ত্বকতত্ত্ব I প্রয়োজন পক্ষকাল
প্রথম সপ্তাহে ডিটক্সিং আর ক্লিনজিং। দ্বিতীয় সপ্তাহের পুরোটাই হাইড্রেটিং, সুদিং আর হিলিং। ব্যস! বিয়ের আগে পারফেক্ট ত্বকের জন্য
হাইজিন চেক
ব্যাড বিউটি হাইজিন? তাহলেই সেরেছে! যতই রুটিন মেনে ত্বক ঘষামাজা করা হোক না কেন, লাভ হবে না কিচ্ছুটি। যথা যত্নে কী করা প্রয়োজন, তা যেমন জানতে হবে; ঠিক তেমনি কোনটা করা যাবে না, তা-ও থাকা চাই নখদর্পণে। নইলে মনের অজান্তে বা অসাবধানতাবশত ময়লা, তেল আর দূষণ আবার ফিরে আসবে ত্বকে। ত্বকের লোমকূপগুলোকে বন্ধ করে দেবে। ফলাফল—অ্যাকনে, ব্রণ, ব্রেকআউট। মাত্র তিন ধাপে হাইজিন মেইনটেইন করা সম্ভব। শুরু না হয় হোক বিয়ের বিশেষ দিনটি ঘিরেই।
ঘুমানোর সময় প্রাকৃতিকভাবেই দেহের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। সঙ্গে শুরু হয় ত্বক সারাইয়ের প্রক্রিয়া। বিউটি স্লিপ তো আর এমনি এমনিই বলা হয় না। এই পুরো সময় দেহ থেকে নির্গত ঘাম আর মৃতকোষের মতো ময়লা বালিশের কাভারে আর বেডশিটে স্থানান্তরিত হয়। এগুলো নিয়মিত ধোয়া না হলে জমতে শুরু করে, আস্তর পড়ে যায়। পরে এ ময়লাগুলোই আবার ত্বকের সংস্পর্শে আসে। একই ঘটনা ঘটতে পারে চুলে ব্যবহৃত প্রোডাক্টের অবশিষ্টাংশ আর জমতে থাকা ময়লার ক্ষেত্রেও। তাই সপ্তাহে নিদেনপক্ষে একবার এগুলো ধোয়া খুব জরুরি। আর সপ্তাহের মাঝে একবার উল্টে দিতে হবে, পরিষ্কার দিক ব্যবহারের জন্য।
মেকআপ ব্রাশ পরিণত হতে পারে ময়লা আর ব্যাকটেরিয়ার ব্রিডিং গ্রাউন্ডে, যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা না হয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সপ্তাহে অন্তত একবার প্রতিটি ব্রাশ ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া চাই। আর স্পঞ্জ পরিষ্কার করতে হবে প্রতিবার ব্যবহারের পর।
খাবার খাওয়ার আগে যেমন হাত ধুতে ভোলেন না, ঠিক একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে মেকআপ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে তবেই ত্বক সাজানোর কাজ শুরু করার অভ্যাস কিন্তু খুব কাজের হবে।
প্রতিদিনকার পরিচর্যায়
একদম বেসিক কিন্তু ক্লিনজিং ভালো ত্বকের অন্যতম স্টেপিং স্টোন। ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার না করা হলে লোমকূপ সংকুচিত হয়ে, বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে। ব্ল্যাকহেডপ্রণ হয়ে পড়ে ত্বক। তাই ত্বকের জন্য সঠিক ফর্মুলার ক্লিনজার বাছাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ফোম, মিল্ক, অয়েল আর জেল সবচেয়ে কমন। রাতে সব সময় ডাবল ক্লিনজিং করা উচিত, ময়লা আর মেকআপ একদম গভীর থেকে পরিষ্কারের জন্য। প্রক্রিয়া একদমই জটিল নয়। প্রথমে ক্লিনজিং অয়েল দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নেওয়া চাই। তারপর আবার ত্বক পরিষ্কার করতে হবে ফোম, মিল্ক অথবা জেল ফর্মুলার ক্লিনজার দিয়ে। এতে করে ত্বক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিষ্কার হবে। ময়লা থেকে মেকআপ—পরিষ্কার হয়ে যাবে ত্বক থেকে।
তারপর করতে হবে টোনিং। যা ত্বকে মেকআপের কোনো অবশিষ্টাংশ থাকলে তা দূর করবে। ত্বকের পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য বজায় রাখবে। লোমকূপগুলোকে টোন করে, দৃঢ় করে তুলবে। ফলে কোনো দূষণ আর ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারবে না। সকালে লাইটওয়েট ক্ল্যারিফায়িং টোনার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা, আর রাতে আরেকটু বিশেষ কিছু। ত্বক বুঝে তবেই টোনার বেছে নিতে হবে। এতে কার্যকর ফল মিলবে, অস্বস্তির হাত থেকেও বাঁচবে।
প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার জোগান ছাড়া ত্বক কখনো পরিপূর্ণ পুষ্টি পায় না। বিলাসী কোনো পণ্য ব্যবহার করতে হবে—ব্যাপারটা একদমই তেমন নয়। তবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিকটা বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেলতেলে, ব্রণযুক্ত ত্বকের জন্য লাইটওয়েট জেল ময়শ্চারাইজার আর শুষ্ক ত্বকের জন্য খানিকটা ভারী, ক্রিমি ফর্মুলারগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। দিনে কমপক্ষে দুবার ময়শ্চারাইজারের ব্যবহার জরুরি, ত্বক তৈলাক্ত হলেও। নতুবা এই ধাপ বাদ দেওয়ার ফলে ক্ষতি পোষানোর জন্য ত্বক আরও বেশি তেল উৎপাদন শুরু করবে, আরও তেলতেলে হয়ে উঠবে চেহারা।
যারা এখনো প্রতিদিন এসপিএফ ব্যবহার করছেন না, তাদের আজ থেকেই শুরু করা উচিত। ত্বক ভালো রাখার জন্য কিছু করতে চাইলে এটাই হতে পারে গেম চেঞ্জিং স্টেপ। কারণ, ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার শতকরা ৯০ শতাংশ ব্যক্তি নিয়ন্ত্রিত এবং সান এক্সপোজারের সঙ্গে এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। কমপক্ষে এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে প্রতিদিন। তাতে যদি থাকে ফাইভ স্টার ইউভিএ রেটিং, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। গুয়াশার মতো প্রাচীন ত্বকচর্চার রীতি যোগ করা যেতে পারে প্রতিদিনকার রূপচর্চার রুটিনে। এটি ব্যবহারে ত্বকের ট্র্যাপড এনার্জি মুক্ত হয়। লং স্ট্রোকে করা ফেশিয়াল মাসাজের এ ফর্ম লিমফেটিক ড্রেইনেজ সিস্টেমকেও উদ্দীপ্ত করে। ফলাফল—টক্সিন নির্গত হয় ত্বক থেকে, ফোলা ভাব কমায়। দুই সপ্তাহে প্রতিদিন এর ব্যবহারে ত্বক দেখাবে টান টান ও সুডৌল। এ ছাড়া ক্রম মেনে ত্বকচর্চার পণ্য ব্যবহার খুব জরুরি। নতুবা হিতে বিপরীত ঘটতেই পারে।
প্রথম সপ্তাহে
করতে হবে এক্সফোলিয়েশন। তবে প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে দুবারই যথেষ্ট। দুই ধরনের এক্সফোলিয়েটর রয়েছে—কেমিক্যাল ও ফিজিক্যাল। বেশির ভাগ ত্বক বিশেষজ্ঞই বর্তমানে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহারের পক্ষে। এগুলো কোমলভাবে ত্বকের মৃতকোষ দূর করে। লোমকূপ পরিষ্কার করে গভীর থেকে, ত্বকের কোনো ক্ষতি না করেই।
প্রথম সপ্তাহে যেহেতু মূল উদ্দেশ্য ত্বকের বিশুদ্ধিকরণ এবং ডিটক্সিং; সে ক্ষেত্রে ক্লে মাস্ক আদর্শ। এটি লোমকূপের বাড়তি তেল আর দূষণ নিঃসরণে দারুণ কার্যকর। প্রথম সপ্তাহে রুটিনে যোগ করা যায় ভিটামিন সি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর থাকায় এর ব্যবহার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে। কমাবে দাগছোপ। যাদের ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশনের সমস্যা রয়েছে, ভিটামিন সি যুক্ত পণ্যের ব্যবহার তাদের জন্য মাস্ট। ব্রণের দিকেও দিতে হবে বাড়তি নজর। এ ক্ষেত্রে ড্রায়িং লোশন কাজ করবে চটজলদি। ঘুমানোর আগে আক্রান্ত স্থানে দিয়ে দিতে হবে, সকালে পরিবর্তন টের পাওয়া যাবে। পিম্পল প্যাচও দারুণ সল্যুশন হতে পারে।
দ্বিতীয় সপ্তাহে
হিলিং ও হাইড্রেশন—এ সপ্তাহের মূল উদ্দেশ্য। তাই স্লিপিং মাস্ক এ ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। কোরিয়ানদের সাধারণত প্রতিদিন এটি ব্যবহারের রীতি থাকলেও সপ্তাহে তিনবার ব্যবহারে মিলবে কাঙ্ক্ষিত ফল। এই সুপারচার্জার নাইটক্রিমগুলো রাতে ঘুমের মধ্যেই ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। প্রাকৃতিক আর্দ্রতা হারিয়ে যেতে দেয় না; বরং আগলে রাখে যত্নে।
দ্বিতীয় সপ্তাহ ডিআইওয়াই ফেশিয়াল করে নেওয়ার মোক্ষম সময়। ক্লিনজিং, এক্সফোলিয়েশন, মাস্কিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং—এই ধারাবাহিকতায়। ফেশিয়াল স্টিম নেওয়া যেতে পারে ক্লিনজিংয়ের পর আর মাস্ক ব্যবহারের আগে। এতে খুলে যাবে লোমকূপ। আর্দ্রতার জোগান সহজ হবে।
জীবনধারার কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন ত্বককে জেল্লাদার করে তুলতে সহায়ক হতে পারে। প্রথমত, রাতে ভালো ঘুম—সাত থেকে আট ঘণ্টা। দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত পানি পান—কমপক্ষে দুই লিটার প্রতিদিন। চেহারার চমকই বাতলে দেবে পরিবর্তনটা।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: বর্ণ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল