইস মাস্টার ফিল্মমেকার জ্যঁ-লুক গোদার। ‘অ্যাসিস্টেড সুইসাইড প্রসিডিউর’ নামে পরিচিত ওই স্বেচ্ছামৃত্যু সুইজারল্যান্ডে আইনিভাবে বৈধ, যে দেশে জীবনের শেষ কয়েকটি দশক কাটিয়েছেন বৈপ্লবিক ‘ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ’ ফিল্ম মুভমেন্টের এই অন্যতম এবং অনেকের মতে শ্রেষ্ঠতম সিনে-যোদ্ধা।
একজীবনে শতাধিক সিনেমা বানিয়েছেন গোদার। তার কাছে প্রতিটি সিনেমাই ছিল একেকটি অস্ত্র। আর সেই সব অস্ত্র দিয়ে সিনেমা মাধ্যমটিকেই শুধু নয়, সমগ্র পৃথিবীকে পাল্টে দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কতটুকু পেরেছেন, সেই আলোচনা সময়সাপেক্ষ; তবে গোদার যে সিনেমা মাধ্যমটির এক মহাবিস্ফোরণ ও নতুন বাঁকের আরেক নাম হয়ে উঠেছেন, তা নিঃসন্দেহ। তার সিনেমার ভাষা ও ভঙ্গি নিজ ও পরবর্তী প্রজন্মগুলোর অসংখ্য ফিল্মমেকারকেই শুধু নয়, প্রভাবিত করেছিল অগ্রজদেরও।
গোদার ও তার ‘ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ’ ফিল্ম-কমরেডদের উত্থান ষাটের দশকে। সে সময়েই নির্মিত ‘আ ম্যারিড ওম্যান’। এর মধ্যমণি শার্লট নামের এক বিবাহিত তরুণী। বয়স বিশের কোঠায়। স্বামী চল্লিশ ছুঁই-ছুঁই সম্পদশালী লোক, পিয়েরে; সাবেক এই এয়ারফোর্স পাইলটের প্যাশন ব্যক্তিগত বিমানে উড়ে বেড়ানো। প্রেমিক—রোবের নামে এক তরুণ। সকালে প্রেমিকের সঙ্গে আর রাতে স্বামীর সঙ্গে এক বেসামাল ও উ™£ান্ত জীবন কাটতে থাকে শার্লটের। দুজনের মধ্যে কাকে বেছে নেবে—সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে না। একসময় টের পায়, সে গর্ভবতী হয়ে পড়েছে। আর তখন নিজেকে বিশ্বাসঘাতক মনে হতে থাকে তার।
এমন উন্মাতাল সম্পর্ক ঘিরেই ‘আ ম্যারিড ওম্যান’। দৃশ্যত ত্রিভুজ প্রেমের খুবই সাধারণ প্লট মনে হলেও যেহেতু এটি গোদারের সিনেমা, তাই এখানে প্লট কিংবা গল্প কোনো মূল বিষয় নয়। কেননা, প্লট তো বটেই, গতানুগতিক কোনো ফিল্ম-টেকনিকেই আস্থা ছিল না এই মাস্টার ফিল্মমেকারের; তিনি নিরীক্ষার হাতিয়ার ব্যবহার করে নিজের মতো নিরন্তর ভাঙচুর চালিয়েছেন।

তাই ত্রিভুজ প্রেমের পরত পেরিয়ে এই সিনেমাও পরিণত হয়েছে প্রচলিত পুঁজিবাদী সমাজের এক তীব্র অস্বস্তিকর প্রতিমূর্তিতে। বলা হয়ে থাকে, পুঁজিবাদ আমাদের অজান্তেই নিশ্বাস-প্রশ্বাসে ছড়িয়ে পড়ে। সেই বাস্তবতায় কোনো সংকটকাল এসে হাজির হলে তা সহজাত উপলব্ধিক্ষমতায় অনুভব করা চাই; অন্যথায় ব্যক্তিমানুষকে ডুবে যেতে হয় অজ্ঞাত অতলে। ‘আ ম্যারিড ওম্যান’ তারই দাপুটে সাক্ষ্য। টাকার চাদরে ঢাকা কথিত স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনে বস্তুত একঘেয়েমিতে ভুগতে থাকা একজন আকর্ষণীয়া ও অবিশ্বস্ত গৃহিণীর জীবনকে অবাধ যৌনতা, প্রতীক ও গোদারীয় ন্যারেটিভের মোড়কে ঢাকার মাধ্যমে এখানে একই সঙ্গে স্বয়ং জীবন ও জীবনবোধকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন গোদার। তাই মুক্তির এতকাল পরেও এটি ‘ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ’-এর একটি উদাহরণযোগ্য সিনেমা হয়ে রয়েছে।

 আরিফুল ইসলাম

কুইজ
১। জ্যঁ-লুক গোদার কোন ফিল্ম মুভমেন্টে যুক্ত ছিলেন?
[ক] ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ
[খ] চেক নিউ ওয়েভ
[গ] নিউ জার্মান সিনেমা
[ঘ] ইতালিয়ান নিওরিয়ালিজম

২। ‘আ ম্যারিড ওম্যান’ কোন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে?
[ক] সাম্যবাদ
[খ] মৌলবাদ
[গ] পুঁজিবাদ
[ঘ] গণতন্ত্র

৩. গোদার কোন দুটি দেশের নাগরিক ছিলেন?
[ক] কানাডা ও রাশিয়া
[খ] আমেরিকা ও ফ্রান্স
[গ] ফ্রান্স ও রাশিয়া
[ঘ] ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড

গত পর্বের বিজয়ী
১. মেহেদি হাসান, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
২. তামান্না চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
৩. হাসান মাহামুদ, বাড্ডা, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top