skip to Main Content

টেকসহি I সাসটেইনেবল বিউটি কেবিনেট

টেকসই সৌন্দর্যচর্চার জন্য। সহজ ও সাশ্রয়ী উপায়ে। পরিবেশের ক্ষতি না করাই যার মূল উদ্দেশ্য

বর্তমানের যাপিত জীবনে থ্রো, কিপ, ডোনেটের কনসেপ্ট সবচেয়ে জনপ্রিয়। সাসটেইনেবল বিউটি রুটিনের জন্য কার্যকর। যার মূল উদ্দেশ্য বিউটি ওয়েস্ট কমিয়ে আনা। এতে পরিবেশের ওপর সৌন্দর্যবিশ্বের বিরূপ প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখা যায় ক্ষতির হাত থেকে। আর সাসটেইনেবল বিউটি রুটিনের শুরুটাই হওয়া চাই সাসটেইনেবল বিউটি কেবিনেট দিয়ে। যার প্রতিটি পণ্য ও যন্ত্রপাতিতে প্রাধান্য পাবে পরিবেশ বাৎসল্য। পারফেক্ট লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট।
রিফিল
সৌন্দর্য পণ্য শেষ হয়ে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আবার নতুন একটা কেনা হয়। এতে প্রসাধনবর্জ্য তৈরি হয় ব্যাপক হারে। হয় অপচয়ও। রিফিল করা গেলে পণ্যটির প্যাকেজিং পরিবেশ দূষিত করে না; বরং বারবার ব্যবহারের সুবিধা মেলায় উপকৃত হন ক্রেতা। প্যাকেজিংয়ের দাম দিতে হয় না বলে ব্যয়ও কমে। বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক প্রসাধন ব্র্যান্ডগুলো রিফিল সিস্টেমকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ক্রেতারাও ঝুঁকছেন এ ট্রেন্ডে। বাজারে মিলছে রিফিলেবল লিপস্টিক থেকে ব্লাশ, ন্যাচারাল ডিওডোরেন্ট আর পারফিউমও। সুপ্রিম বিউটি ব্র্যান্ড লে প্রেইরি তাদের ফেইস ক্রিম ‘রেডিয়েন্স কালেকশন’-এ রিফিলের ব্যবস্থা এনে প্রসাধনের নতুন এই ধারায় যোগ দিয়েছে। ফলে ক্রিম শেষ হচ্ছে বলে আগেভাগেই নতুন একটি সংগ্রহে রাখার তাড়াহুড়া করতে হবে না ক্রেতাকে। শুধু শেষ হওয়ার আগে আগে রিফিল করে নিলেই চলবে। জর্জিও আরমানির সুগন্ধির জন্যও মিলছে একই ধরনের সেবা। ডিপতিকিও তাদের ক্রিম ফ্র্যাগরেন্সের জন্য রেখেছে রিফিল সুবিধা।
সলিড সোপ
সাবান তৈরিতে বেশ কিছু উপকরণ দরকার হয়। এগুলোর মধ্যে কিছু উপকরণ পরিবেশ ও মানুষ- উভয়ের জন্যই খারাপ। এসব থেকে স্বস্তি দিতে পারে সলিড সোপ। এটি কার্বন ফুটপ্রিন্ট তৈরি হতে দেয় না। ফলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব কমে আসে।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রসাধনী
যেকোনো প্রসাধন একবার ব্যবহার করে ফেলে দিলে বিউটি ওয়েস্টের পরিমাণ দ্রুতগতিতে বাড়ে। যেমন ধরা যাক সিঙ্গেল ইউজ কটন প্যাডের কথা। এটি ব্যবহৃত হয় মেকআপ তোলার জন্য বা টোনার মাখানোর সময়। জরিপ বলছে, একজন মানুষ গড়ে প্রতি বছর ৭৩০টির ওপর কটন প্যাড ব্যবহার করে। তাহলে ক্ষতির পরিমাণটা কত ভয়াবহ! এভাবে প্রতিদিনই নানা ধরনের সৌন্দর্যবর্জ্য তৈরি করছে বিউটি ইন্ডাস্ট্রি। ফলাফল, ভয়াবহ পরিবেশদূষণ। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রসাধন আর বিউটি টুলের ব্যবহার। কারণ, পুনর্ব্যবহারে প্রসাধন শেষ হয়ে এলে প্যাকেটটি রিফিল করে নেওয়া যায়। আর কটন প্যাড, কটন সোয়াব, ওয়াইপসের বদলে রিইউজেবল, ওয়াশেবল প্যাড কিংবা ফেস ক্লথ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবে বিউটি কেবিনেট, একই সঙ্গে হবে টেকসই। সেই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি কমে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
প্রাকৃতিক পণ্যের ব্যবহার
নিজের জন্য যা কিছু ভালো, সেগুলো প্রকৃতির জন্যও ভালো- এই তথ্য এখনো প্রমাণিত নয়। রাসায়নিক অনেক কিছুই আছে, যা আদতে পরিবেশের ক্ষতি করে। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি প্রসাধন পণ্য যত বেশি ব্যবহৃত হবে, ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার এবং তার প্রভাব কমবে।
উপকারী উপাদান
সৌন্দর্য পণ্য কেনার সময় খেয়াল করতে হবে এর উপাদান তালিকা। নেতিবাচক কিছু আছে কি না, তা যাচাই করে কিনতে হবে বিউটি কেবিনেটের জন্য। যেমন অ্যালুমিনিয়াম ফ্রি ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে অনায়াসে। আবার ধরা যাক সানস্ক্রিনের কথা; যাতে উপস্থিত থাকে অনেক রকম উপাদান। এর মাঝে কিছু কিছু পরিবেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ। এমন কোনো কিছু সানস্ক্রিনে আছে কি না, সেদিকে নজর রাখতে হবে কেনার সময়। তাহলে ত্বকের পাশাপাশি পরিবেশও থাকবে সুন্দর। অনেক প্রসাধনী তৈরির পরে চলে অ্যানিমেল টেস্টিং। অর্থাৎ জীবজন্তুর ত্বকে ব্যবহারের মাধ্যমে এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেয় প্রস্তুতকারকেরা। এটি অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও অনৈতিক প্রক্রিয়া। তাই বিউটি কেবিনেটের জন্য পণ্য কেনার আগে সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। প্রসাধনীটি তৈরির সময় কোনো জীবের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তবেই কেনা উচিত। পণ্যের গায়ে, ব্র্যান্ডের ডিটেইল গুগল করে সহজেই জেনে নেওয়া যায়, এটি ক্রুয়েলটি ফ্রি কি না। এ ছাড়া প্রডাক্টের ইতিবাচক দিকেও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। যাচাই করে দেখতে হবে কতটা কম বর্জ্য উৎপাদন করে থাকে কোন পণ্য।
পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা
প্রকৃতি থেকে নিয়ে ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য তৈরির উদাহরণ তো অনেক। এখন যাচাই করে দেখতে হবে প্রকৃতিকে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও। কোন ব্র্যান্ড কতটা ভাবছে পৃথিবী নিয়ে, সে বিষয়ে ক্রেতার সজাগ দৃষ্টি ব্র্যান্ডকে আরও বেশি সচেতন হতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে অন্য ব্র্যান্ডও উদ্বুদ্ধ হয় পরিবেশবান্ধব ব্র্যান্ডের প্রতি ক্রেতার বিশ্বস্ততা দেখে।
জিরো ওয়েস্ট বিউটি টুল
বিউটি কেবিনেটকে সাসটেইনেবল করে তোলার সবচেয়ে সহজ উপায়। বাঁশের তৈরি মেকআপ টুল। হোক তা হেয়ারব্রাশ, টুথব্রাশ কিংবা মেকআপ অ্যাপ্লিকেটর কিংবা প্যাড। সাসটেইনেবল সৌন্দর্যচর্চার জন্য যথেষ্ট। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টি শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, ত্বকের যতেœও দারুণ উপকারী।
প্রডাক্ট ফ্রি বিউটি ব্রাশ
কোনো ধরনের প্রসাধন ছাড়াই চলবে সৌন্দর্যচর্চা! সে-ও সম্ভব। যদি হাতের নাগালে থাকে কিছু প্রয়োজনীয় বিউটি টুল। যেমন: বডি আর ফেস ব্রাশ। পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি এ ব্রাশগুলো এক্সফোলিয়েশনের জন্য দারুণ। এ ছাড়া ত্বকের রক্তসঞ্চালনে দারুণ সহায়ক। লিমফেটিক ড্রেইনেজ সিস্টেম ঠিক রাখতেও দারুণ। এগুলো শুকনো ও ভেজা- দুভাবে ব্যবহার করা যায় বলে বাড়তি কোনো প্রসাধনের প্রয়োজন পড়ে না এর সঙ্গে। ফলে সেলফ কেয়ার রুটিনে পণ্যের ব্যবহার কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় এটি।

রিসাইকেল কোচের সাজেশন বিউটি কেবিনেটের টেকসই তত্ত্বে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন-
 ব্যবহার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও যদি প্যাকেটে পণ্যের কিছু অংশ অব্যবহৃত থাকে, যা আর ব্যবহার করা হবে না, সেগুলো টয়লেটে ফ্ল্যাশ করে দিলেই সমস্যা শেষ, বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। এতে সমস্যা বরং বাড়ে। পরিবেশ দূষিত হয়। তাই এমন ক্ষতিকর কাজ না করার পরামর্শ মেলে রিসাইকেল কোচের আর্টিকেলে। এর থেকে বরং প্রসাধনসমেত প্যাকেট তুলে রেখে দেওয়া পরিবেশের জন্য খানিকটা কম ক্ষতিকর।
 প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে। হতে হবে দায়িত্বশীল, সতর্ক ও সংকল্পবদ্ধ। যত কম সম্ভব বিউটি ওয়েস্ট তৈরিতে এবং সে অনুযায়ী পণ্য ব্যবহার, ক্রয় ও বাতিল করতে হবে।
 বিউটি ব্র্যান্ডগুলোতে প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে অনেকাংশে পরিবেশ দূষণ কমবে। পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে প্যাকেজিংগুলোরও যথাযথ ব্যবহার হবে। দ্য বডি শপসহ এমন অনেক ব্র্যান্ড আছে যারা এমন সেবা দিয়ে আসছে ক্রেতাদের।
 প্রয়োজনে প্রসাধন- এই ধারণায় অতিরিক্ত কেনাকাটা থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব সরিয়ে রাখার চর্চা করতে হবে। যত কম কেনা হবে, বর্জ্য ঠিক ততটাই কম তৈরি হবে। সময় নিয়ে বিউটি কেবিনেট গোছাতে হবে। যা যা প্রয়োজনীয় নয়, সেগুলো আলাদা করতে হবে। এগুলো কাছের কাউকে উপহার হিসেবে দেওয়া যায়। আর যেগুলোর মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে, সেগুলো বরং বাতিলের বালতিতে ফেলে দিলেই ভালো। প্রতিজ্ঞা করতে হবে, প্রয়োজনের বেশি কিছু আর কেনা যাবে না। কেনার সময় খোঁজ রাখা যেতে পারে রিফিল সুবিধা বিষয়ে। তাহলে ব্যয় যেমন কমবে, তেমনি প্যাকেজিংয়ে পরিবেশদূষণও খানিকটা কমবে। বিউটি কেবিনেট থাকবে পারিপাট্যে সুন্দর। মানুষের সচেতনতায় দূষণের হাত থেকে পরিবেশ কিছুটা হলে রক্ষা পাবে।

 সারাহ্ দীনা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top