এই শহর এই সময় I শিল্প সহযোগ
গ্রীষ্মের দাবদাহের সঙ্গে মৌসুমি ঝড়ের হুংকার। কালেভদ্রে কয়েক পশলা বৃষ্টি। এমনই আবহাওয়ায় রাজধানীর শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঞ্চলে মাসজুড়ে ছিল নানা আয়োজনের বৈচিত্র্যময় পসরা।
বাংলাদেশের শিল্পকলা নিজস্ব পরিচয়ে বেশ সমৃদ্ধ। আর চিত্রকলায় এই সমৃদ্ধি অর্জনে যারা রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা, আমিনুল ইসলাম তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। আশি বছর [৭ নভেম্বর ১৯৩১ থেকে ৮ জুলাই ২০১১] আয়ু পাওয়া এই প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী তার সৃজনশীল জীবনে জলরং ও তেলরঙের পাশাপাশি ম্যুরাল, মোজাইক, কোলাজ ও অন্যান্য মাধ্যমেও দেখিয়ে গেছেন শৈল্পিক দাপট। পরিণত হয়েছেন আধুনিক শিল্প আন্দোলনের অন্যতম পুরোধায়। ১৯৭০ থেকে ২০০০ সাল সময়কালে তার আঁকা বেশ কিছু রেখাচিত্রের ড্রইং নিয়ে ১৬ মে সন্ধ্যায় বেঙ্গল শিল্পালয়ে শুরু হয়েছে বিশেষ প্রদর্শনী; ‘অর্গানিসিটি’ শিরোনামে। উদ্বোধন করেন সাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই। কিউরেটর চিত্রশিল্পী ওয়াকিলুর রহমান। শিল্প সংগ্রাহক আবুল খায়েরের সংগ্রহে থাকা এই রেখাচিত্রগুলোর প্রদর্শনী ৮ জুলাই পর্যন্ত চলবে; প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা। প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। রেখাচিত্রের এই সংকলিত প্রদর্শনী বাংলাদেশের শিল্প-আন্দোলনের আধুনিকতাকে ফিরে দেখার একটি প্রয়াস বলেই দাবি আয়োজকদের। পাশাপাশি, বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত আমাদের দেশের শিল্পকলা আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নির্মাণ ও সাংস্কৃতিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষ্যও দিচ্ছে।
‘করিস নে লাজ, করিস নে ভয়/ আপনাকে তুই করে নে জয়’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণী। একে ধারণ করে ১২ মে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে, রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বসে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবের ৩৪তম আসর। চলে দুই দিন। প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ। শুরুতে রবীন্দ্রসংগীত ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে’-এর সঙ্গে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যনন্দনের শিল্পীরা। এরপর রবীন্দ্রসংগীত কণ্ঠে নিয়ে উপস্থিত সবাই প্রবেশ করেন মিলনায়তনে। সেখানকার মূল মঞ্চে ১৬২তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে উৎসবের মূলপর্ব শুরু হয়। সম্মিলিত ও একক সংগীতের পাশাপাশি চলে বিশ্বকবির কবিতা আবৃত্তি। দেওয়া হয় গুণীজন সম্মাননা।
প্রয়াত ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে রাজধানীর নাট্যশালার মূল হল, পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তন ও স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সপ্তাহব্যাপী নাট্যোৎসব। এবারের উৎসবের স্লোগান, ‘সুন্দরের তীর্থ পথে শতবর্ষ পরেও তাহারে আমরা পরম পাথেয় মানি’। পদাতিক নাট্য সংসদের আয়োজনে তাতে ১৭টি নাট্যদল অংশ নেয়। এগুলোর মধ্যে ছিল দেশের নাট্যকেন্দ্র, আরণ্যক, প্রাচ্যনাট, লোকনাট্য দল, সুন্দরম, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, অনুস্বর, থিয়েটার ফ্যাক্টরি, শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র, বটতলা, নাট্যম র্যাপার্টরি, ম্যাড থেটার এবং ঢাকা পদাতিক; ভারতীয় নাট্যদলের মধ্যে চাকদাহ নাট্যজন, কসবা অর্ঘ, টেন্থ থিয়েটার এবং বাগুইহাটি নৃত্য মন্দির। ১২ মে শুরু হয়ে উৎসব চলে ১৮ মে পর্যন্ত। দর্শকেরা প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে উপভোগ করেন মোট ২১টি নাটক।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ