সেলুলয়েড I হিরোশিমা, মাই লাভ
মূল শিরোনাম: Hiroshima mon amour
পরিচালনা: অ্যালাঁ রেনে
কাহিনি ও চিত্রনাট্য: মার্গারিতা দুরাস
চিত্রগ্রহণ: সাশা ভিয়ের্নি, মিচিও তাকাহাসি
সংগীত: জর্জ ডেলেরু, জুভান্নি ফুস্কো
সম্পাদনা: অঁরি কলপি, জেসমিন চেসনি, আন সারুত
অভিনয়: এমানুয়েল রিভা, ইজি ওকাদা, বার্নার ফ্রেসোঁ
সময়ব্যাপ্তি: ৯০ মিনিট
ভাষা: ফ্রেঞ্চ
দেশ: ফ্রান্স, জাপান
মুক্তি: ১৯৫৯
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মর্মান্তিক সাক্ষ্য জাপানের হিরোশিমা। অ্যাটম বোমার ক্ষত তখনো দগদগে; দেহে, অন্তরে—সর্বস্তরে। সময়কাল গেল শতকের পঞ্চাশের দশকের শেষদিক। অ্যাটম বোমা বিস্ফোরণের দশকখানেক পর। ক্ষত সামলে, সাবধানে এগিয়ে যাওয়ায় মনোনিবেশ শহরটির অধিবাসীদের। এমন সময়ে ওই শহরে হাজির এক ফরাসি তরুণী। অভিনেত্রী সে। একটি যুদ্ধবিরোধী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্যই আসা। ঘটনাচক্রে তার দেখা হয়ে যায় জাপানি এক যুবকের সঙ্গে। বিবাহিত। স্থপতি। রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। যুদ্ধকালে ছিল সৈনিক। তাদের পরিচয় দ্রুতই গড়ায় শারীরিক সম্পর্কে। অবশ্য মূলত এই ক্ষণস্থায়ী সম্পর্কই লক্ষ্য ছিল যদিও; কিন্তু তা সহসা শরীর ছাড়িয়ে মনোজাগতিক হয়ে মহাজাগতিকে বাঁক নেয়। ক্লোজ শটে খণ্ড খণ্ড দেহচিত্রের ভেতর ঢুকে পড়তে থাকে অ্যাটম বোমা বিস্ফোরণ এবং এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া ঘিরে বাস্তব ফুটেজ।
দুজন দুজনকে ছেড়ে যেতে চায় এ যুগল। কিন্তু পারে না। দৃশ্যত প্রেম কিংবা কাম নয়, তাদের একসঙ্গে জড়িয়ে রাখে সদ্য অতীত যুদ্ধের ক্ষত। ধাপে ধাপে ভাঁজ খুলতে থাকে কাহিনির। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, এ রকম ক্ষণস্থায়ী সম্পর্কে জড়ানোর ভেতর দিয়ে ভুলতে চাওয়া অথচ না পারা অতীত ছড়াতে থাকে মনোজগতে বিষ। ফ্রান্সের এক মফস্বলে মেয়েটি যখন কিশোরী, যুদ্ধকালে তার দেশ ছিল জার্মানির দখলে। আর মেয়েটি প্রেমে পড়ে গিয়েছিল শত্রুপক্ষের এক সৈনিকের। দেশপ্রেম, সামাজিকতার দায়ভার ইত্যাকার সবকিছু ভুলে সেখানে প্রধান হয়ে উঠেছিল শুধুই দুটি মানব-মানবীর সত্যিকারের ভালোবাসা। যুদ্ধ ফুরিয়ে আসার ক্ষণে, জার্মানরা ফ্রান্স ছাড়ার আগমুহূর্তে, মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে এসে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরে যায় প্রেমিকটি। ভয়ানক ট্রমা-জাগানিয়া ছিল সেই মৃত্যু। কেননা, মুহূর্তেই নয়, ধুঁকে ধুঁকে মরেছিল ছেলেটি। এই ট্রমা মেয়েটিকে ঠেলে দিয়েছিল মানসিক বৈকল্যে। সামাজিক গঞ্জনা এড়াতে তার বাবা-মা তাকে দীর্ঘদিন আটকে রেখেছিল খুপরিতে। তারপর এক রাতে সে বেরিয়ে পড়েছিল; হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গিয়েছিল দূরের শহর প্যারিসে। নতুন জীবন শুরু করবে বলে।
মেয়েটি যখন প্যারিসের রাস্তায়, তখনই ঘটেছিল হিরোশিমার ওপর অ্যাটম বোমা বর্ষণ। এ খবর জেনে আরেকবার শিউরে উঠেছিল সে। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এখন সে তারকা অভিনেত্রী। কিন্তু এ শহরে, বিধ্বস্ততা কাটিয়ে নতুনভাবে জেগে উঠতে চাওয়া হিরোশিমায় এসে জাপানি ওই তরুণের মধ্যে প্রকৃত অর্থে খুঁজে পেয়েছে প্রয়াত প্রেমিকের ছাপ। আর তা আরও একবার নাড়িয়ে দিয়েছে তার দুনিয়া। জীবনবোধ। এমনই জটিল সমীকরণের দুর্দান্ত সৃষ্টি ‘হিরোশিমা, মাই লাভ’।
ইতিহাস বলে, ৬ আগস্ট ১৯৪৫ ছিল বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে কালো দিনগুলোর একটি। এদিন পৃথিবীর প্রথম অ্যাটম বোমার আঘাতে মুহূর্তেই হিরোশিমাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। প্রাণ হারিয়েছিলেন তর্ক সাপেক্ষে ১ লাখ ২৯ হাজার থেকে ২ লাখ ২৬ হাজার মানুষ; যাদের অধিকাংশই নিরীহ জনসাধারণ। ঝলসানো পোড়া শরীরের আরও কয়েক লাখ জীবন্মৃত প্রাণ সেই উপাখ্যানের সাক্ষী। এমন অমানবিক ঘটনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের সংবেদনশীল মানুষেরা। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সেই প্রতিবাদ ‘হিরোশিমা, মাই লাভ’-এর মধ্য দিয়ে নিজস্ব স্বরে প্রকাশ করে গেছেন ফরাসি মাস্টার ফিল্মমেকার অ্যালাঁ রেনে। মুক্তির পর থেকে বহুল আলোচিত এই সৃষ্টি হয়ে উঠেছে চলচ্চিত্র দুনিয়ার এক অনুপম মাস্টারপিস। এখনো এটি ফিল্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘টেক্সট’ হিসেবে পরিগণিত।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। ‘হিরোশিমা, মাই লাভ’-এর নেপথ্য প্রেক্ষাপট কী?
[ক] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
[খ] প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
[গ] গৃহযুদ্ধ
[ঘ] জাতিগত সংঘাত
২। এই চলচ্চিত্রে ফরাসি তরুণীটির পেশা কী?
[ক] সমাজসেবী
[খ] সেবিকা
[গ] রাজনীতিবিদ
[ঘ] অভিনেত্রী
৩। তরুণীটির প্রথম প্রেমিক কে ছিল?
[ক] ফরাসি সৈনিক
[খ] জাপানি সৈনিক
[গ] জার্মান সৈনিক
[ঘ] মার্কিন সৈনিক
গত সংখ্যার বিজয়ী
১. মানহা মুসারাত, ধানমন্ডি, ঢাকা।
২. তানিম নেওয়াজ, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।
৩. শিরীন আখতার, বাড্ডা, ঢাকা।