বহুরূপী I মম মোমো
তিব্বতি ভাষায় ‘মোমো’ শব্দের অর্থ সেদ্ধ করা বান বা রুটি। এটি ময়দার ভেতরে নানা রকম পুর দিয়ে পরিবেশন করা হয়। যেমন মাংস, সবজি, পনির ইত্যাদি। মোমো মূলত ডাম্পলিং বা ডিমসামের আরেকটি রূপ। তিব্বতি এই খাবার ভুটান, নেপাল, লাদাখ, উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে স্ট্রিট ফুড হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
অন্যান্য ভোজনরসিকের মতো আপনিও কি মোমোপ্রেমী? ভালোবাসার মাস ফেব্রুয়ারিতে আপনি কি এমন কেউ, যার আদর্শ ডেট আইডিয়া হলো প্রিয় মানুষটির সঙ্গে মোমো খেতে বাইরে যাওয়া? অথবা আপনি কি সব সময় অনলাইনে মোমো অর্ডার করেন? সে যা-ই হোক, এখানে ফিউশন মোমোর একটি তালিকা রয়েছে, যা থেকে পছন্দের স্বাদ চেখে নিতে পারেন।
দেশি খাবার ভালোবাসেন? তাহলে তন্দুরি মোমোর বৈচিত্র্য আপনার হৃদয়ে পৌঁছানোর পথ খুঁজে পেতে চলেছে! সামান্য ক্রিমের মধ্যে ফেলে ভারতীয় তন্দুরি মসলা দিয়ে মেরিনেট করা স্মোকি মোমোর চূড়ান্ত রূপ এটি। একে অনেকে সেরা ফিউশন মোমো বিবেচনা করেন। লাল মরিচের চাটনি এবং মেয়োনেজের সঙ্গে যুক্ত করে তন্দুরি মোমোতে স্পাইসি স্বাদ দেওয়ার চল রয়েছে।
আরও আছে আফগানি মোমো। এটি তন্দুরি মোমোর মিষ্টি ও ক্রিমি সংস্করণ। স্মোকি হলেও এই মোমো তেমন মসলাদার বা ঝাল নয়। সাধারণত ক্ল্যাসিক আফগানি গ্রেভিতে ডুবিয়ে পরিবেশন করা হয়। অন্যদিকে, স্যুপে বাষ্পযুক্ত ঝোলের সঙ্গে পরিবেশন হলো নেপালি মোমোর বিশেষত্ব। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতে বেশ জনপ্রিয় এটি। এক বাটি ঝোল মোমো একই সঙ্গে উদর ও অন্তরের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট!
চিলি সস ও কেচাপে কিছু কাঁচা মরিচ মিশিয়ে তৈরি চিলি মোমো স্বাদের জগতে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এমনকি এই মোমোর স্টাফিংটি শেজওয়ান সস দিয়ে প্রস্তুত করা হয়, যা অন্যান্য মোমোর চেয়ে অনেক বেশি মসলাযুক্ত ও ঝাল। অনেকে বাড়তি মসলাদার স্বাদ পেতে পেরি-পেরি পাউডারও ব্যবহার করেন।
এবার আসা যাক কোথে মোমোর আলাপে, যাকে ভালোবেসে অনেকে প্যান-ফ্রাইড মোমো বলেন। এর উৎপত্তি হিমালয়ে। এটির আসল সংস্করণ পর্ক স্টাফিংয়ে পূর্ণ; তবে আজকাল নিরামিষ দিয়েও বানানো হয়। প্যান-ফ্রাই করায় সুন্দর ক্রিস্পি টেক্সচার লাভ করে এই মোমো। একে বিশেষ করে তোলে এর জোরালো স্বাদ।
মাঝখানে গুয়ি পনির দিয়ে প্যাক করা চিজ মোমোকে পিৎজার বৈচিত্র্য যোগ আলাদা জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। এই মোমোগুলোকে অর্ধেক ছিঁড়ে নিলে নিখুঁত পনিরের স্বাদ মেলে। সাধারণত চিজ সসের সঙ্গে এটি পরিবেশন করা হয়।
মোমো খাওয়া শেষে যদি জিভে মিষ্টি স্বাদ লেগে থাকা চান, বেছে নিতে পারেন এক বাক্স চকলেট মোমো। এই কম্বো শুনতে উদ্ভট লাগলেও স্বাদ চমৎকার। চকলেট সসের সঙ্গে ভাজা মোমো সত্যিই চকলেটপ্রেমীদের জন্য দারুণ উপহার!
রসাল ও সবজি বা মাংসে পরিপূর্ণ ক্ল্যাসিক স্টিমড মোমো ভাজা যেকোনো মোমোর চেয়ে স্বাস্থ্যকর। আপনার বাড়িতে স্টিমার থাকলে এটি দ্রুত ও সহজে তৈরি করে নিতে পারবেন; এমনকি ইডলি স্টিমারেও কাজ চলবে। অন্যদিকে, রেগুলার মোমোতে অনন্য ক্রঞ্চ দেওয়া ফ্রাইড মোমো বৃষ্টির দিনে ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি দিতে পারে অন্য রকম অনুভূতি। নিয়মিত পাকোড়া খাওয়া বাদ দিয়ে মুখরোচক, রসাল ও খাস্তা ফ্রাইড মোমো চেষ্টা করে দেখতে পারেন। প্রক্রিয়া খুব সিম্পল, স্টাফ করা ডাম্পলিংগুলো সোনালি-বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভাজা চাই।
ক্রিমযুক্ত, সমৃদ্ধ, সুস্বাদু মোগলাই মোমো একসময় ছিল রাজকীয় খাবার, যেটি কাজু ও ক্রিম দিয়ে তৈরি। চাইলে এভাবেই অথবা ভাতযোগে এটি উপভোগ করতে পারেন এখনো। অন্যদিকে স্টিমড মোমোতে প্যাক করা মসলাদার, টেন্টালাইজিং চিকেন মোমো গ্রেভিকে খাবার হিসেবে পছন্দ করেন অনেকে। মাখন, পেঁয়াজ, ধনে, লাল মরিচ, কাঁচা মরিচ ও টমেটো সসের স্বাদ একে সুস্বাদু ট্রিট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট