skip to Main Content

কুন্তলকাহন I স্কুইশ টু কন্ডিশ

কার্লি চুলের জন্য বিশেষ কন্ডিশনিং রুটিন। পর্যাপ্ত আর্দ্রতার জোগান দিয়ে সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলার চমকপ্রদ প্রক্রিয়া

সৌন্দর্যচর্চার একটা বড় অংশ রয়েছে চুলের দখলে। আর তা যদি হয় কোঁকড়া, তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। অধিক সময়ও ব্যয় করতে হবে। কোঁকড়া চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি বা ময়শ্চার ধরে রাখাও স্ট্রেইট চুলের তুলনায় অনেক কঠিন। তবে এই কঠিন কাজ সহজ করতেই আবির্ভাব ‘স্কুইশ টু কন্ডিশ’ পদ্ধতির।
কোঁকড়া চুলের নিজস্ব প্যাটার্ন আর ঘনত্বের ফলে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কিংবা বাইরে থেকে দেওয়া কোনো তেলই সহজে গভীরে পৌঁছাতে পারে না। ফলাফল, চুলের শুষ্কতা আর রুক্ষতা। কোঁকড়া চুলের আনাচ-কানাচে প্রয়োজনীয় পুষ্টি আর ময়শ্চার পৌঁছাতে তাই অনুসরণ করতে হবে সব বিশেষ প্রক্রিয়া। এমনই একটি পদ্ধতি স্কুইশ টু কন্ডিশ, সংক্ষেপে এসটুসি। কার্লি হেয়ার কমিউনিটিতে বেশ জনপ্রিয়। এই কৌশল কার্লগুলোকে ডিফাইন করে এবং চুলের রুক্ষতা দূর করে কোমল ভাব নিয়ে আসে। তবে কীভাবে কার্যকর হবে এই কৌশল, আর চুলে কতটুকুই-বা খাপ খাবে, জেনে নিতে হবে এই সবকিছুর খুঁটিনাটি।
স্কুইশ টু কন্ডিশ চুলের এমন একটি কন্ডিশনিং পদ্ধতি, যা কার্লগুলোতে আরও বেশি আর্দ্রতা জোগাতে সাহায্য করে। ধুয়ে ফেলার পরেও হাইড্রেটেড ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখে। কোঁকড়া চুলের যে কেউ জানেন, এ ধরনের চুলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখা। স্কুইশ টু কন্ডিশ মূলত হেয়ারস্টাইলিস্ট এবং কার্ল বিশেষজ্ঞ মেলিসা স্টিটসের উদ্ভাবন। এটি এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় কার্ল-কন্ডিশনার পদ্ধতিগুলোর একটি, যা ইন্টারওয়েবগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে এলেই বোঝা যাবে। প্রায় সব ধরনের কার্লি কিংবা ওয়েভি চুলের জন্যই এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর। অর্থাৎ এই কৌশল মেনে খুব সহজে চুলে আর্দ্রতার মাত্রা বাড়ানো যায়; দূর করা যায় রুক্ষতা, নেতিয়ে পড়া ভাব কিংবা আলুথালু হয়ে থাকার সমস্যা। তবে অবশ্যই এর সঠিক প্রক্রিয়া জানতে হবে। এটি চুলে লিভ ইন কন্ডিশনারের ব্যবহারও কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
স্কুইশ টু কন্ডিশ এমন একটি কৌশল, যার মাধ্যমে পানি ও কন্ডিশনারের ব্যবহারে চুলকে হাইড্রেটেড করা হয়। স্কুইশ বা স্কুইশিং মানে চুল হাতের মুঠোয় নিয়ে চেপে চেপে পানি ও কন্ডিশনার চুলের গভীরে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা। অন্যদিকে কন্ডিশ হলো কন্ডিশনারের সংক্ষিপ্ত রূপ। পানি কন্ডিশনারকে পাতলা করে এবং যখন হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দেওয়া হয়, তখন খুব সহজে চুলের গভীর পৌঁছে যেতে পারে। নিচের ধাপগুলো মেনে খুব সহজে এই প্রক্রিয়া সেরে নেওয়া যাবে কার্লি চুলে:
ওয়াশ
এই প্রক্রিয়ার শুরুতে চুল খুব ভালোভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে। ব্যবহার করতে হবে কার্ল ফ্রেন্ডলি যেকোনো ভালো ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু। খুব ভালোভাবে এবং সময় নিয়ে চুল মাসাজ করে ধুয়ে নিতে হবে, যেন অতিরিক্ত তেল কিংবা ময়লা দূর হয়ে যায়, স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়ে এবং এসটুসির জন্য চুল ঠিকঠাক প্রস্তুত হতে পারে। এরপর চুল খুব ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। শ্যাম্পু ধুয়ে যাওয়ার পরেও ততক্ষণ চুলে পানি দিতে হবে, যতক্ষণ না এটি খুব ভালোভাবে ভিজে যায়।
কন্ডিশন
ভেজা চুলে অনেক বেশি পরিমাণে কন্ডিশনার মাখিয়ে নিতে হবে। এমনভাবে যেন একটা চুলও বাদ না পড়ে। চুলের ঘনত্ব আর কার্ল বুঝে কন্ডিশনার ব্যবহার প্রয়োজন। যতক্ষণ না চুল পিচ্ছিল হয়, ততক্ষণ কন্ডিশনার মাখাতে হবে। পরামর্শ দেওয়া হয় সিলিকনমুক্ত কন্ডিশনার ব্যবহারের। কারণ, সিলিকন চুলে আটকে যেতে পারে, যা পরবর্তীতে ধুয়ে নেওয়া কঠিন হবে। সিলিকনমুক্ত শ্যাম্পু চুলে অতিরিক্ত কোনো বিল্ডআপ না করেই খুব সহজে গভীরে পৌঁছে যেতে পারে।
ডিট্যাংগেল
চুল স্কুইশ করার আগে, খুব ভালোভাবে চুলের জট ছাড়ানো প্রয়োজন। আলতোভাবে আঙুল দিয়েই সেরে নেওয়া যাবে কাজ। ডিট্যাংগলিং ব্রাশও ব্যবহার করা যেতে পারে। শুরুতে চুলের গোড়ার দিকের জট ছাড়িয়ে নিতে হবে। গোড়ার জট খুব ভালোভাবে ছুটে গেলে এরপর চুলের মাঝের অংশ এবং সবশেষে চুলের আগার জট ছাড়াতে হবে। সবশেষে দুই থেকে তিনবার গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত চুল আঁচড়ে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে, আর কোনো জট নেই। জট ছাড়ানোর জন্য চুল আঁচড়ানোর এই প্রক্রিয়া কন্ডিশনারকে চুলের গভীরে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
সেটেল
বেশির ভাগ স্কুইশ টু কন্ডিশ টিউটরিয়ালে মাথা উল্টো করে সব চুল সামনের দিকে এনে স্কুইশ করতে বলা হয়। এই পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ ও স্বাভাবিক। তবে এটি সবার ক্ষেত্রে কাজ করবে, তা নয়। কেউ কেউ আবার চুল দুই কাঁধে ছড়িয়ে রেখে এসটুসি করতে পছন্দ করেন। কেউ আবার সামনে বা পেছনের দিকে ঝুঁকেও এটি করতে স্বচ্ছন্দ। সুতরাং বলা যায়, স্কুইশিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। মানানসইটি বেছে নিলেই চলবে। শুধু মাথায় রাখতে হবে, পদ্ধতি যা-ই হোক, চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত যেন স্কুইশিং সেরে নেওয়া যায়।
স্কুইশ
কাঙ্ক্ষিত পজিশন বেছে নেওয়ার পর হাত দিয়ে কাপিং করে পানি তুলে চুলে চাপ দিতে হবে। অথবা প্রবাহিত পানির নিচে চুল রেখেও স্কুইশ করা যায়। চুলের গোড়া থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে আগার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই স্কুইশিং কিউটিকল ভেদ করে চুলের গভীরে কন্ডিশনার পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। স্কুইশ করতে করতে একটা সময় চুল মসৃণ হতে শুরু করবে। না হলে আরেকটু বেশি পরিমাণে কন্ডিশনার নিয়ে আবারও পানি দিয়ে স্কুইশ করতে হবে। যতক্ষণ না চুল স্বাভাবিকের চেয়ে মসৃণ হয়, এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।
রিনস অ্যান্ড স্টাইল
স্কুইশিংয়ের পরে প্রয়োজন পড়লে আরেকবার আঙুল বা ব্রাশের সাহায্যে জট খুলে নেওয়া যায়। তারপর কার্লগুলোকে আরও সুন্দর দেখানোর জন্য চুলকে স্ক্রাঞ্চ করে নেওয়া যায়। এরপর চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে, যাতে স্কুইশিং প্রক্রিয়ার পর অবশিষ্ট কন্ডিশনার ধুয়ে যায়। স্ক্যাল্প খুব বেশি তৈলাক্ত হলে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। আর যদি শুষ্ক হয়, তবে কিছুটা কন্ডিশনার রেখে দেওয়া যেতে পারে চুলের লিভ ইন কন্ডিশনার হিসেবে। মাইক্রোফাইবার তোয়ালে অথবা একটি সুতির টি-শার্ট ব্যবহার করে চুলের অতিরিক্ত পানি চেপে চেপে মুছে নিতে হবে। টেরিটাওয়েল ব্যবহার না করাই শ্রেয়; কারণ, এ ধরনের তোয়ালে চুলকে ফ্রিজি করে তোলে।
শুকানোর পরে, কোঁকড়া চুলের স্বাভাবিক রুটিন চালিয়ে যেতে এবং চুল স্টাইল করে নিতে হবে মনমতো।

 শিরীন অন্যা
মডেল: শ্রাবণী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top