ত্বকতত্ত্ব I বেটার টুগেদার
যাকে বলে একদম সুপারহিট জুটি। রূপ রুটিনে এগুলোর যোগ পাল্টে দিতে পারে পুরো বিউটি গেম। মত বিশেষজ্ঞদের
খাবারে পিনাট বাটার আর জেলি থেকে চলচ্চিত্রের রাজ্জাক-কবরী—জুটির চর্চা চিরকালের। পিছিয়ে নেই সৌন্দর্যবিশ্বও। যা হয়তো এখনো অনেকের অজানা। সৌন্দর্য উপাদানের জবরদস্ত এ জুটিগুলোর রয়েছে নানা কার্যকারিতা। যেমন একটি উপাদানে কোনো কিছুর ঘাটতি থাকলে তার জুড়িদার উপাদানটি তা পূরণে সহায়তা করে। আবার কোনো উপাদানের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সামলে উঠতে সাহায্য করে তার জোড়। এমনকি একে অন্যের কার্যকারিতা বাড়াতেও সহায়তা করে এসব উপাদান। খোদ দেশি-বিদেশি সার্টিফায়েড ডার্মাটোলজিস্টরা এসব ইনগ্রেডিয়েন্ট পাওয়ার কাপলের সত্যতা যাচাই করে এ মত দিয়েছেন। সৌন্দর্যসচেতনদেরও জানা থাকা চাই এসব উপাদান সম্পর্কে। তবেই না মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল।
ভিটামিন সি এবং এসপিএফ
এদের বলা হয় সান প্রোটেকশন পাওয়ার কাপল। এসপিএফ বা সানস্ক্রিনের গুরুত্ব তো সবারই জানা। প্রতিদিনই এর ব্যবহার অত্যাবশ্যক। হোক তা রৌদ্রোজ্জ্বল বা বর্ষাস্নাত দিন, ইনডোর বা আউটডোর। সানস্ক্রিন ইজ আ মাস্ট। স্কিন ক্যানসার প্রতিরোধে। আর এতেও যাদের এই উপাদানের গুরুত্ব উপলব্ধি হয় না, তাদের জানা থাকা জরুরি ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার ৭০ শতাংশ দাগছোপ সান ড্যামেজের ফলে সৃষ্ট। যারা প্রতিদিন ব্রড স্পেকট্রাম এসপিএফ-৩০ ব্যবহার করছেন ত্বকে, তাদের ত্বকে ক্ষতির আশঙ্কা কম। কিন্তু এটিও লেভেল আপের উপায় আছে। প্রিয় এসপিএফের সঙ্গে যদি জুড়ে দেওয়া যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি সেরাম, তাহলে মিলবে আরও বেশি কার্যকারিতা। বেটার সান প্রোটেকশন। এই দুটি উপাদান একত্রে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আরও কার্যকর সুরক্ষা দেবে, সেই সঙ্গে বাঁচাবে ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজের হাত থেকে। স্টাডি মোতাবেক শুধু সানস্ক্রিন ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি র্যাডিক্যালকে বাধাগ্রস্ত করতে সক্ষম। এর সঙ্গে যদি ভিটামিন সি যুক্ত করা হয়, এর কার্যকারিতার হার অনেকাংশে বেড়ে যায়। কারণ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ারহাউস হিসেবে পরিচিত ভিটামিন সি ফ্রি র্যাডিক্যালগুলোকে নিউট্রালাইজ করে দেয়। ফলে এ দুটো একসঙ্গে ব্যবহারে সূর্য থেকে সর্বাধিক সুরক্ষা তো মেলেই, সঙ্গে ত্বকের কালচে ভাব, প্রদাহ, ফাইন লাইন, বলিরেখাও কমতে শুরু করে।
ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই
সৌন্দর্য উপাদান হিসেবে ভিটামিন সি যে দারুণ কার্যকর, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এর অস্থিতিশীলতা। ব্যবহারের পর বাতাসের সংস্পর্শে এলে অনেক সময়ই ত্বকে এর রূপ পাল্টে যায়। বাদামি বর্ণ ধারণ করে, যা অক্সিডাইজেশন হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া ভিটামিন সি প্রায়শই ত্বকে অস্বস্তি সৃষ্টির কারণ। কিন্তু সুখবর হচ্ছে, ভিটামিন ই-এর সঙ্গে এর যোগে এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। ভিটামিন সির পাশাপাশি ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে চমৎকার। এ দুয়ের যোগে ত্বক ফটো ড্যামেজ থেকে সুরক্ষিত থাকে। ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে বেঁচে যায়। ভিটামিন সি-এর স্ট্যাবিলাইজার হিসেবে কাজ করে ভিটামিন ই। সুপার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টাল বুস্ট আপ দেয় ত্বকে এই ভিটামিন পাওয়ার কাপল। অ্যান্টি এজিংয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ত্বক করে তোলে তারুণ্যোজ্জ্বল। সূর্য থেকে সুরক্ষা দিতেও জুড়ি নেই এই জুটির।
রেটিনল এবং পেপটাইড
রেটিনল হচ্ছে ভিটামিন এ ডিরাইভড। অর্থাৎ সৌন্দর্য উপাদানটি মেলে এই জনপ্রিয় ভিটামিন থেকে; যা কোষ পুনরুৎপাদনে সহায়ক। বাড়ায় কোলাজেন উৎপাদনের হারও। শক্তিশালী এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুধু কার্যকারিতার জন্য নয়, পরিচিত এর দ্রুত কাজ করার ক্ষমতার জন্যও। ফলে অ্যান্টি এজিংয়ের জন্য এর থেকে ভালো উপাদান হয় না। সেলুলার টার্নওভার করার ক্ষমতা থাকায় হাইপারপিগমেন্টেশন, অ্যাকনে, বলিরেখা আর সূক্ষ্ম রেখার মতো ত্বক সমস্যায় রেটিনল জাদুকরি। ফলে এর নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের টোন, টেক্সচার আর ইলাস্টিসিটিতে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসে। অন্যদিকে পেপটাইড হচ্ছে একধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা ত্বকে প্রোটিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকে উপস্থিত থাকে এই উপাদান। তবে টপিক্যালি অর্থাৎ বাইরে থেকে ত্বকের উপরিভাগে ব্যবহারের ফলে এটি দেহে সংকেত পাঠায়, কোলাজেন উৎপাদনের জন্য। ফলাফল, বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখা কমতে শুরু করে। ত্বক দেখায় টান টান আর পরিপুষ্ট। প্রদাহ কমে যায়। সেই সঙ্গে ত্বকও সুরক্ষা পায় পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে। এ দুটি উপাদানই কোলাজেন উৎপাদনে সহায়ক হওয়ায় এদের মিশ্রণে তৈরি হতে পারে সৌন্দর্যপণ্যের পাওয়ারফুল কম্বিনেশন। তবে ডার্মাটোলজিস্টদের মত, পেপটাইড অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রেটিনলের সহনশীলতা বাড়াতে সক্ষম। কারণ, প্রথম প্রথম রেটিনল ব্যবহারের ফলে ত্বকে শুষ্কতা, লালচে ভাবসহ নানা ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে এর সঙ্গে পেপটাইডের ব্যবহার রুখে দিতে পারে এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো। এই দুটি একসঙ্গে ব্যবহারে মিলবে ডাবল অ্যান্টি এজিং বুস্ট। ত্বকের টোন এবং টেক্সচারেও আসবে পরিবর্তন। পেপটাইড দিন কিংবা রাতের যেকোনো সময় ব্যবহার উপযোগী; কিন্তু রেটিনল রাতে ব্যবহারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। আর এ দুটো ব্যবহার করলে দিনে এসপিএফ ব্যবহার করতে ভুলে যাওয়া চলবে না একদমই।
সিরামাইড এবং হায়ালুরনিক অ্যাসিড
হায়ালুরনিক অ্যাসিডের হাইড্রেটিং পাওয়ার বিষয়ে জানেন না এমন সৌন্দর্যসচেতন এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এটি পানিতে এর ওজনের তুলনায় প্রায় হাজার গুণ বেশি ভার ধরে রাখতে সক্ষম। তাই তো বাজারে হায়ালুরনিক অ্যাসিডে তৈরি সৌন্দর্যপণ্যে সয়লাব। অন্যদিকে সিরামাইড সম্পর্কে মানুষ একটু কম জানলেও এর গুরুত্বও এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। ত্বককে ভালোভাবে ময়শ্চারাইজড রাখার পাশাপাশি সুরক্ষা দেয়ালের রক্ষী হিসেবে কাজ করে সিরামাইড। তাই এ দুটো সৌন্দর্য উপাদানের লেয়ারিং এককথায় ত্বকের জন্য অনবদ্য। তাই প্রথমে হায়ালুরনিক অ্যাসিড সেরাম মেখে নিয়ে এর ওপর সিরামাইড ময়শ্চারাইজারের ব্যবহার ত্বকে জোগাবে জরুরি আর্দ্রতা। তা ধরে রাখবে দীর্ঘ সময়ের জন্য। সেই সঙ্গে ত্বকের সুরক্ষা দেয়ালকেও রাখবে শক্তিশালী।
i জাহেরা শিরীন
মডেল: সাফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল