ত্বকতত্ত্ব I ডার্মাপ্ল্যান ডিআইওয়াই
দশ মিনিট। তিনটা সহজ ধাপ। মাসে মাত্র দুবার। দ্যাটস ইট
প্রথমেই জানা চাই সামান্য কিছু বেসিক। কারণ, প্রক্রিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খ জানলে পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা কোনো ব্যাপারই না। ডার্মাপ্ল্যানিং হচ্ছে ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের একধরনের বিশেষ পদ্ধতি, যা ত্বকের সবচেয়ে বাইরের স্তরের মৃতকোষ সারাইয়ে কাজ করে। দূর করে পিচ ফাজ। সাধারণত সার্জিক্যাল ব্লেড ব্যবহারে সারা হয় ডার্মাপ্ল্যানিং। সহজ ভাষায় বলতে গেলে মুখত্বক শেভ করে নেওয়া। আরে না! এতে চেহারার লোম দ্রুত ফিরে আসবে না বা ঘনত্বও বাড়বে না। ব্যাপারটা পুরোটাই মিথ।
ব্লেডের ধারণ কেমন হবে, তা নির্ধারিত হবে কোথায় করানো হচ্ছে ডার্মাপ্ল্যান। অ্যাসথেটিশিয়ানরা সাধারণত অনেক ধারালো ব্লেড ব্যবহার করেন এ ক্ষেত্রে। একদম গভীর এক্সফোলিয়েশনের জন্য। তবে প্রফেশনাল হাতে করানোর জন্য গাঁটের টাকাটাও খরচ হবে বেশি। স্যালনগুলোতে যা শুরু হয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে। প্রতি সেশনে। ফলাফল স্থায়ী হয় ত্বকের ধরনভেদে দুই থেকে চার সপ্তাহ অব্দি। তাই ঘরে বসে অ্যাট-হোম টুল ব্যবহারে যদি প্রক্রিয়াটি সেরে নেওয়া যায়, মন্দ হবে না কিন্তু।
ডার্মাপ্ল্যানিংয়ের সেরা ব্যাপার হচ্ছে, এটি চটজলদি সেরে নেওয়া যায়, ব্যথামুক্ত আর ফল মেলে একদম হাতেনাতে। কোনো ধরনের সময়ক্ষেপণ হয় না। জিরো ডাউনটাইম। ত্বক অনুভূত হয় কোমল, দেখায় উজ্জ্বল—প্রক্রিয়া সারার সঙ্গে সঙ্গেই, প্রথম সেশন থেকেই। বেস্ট পার্ট হচ্ছে—ডার্মাপ্ল্যানিংয়ের পর ত্বকের মৃতকোষ, ফেশিয়াল হেয়ার আর জমতে থাকা বিল্ডআপ সরে যায় বলে মেকআপ অ্যাপ্লিকেশন হয় সহজ। যেকোনো ধরনের প্রোডাক্ট নিমেষেই মিশে যায় ত্বকে। দেয় ফ্ললেস ফিনিশ। আর স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলোকেও বাড়তি ঝক্কি ছাড়াই শুষে নিতে পারে ত্বক।
আসছে ওয়েডিং কিংবা পার্টি সিজনে চটজলদি স্কিন প্রেপিংয়ের জন্য এর চেয়ে ভালো কৌশল আর হতে পারে না। শুধু হাতের কাছে থাকা চাই যথাযথ টুল ও প্রোডাক্ট। আর জানতে হবে সঠিক পথ। বাকিটা ডার্মাপ্ল্যান করার পরের চেহারাই বাতলে দেবে।
ডিআইওয়াই রুটিন
প্রথমেই প্রস্তুত করে নিতে হবে ত্বককে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন গভীর এক্সফোলিয়েশনের আগে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে ভোলা যাবে না কোনোভাবেই। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ধুয়ে নিতে হবে, যেন বাড়তি তেল, ময়লা, দূষণের ছিটেফোঁটাও না থাকে। এ ক্ষেত্রে ডাবল ক্লিনজিং সবচেয়ে উপযোগী। সে সময় না থাকলে ডিপ ক্লিন ফেশিয়াল ক্লিনজার ব্যবহার করলেও কাজ চলে যাবে।
ফেশিয়াল রেজরের ব্লেড ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ধরতে হবে। তারপর চালাতে হবে ধীর হাতে, সমান চাপ প্রয়োগ করে। তবে একটানে ব্লেড চালানো যাবে না কোনোভাবেই। ছোট ছোট, ডাউনওয়ার্ড স্ট্রোকে বরং কাজ হবে নিখুঁত। একই জায়গায় বারবার ব্লেড বোলানো যাবে না কিন্তু। এতে ত্বক ছড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। আর অ্যাকটিভ অ্যাকনে আছে, ত্বকের এমন জায়গাগুলো বাদ দিয়ে যেতে হবে। কোনোভাবেই ব্লেড ছোঁয়ানো যাবে না এসব অংশে।
ডার্মাপ্ল্যানিংয়ের পর কিন্তু সৌন্দর্যপণ্যে থাকা পুষ্টিগুণ শুষে নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে ত্বকের। তাই প্রক্রিয়া-পরবর্তী এ সময়ে কী মাখা হবে, সে ব্যাপারে কৌশলী না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের এ ক্ষেত্রে পরামর্শ একটি কম্বো ব্যবহারের। প্রথমে ব্যবহার করতে হবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও হায়ালুরনিক অ্যাসিডসমেত সেরাম। তারপর দিতে হবে পেপটাইড ক্রিম।
ডার্মাপ্ল্যানিং-পরবর্তী যত্ন
প্রক্রিয়া সারার পর নিদেনপক্ষে তিন দিন সূর্যালোকে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান। সানস্ক্রিন ছাড়া বেরোনো একদম মানা। যদিও এই নন-ইনভেইসিভ কসমেটিক ট্রিটমেন্ট ত্বকের জন্য কোমল ও ব্যথাদায়ক নয়, তবু এর ফলে ত্বকের একটা পাতলা স্তর অপসারিত হয়। তাই ডার্মাপ্ল্যানিংয়ের পর স্পর্শকাতর অনুভূত হওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। সে জন্য হাতের কাছে রাখতে হবে স্পর্শকাতর ত্বকের উপযোগী সানস্ক্রিন। মিনারেলযুক্ত হলে সবচেয়ে ভালো। অন্তত এসপিএফ-৩০ যুক্ত হতেই হবে। আর রিঅ্যাপ্লাই করতে হবে ঘণ্টা দুয়েক পরপর।
ডার্মাপ্ল্যানিংয়ের পরপরই মুখ ভর্তি করে মেকআপ দেওয়া একেবারে মানা। ত্বককে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে অন্তত সেই দিনটা। তারপর যত খুশি ফাউন্ডেশন মেখে নেওয়া যাবে, ক্ষতি হবে না। মেকআপের আগে হায়ালুরনিক অ্যাসিডে তৈরি মাস্ক অথবা ময়শ্চারাইজার মেখে নেওয়া প্রয়োজন। এতে সুপার হাইড্রেটেড থাকবে ত্বক, দেখাবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। মেকআপের ব্যবহারে রূপ আরও খোলতাই হবে।
কিন্তু সুপার সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারীদের জন্য দুঃসংবাদ। ডার্মাপ্ল্যানিংয়ে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা এড়ানো যাবে না। আর যাদের ত্বকে ব্রেকআউটের সমস্যা আছে, তাদের একটু সবুর করতেই হবে। ত্বক সেরে যাওয়ার পর প্রক্রিয়া সেরে নেওয়ায় কোনো বাধা নেই। এ ছাড়া ডার্মাপ্ল্যানিং কিন্তু ত্বক এক্সফোলিয়েশন এবং ফেশিয়াল হেয়ার নির্মূলে খুবই লো-রিস্ক প্রক্রিয়া। তবে খুব বেশি আত্মবিশ্বাস না থাকলে বাড়িতে বসে করার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না কোনোভাবেই। দৌড়াতে হবে ডার্মাটোলজিস্টদের কাছে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: সাফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল