এই শহর এই সময় I শিল্পীত্রয়
১৯ মার্চ শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় মাসব্যাপী শাহাবুদ্দিনের একক চিত্র প্রদর্শনী। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘শান্তি’ শিরোনামের এই প্রদর্শনী ২০১৫ সালে ভারতের কলকাতায় প্রদর্শিত হয়, যেটি উদ্বোধন করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। শিল্পী শাহাবুদ্দিনের চিত্রকর্মে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা, তাঁর চেতনায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের উদ্দীপনা। তাঁর চিত্রকর্ম ধারণ করেছে তিনটি বিষয়: বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিশ্ব শিল্পকলা। তাঁর চিত্রকর্মে শক্তি, গতি আর পেশিবহুল ফিগারের উপস্থাপনা। প্যারিসে অবস্থানরত এই শিল্পী বিশ্বজুড়ে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশকে, তাঁর চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে। তিনি সম্ভবত একমাত্র শিল্পী, যিনি তাঁর শিল্পীজীবনের শুরু থেকে আজ অবধি, সব সৃষ্টি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ২৩ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত হয়ে গেল সোমা সুরভী জান্নাতের ধূসর রেখাবৃত্তি নামক চিত্র প্রদর্শনী। গ্যালারিতে ঢুকেই একধরনের শুভ্রতার আবেশ অনুভূত হয়। গ্যালারিজুড়ে পেন ড্রয়িং ও স্কেচের কাজগুলো সাদা ফ্রেমে প্রশান্তিকর। কম্পোজিশনগুলো বিষয়ভিত্তিক। বাস্তব ও কল্পনার মিশ্রণে অন্যতর ভাবনার জগৎ তৈরি করেছেন শিল্পী। ছবির সঙ্গে দর্শকের সংযোগ ঘটানোর জন্য তিনি ফ্রেমকে রেখেছেন উন্মুক্ত। সচেতনভাবেই কোনো কাচ বা আবরণ দেয়া হয়নি। হ্যান্ড মেইড পেপারের উপর শান্তিনিকেতনের সাঁওতালপল্লির জীবনযাপন, সংস্কৃতি, তাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক- সবকিছুই তুলে ধরেছেন শিল্পী। পেন ব্যবহার করে, ফিগারেটিভ ফর্ম ও প্রাণী, গাছপালা ইত্যাদির উপস্থাপনায় প্রতিটি চিত্রকর্ম হয়ে উঠেছে একেকটি গল্প। অন্যান্য কাজ, যেমন দ্য হিডেন বাউন্ডারি হিজড়াদের নিয়ে রচিত। তিনি চেয়েছিলেন তাদের ভাবনা, তাদের জীবনধারা সাধারণ মানুষের মনে রেখাপাত করুক। এটি ছিল ইনস্টলেশনধর্মী কাজ। সেখানেও শিল্পী একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দুদিকের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছেন।
কী এক আবেগে প্রতিটি মুখ যেন কিছু বলছে চোখের ভাষায়, অপলক তাকিয়ে আছে। এমনই নীরব প্রশ্নবোধক উপস্থাপনে বলিষ্ঠ শিল্পী মোহাম্মদ ইকবালের শিল্পকর্মগুলো। ধানমন্ডির এজ গ্যালারিতে ২১ এপ্রিল শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী, চলবে ৫ মে পর্যন্ত। মোহাম্মদ ইকবাল বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন একজন শিল্পী। তাঁর এবারের প্রদর্শনীর বিষয় ছিল শিশুদের অবহেলিত, নির্যাতিত অবস্থান। তাদের অভিব্যক্তি ভরা চোখ, মুখের আলো-আঁধারির খেলা যেন বোঝাতে চাইছে ভয়, দুঃখ, দুর্দশা। আবার এত কিছুর পরেও নতুন শুভ ভোরের অপেক্ষা। পৃথিবীর সব ধ্বংসের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ শিশুরা। এরই প্রতিবাদস্বরূপ তিনি বেছে নিয়েছেন শিশুদের অবয়ব। এ ছাড়া তাঁর চিত্রকর্মে রয়েছে বাউলদের প্রতিকৃতি, যারা এই দেশের আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। তাঁর চিত্রকর্মে ফুটে ওঠে মানবিকতার দর্শন।
তিনি ক্যানভাস নির্মাণ করেছেন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে। যাকে বলে গ্যাসো পদ্ধতি। সমপরিমাণ পানি, অ্যারাবিক গাম, তিসির তেলের মিশ্রণে প্রলেপ দিয়ে তৈরি করেছেন তাঁর চিত্রপটকে, যেন ফাঙ্গাস না আসে। প্রতিটি প্রদর্শনীতে এক নতুন ভাবনা নিয়ে হাজির হন এই শিল্পী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের অধ্যাপক। এটি ছিল তাঁর ৪২তম একক চিত্র প্রদর্শনী।