skip to Main Content

ফিচার I প্লাস পারফেক্ট

কার্ভি কনেদের জন্য চাই ইনক্লুসিভ ব্রাইডাল ওয়্যার। দৈহিক গঠনকে গুরুত্ব দিয়ে। সচেতন থাকা চাই রং, ফ্যাব্রিক আর অলংকরণের ক্ষেত্রেও। তবেই না দেখাবে সুন্দর, থাকা যাবে স্বস্তিতেও। লিখেছেন সারাহ্ রুশমিতা

বিয়ের উৎসব আয়োজনে কী পরবে কনে? সেটা নিয়ে বিয়ের কইন্যার মনে যেমন স্বপ্ন থাকে, তেমনি থাকে সংশয়ও। বিশেষ এই আয়োজনের তিনি-ই তো মধ্যমণি। তাকে ঘিরেই তো হাজার চোখের নাচন। হাজার খুশি। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইট। আর সব ছাপিয়ে প্রিয়তমর চোখের মুগ্ধতা।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক ডিজিটাল ওয়েডিং ব্র্যান্ড ‘দ্য নট’ প্রকাশ করে ‘ফ্যাশন স্টাডি ফর সাইজ ইনক্লুসিভিটি’। এর মাধ্যমে জানা যায় কনেদের বিয়ের কেনাকাটার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। দেহের মাপ কীভাবে শপিং এক্সপেরিয়েন্সকে প্রভাবিত করে, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় এখানে। দেখা যায়, যেসব কনের বিয়ের পোশাকের সাইজ ১২-এর থেকে বেশি, তারা শপিং বিষয়ে তুলনামূলক বেশি সচেতন।
বিয়ের পোশাক নির্ধারণ করার প্রথম ধাপ হিসেবে বুঝতে হবে নিজের বডি। জানতে হবে দেহের ধরন, অর্থাৎ বডি টাইপ। এ জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে একজন এক্সপার্টের সঙ্গে। বর্তমানে আমাদের দেশেও রয়েছে ব্রাইডাল ওয়্যার ডিজাইন কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ। যার মাধ্যমে একজন প্রফেশনাল ডিজাইনার তার দক্ষতা ও জ্ঞানের মাধ্যমে বুঝে নিতে পারবেন কনের দেহের গড়ন। পরে সে অনুযায়ী পোশাকের নকশা করলে যেমন আয়োজনজুড়ে থাকতে পারবেন স্বাচ্ছন্দ্যে, তেমনি অন্যদের চোখেও কনেকে দেখাবে ফ্ল লেস!
বডি টাইপ
বডি টাইপ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যদি কনের টপ হেভি হয়, তাহলে লেহেঙ্গা চোলিতে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে লেহেঙ্গার স্কার্টটি একটু হেভি ধরনের বেছে নেওয়া যেতে পারে। বেশি ভলিউমের, লম্বা দৈর্ঘ্যরে নকশায় তৈরিগুলো এ ক্ষেত্রে ভালো অপশন। এ ধরনের ডিজাইনে দেহের ওপরের অংশ বেশ খানিকটা হালকা মনে হবে।
আবার, অনেক সময় বুক ও কোমরের ঠিক মাঝখানের অংশে বেশি মেদ জমে থাকে। এই অংশকে বলা হয় মিড রিফ। স্টাইলিশ নেকলাইনের অ্যাপেলিং ডিজাইনের টপ বেছে নিলে মিড রিফ থেকে দৃষ্টি সরে যাবে অন্যদের। মনোযোগের কেন্দ্র হবে না মিড রিফ।
অনেকে দেহের নিম্নাংশের মেদ নিয়ে অস্বস্তিতে থাকেন। এই অংশকে ভারী বলে মনে হলে হালকা করে উপস্থাপনের উপায় এ লাইন কাটের লেহেঙ্গা। অথবা বেছে নেওয়া যেতে পারে শাড়ি। বারো হাত কাপড়ের শাড়ি এ ধরনের দেহকাঠামোতে মানিয়ে যায় বেশ দারুণভাবে।
হাতের ওপরের অংশে যদি বেশি মেদ জমে, তাহলে ভারী হাত থেকে অন্যের দৃষ্টি সরাতে লং হাতার ব্লাউজ, টপস পরা যেতে পারে।
অবসরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে মনোযোগ দিয়ে দেখলে কনেরা বুঝতে পারবেন, দেহের কোন কোন অংশে জমে আছে মেদ। এই অংশগুলো সাধারণত বাহু, বুকের ওপরের অংশ, মিড রিফ থেকে দেহের নিম্নাংশ অবধি। এ ক্ষেত্রে বাস্ট এবং হিপকে হাইলাইট করে নকশা করা পোশাকে প্লাস সাইজ ব্রাইডের সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় সুন্দরভাবে।
নকশা
শাড়ি অথবা লেহেঙ্গা—যেটাই বেছে নেওয়া হোক না কেন, ভার্টিক্যাল নকশাকে প্রাধান্য দিলে দেহের প্রস্থের দিকের অতিরিক্ত মেদের দিকে কম নজর যাবে মানুষের। হরাইজন্টাল নকশার পোশাক দেহকে আরও প্রশস্তভাবে দৃশ্যমান করে তোলে। ভারী পাড় নয়, বরং মাঝারি থেকে চিকন পাড়ের শাড়ি, লেহেঙ্গাতে প্লাস সাইজের কনেদের মানাবে ভালো। জমিনজুড়ে যদি থাকে বুটি অথবা কোনো মোটিফ, তাহলে সেখানেও এই একই বিষয় খেয়াল করা জরুরি। জমিনজুড়ে সিকুয়েন্স চাইলে সেখানেও অতিরঞ্জন এড়িয়ে যেতে হবে। পরিমিততেই পরিতৃপ্তি।
রং
রং একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে প্লাস সাইজ ব্রাইডাল ড্রেস ডিজাইনের ক্ষেত্রে। কালার প্যালেটের লাইট শেডগুলোর থেকে একটু ডিপ শেডগুলো বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায় প্লাস সাইজ ব্রাইডদের জন্য। এই ব্যাকরণ থেকে বেরিয়ে এসে মনোক্রোম কালারেও খুঁজে নেওয়া যেতে পারে বিয়ের পোশাক। লাল, গোলাপি, নীল ছাড়াও প্যাস্টেল শেডের পাউডার পিংক, পিচ, স্যালমন বেছে নেওয়া যেতেই পারে। তবে কয়েকটি রংকে একটু দূরে সরিয়ে রাখাটাই ভালো হবে। যেমন সবুজ, সাদা ও রুপালি। কারণ, এসব রং সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কম্বিনেশন ড্রেস পরতে চাইলে একই টোনের ভিন্ন ভিন্ন কালার শেডগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে। যেমন গোলাপি ও লাল।

ব্লাউজের কাটিং
প্লাস সাইজ ব্রাইডাল ড্রেসে ব্লাউজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে কিছু ব্লাউজ হ্যাকস জানা থাকলে বিয়ের দিনের পোশাকে আরও পরিপাটি দেখাবে। ব্লাউজের নকশায় দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দিয়ে মিড রিফ ঢেকে দিলে এই অংশের মেদ আর নজরে আসবে না। এ ক্ষেত্রে পেপলাম ডিজাইনের ব্লাউজ এই অংশের মেদ ঢেকে প্লাস সাইজ বডিকে আঁটসাঁট আকৃতি দেয়।
হেভি বাস্টের ক্ষেত্রে প্যাডেড ব্লাউজ পরলে চেস্ট আরও বেশি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তাই প্যাডেড ব্লাউজের নকশা বাদ রাখতে পারেন অথবা খুবই থিন প্যাড ব্লাউজ ব্যবহার করা উচিত।
ব্লাউজের রঙের মাধ্যমে ইল্যুশন তৈরি করা যেতে পারে। ন্যাচারাল এবং গোল্ডেন কালারের ব্লাউজ ব্যবহারের মাধ্যমে দেহের উপরিভাগের অংশে ইল্যুশন তৈরি করা যেতে পারে। এতে তুলনামূলকভাবে কম মেদপূর্ণ দেখাবে শরীর।

ওড়না ড্রেপিং
স্কার্ট আর ব্লাউজের মেলবন্ধন সঠিকভাবে হয়ে গেলে আসে ওড়না। কার্ভি কনেদের ওড়না ড্রেপ করার কৌশল নিয়ে আলাদা করে ভাবা যেতে পারে। ওড়নার ডাবল ড্রেপিং প্লাস সাইজ ব্রাইডকে অনন্য করে তুলতে পারে সহজেই। সেই সঙ্গে ঢেকে দিতে পারে বাড়তি মেদও।
ফ্যাব্রিক
লেহেঙ্গা তৈরির ক্ষেত্রে ফ্যাব্রিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, ফ্যাব্রিকের ওপরে পোশাকের গড়ন এবং অলংকরণ—দুই-ই নির্ভর করে। কার্ভি কনেদের জন্য লাইট ওয়েট ফ্যাব্রিক যেমন জর্জেট, শিফন বেছে নেওয়া যেতে পারে। এই দুই ফ্যাব্রিক শরীরকাঠামোকে স্লিম দেখাতে সাহায্য করে। ভেলভেট এবং সিল্ক—এই দুই ধরনের ফ্যাব্রিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। কেননা, এ দুটোই দেহকে ভারী করে তোলে।
কাস্টম মেইড
প্লাস সাইজ ফিগার হয়ে থাকলে যেকোনো দোকান থেকে রেডিমেড পোশাক কিনে নেওয়ার বদলে একটু সময় নিয়ে কাস্টম মেইড করে নিলে তা বরং কনেকে শতভাগ আত্মবিশ্বাস দেবে বিয়ের মঞ্চে। এ সময়ে দেশে বেশ কয়েকজন ব্রাইডাল ড্রেস ডিজাইনার রয়েছেন। তারা কনের সঙ্গে কথা বলে সময় নিয়ে মাপমতো পোশাক তৈরি করেন। ডিজাইন কিংবা সাইজের গ্রামারে আটকে রাখেন না। কনেও সহজে তাদের সঙ্গে নিজের স্বপ্নের বিয়ের পোশাক নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। জানাতে পারেন চাহিদা। তাই এ ধরনের পোশাকে সুন্দর করে মানিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কনে আর ডিজাইনার—দুজনের চিন্তার সন্ধিতে পোশাকটি তৈরি হয় বলে কনে বাড়তি স্বস্তিবোধও করেন।
রেডিমেইড
সময় যদি হয় অল্প, তবে রেডিমেইডেই সই! এমন হলে পোশাক কেনা চাই বড় সাইজের। কোনোভাবেই সাইজ যেন ছোট না হয়। এটা ভাবলে ভুল হবে যে ছোট সাইজের টাইট ড্রেস কনেকে ডায়েটে অনুপ্রাণিত করবে বিয়ের আগে। এমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে; বরং কনে আরও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। বাড়তে পারে ওজনও! লেহেঙ্গা অথবা গাউন—যেটাই হোক না কেন, কিনতে হবে দেহের মাপের থেকে বেশ খানিকটা বড় সাইজের। তারপরে ঠিক বিয়ের তারিখের আগে দর্জি বাড়ি দৌড়। বডি মাপে অল্টার করে নিলেই চলবে। ব্যস!

ইচ্ছার গুরুত্ব
যা কিছু নিজের পছন্দ, তা-ই আপনার জন্য সেরা। কার্ভি কনেদের কথাটি মনে রাখা প্রয়োজন। প্লাস সাইজ ফিগারের জন্য পিছপা হবেন না যেন! কোল্ড শোল্ডার বা অফ শোল্ডার, ব্লাউজ কিংবা লেহেঙ্গা টপের নকশায় ঠিক যেমনটা পছন্দ তা খুলে বলতে হবে ডিজাইনারকে। তিনি ফিগারের মাপ অনুযায়ী যেভাবে মানাবে, সেভাবে তৈরি করে দেবেন।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top