কুন্তলকাহন I কেশরস
চুলের যত্ন নিতে হয় ধরন মেনে। কোঁকড়া চুল স্টাইলিংয়ের উপযোগী করে তোলার জন্য চাই বিশেষ পরিচর্যা
চুলের ধরন কী, তার চেয়ে জরুরি হলো চুলের স্বাস্থ্য কেমন? চুল কি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝরছে? এটিও জেনে রাখা জরুরি যে চুলের যত্ন কেবল বাইরে থেকে নয়, ভেতর থেকেও নিতে হয়। কেননা এর টিকে থাকা ও বৃদ্ধিতে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের প্রভাব রয়েছে। তাই কী খাচ্ছেন সেদিকে মনোযোগ দেয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর, মসৃণ ও পরিপাটি চুল পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জুস কাজে লাগতে পারে।
খাদ্যে কাক্সিক্ষত পুষ্টি যোগ করার সেরা উপায় হতে পারে জুসিং। কঠিন কোনো রেসিপি অনুসরণ বা খাবার প্রস্তুত করার ঝামেলা এড়িয়ে সহজলভ্য কিছু উপকরণের সাহায্যে পেতে পারেন সুন্দর ঝলমলে চুল। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যকর খাবার সুস্থ জীবনযাপনের চাবিকাঠি। অন্যদিকে, অস্বাস্থ্যকর খাবার শরীরের ক্ষতি তো করেই, তাতে চুলও বাদ পড়ে না। চুলের দ্রুত বৃদ্ধি, মসৃণ ও মজবুত করে তোলার জন্য কিছু ফলের জুস অতুলনীয়।
শসা-গাজরের জুস
চারটি গাজর, একটি আপেল, একটি শসা ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ব্লেন্ড করে নিন। প্রয়োজনে কিছুটা পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। এই রেসিপি হালকা, তবে বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। এতে সঙ্গে থাকা আপেল হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি দ্রুত পুষ্টি শোষণে সহায়তা করবে। শসা পটাশিয়াম, সিলিকা, সালফার ও ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ। চুলের বৃদ্ধিতে এই খনিজগুলো বেশ সহায়ক। শসার বেশির ভাগই পানি, যা চুল ও শরীর হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। গাজর প্রি-কার্সার ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। আসলে এতে যে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে, তা শরীরে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। এটি সুস্থ রাখতে ও চুলের উন্নত গঠনের জন্য খুব জরুরি। মাথার ত্বক কন্ডিশন ও ময়শ্চার রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন এ সুস্থ হেয়ার ফলিকল ও স্ক্যাল্প গঠনের মাধ্যমে চুল ঘন ও মজবুত করে তুলতে পারে। চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করতেও এটি বেশ কার্যকর।
লিকোফিন বুস্টার
চারটি গাজর, দুটি টমেটো, একটি শসা, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস। এগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন।
এটিও শসা-গাজরের কম্বো। কিন্তু লিকোফিনের সংযোজনে এটিকে একটি অ্যান্টি-এজিং মিশ্রণও বলা যেতে পারে।
বিটরুট
চারটি গাজর, একটি শসা, একটি ছোট বিটরুট, খোসাসহ চার ভাগের এক ভাগ লেবু ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
ভালো রক্তসঞ্চালনের জন্য বিট পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে এবং পাকস্থলীর কাজে সহায়তা করে। এতে চুলে সহজে পুষ্টি পৌঁছায়। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টিগুণ এতে বিদ্যমান।
স্ট্রবেরি ব্লাস্ট
বারোটি তাজা স্ট্রবেরি, দুটি গাজর, একটি শসা ও একটি লাল আপেল ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
স্ট্রবেরিতে রয়েছে ভিটামিন সি ও উচ্চমানের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। শরীরে প্রোটিন বৃদ্ধিতে এটি সহায়তা করে এবং চুলেও প্রোটিন গঠন ও বৃদ্ধির উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।
পেয়ারার জুস
বিচি ছাড়া দুটি পেয়ারা, চারটি গাজর, একটি সবুজ আপেলে প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। পেয়ারায় আছে ভালো মানের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন ধরনের খনিজ। এর জুস থেকে পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যকর আয়রন ও ক্যালসিয়াম। এই খনিজগুলো চুল ঝরা রোধ ও মজবুত করতে সহায়তা করে।
পেঁয়াজ-শসার জুস
একটি পেঁয়াজ, দুটি শসা, চারটি গাজর, খোসাসহ চার ভাগের এক ভাগ লেবু।
পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত ও হেয়ার ফলিকলে প্রচুর পুষ্টির জোগান দিতে সহায়তা করে। এতে চুল মসৃণ ও নমনীয় হয়ে ওঠে।
ধনেপাতা ও শসার জুস
দুটি শসা, এক মুঠো ধনেপাতা ও প্রয়োজনমতো পানি একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।
শসা চুলের সঠিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই জুসে যে এনজাইম রয়েছে, তা চুল ঝরা রোধে সহায়তা করে ও হিমোগ্লোবিনের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
ঝলমলে ও ম্যানেজেবল চুল চাইলে প্রতিদিন এই জুসগুলোর যেকোনোটি এক গ্লাস পান করা শুরু করুন। এটি দেবে একমাথা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল। যা একেবারে ভেতর থেকে মজবুত। হ্যাপি জুসিং।
তাসমিন আহমেদ
মডেল: সামিরা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন