কভারস্টোরি I প্রণয়পালা
কখনো এর আবির্ভাব দমকা হাওয়ার মতো ফোর-জি স্পিডে, ঢাকঢোল পিটিয়ে। কখনো চুপিসারে, মৃদু পায়ে, সন্তর্পণে। আবার কখনো একেবারে মনের ভুলে। প্রেক্ষিত বা প্রেক্ষাপট যেমনটাই হোক, চেহারা ঠিকই বাতলে দেবে ‘লাভ ইজ ইন দ্য এয়ার’। তাই প্রেমে পড়া হোক বা প্রেম উপরে পড়ুক—গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েই যায়। কাছেধারের সবাই যদি জানতে চায় রূপরুটিনের কোন পরিবর্তন কিংবা বিউটি বক্সে কোন ম্যাজিক্যাল প্রোডাক্টের যোগে ত্বক এমন হাজার বাতির ভোল্ট, তখন বলাই যায়—‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা/ কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে’…। মনের সঙ্গে মাধুর্যের এমনতর মিলমিশের রহস্য রসায়ন ডি-কোড করেছেন জাহেরা শিরীন
প্রেম। পুঁচকে এইটুকুন শব্দ। কিন্তু পৃথিবী পাল্টানোর ক্ষমতা। পাথরের মতো কঠিন হৃদয়কে করে তুলতে পারে মাখন-মোলায়েম। আবার কারও পলকা মনও হয়ে ওঠে কংক্রিটসম শক্ত। এর মধ্য দিয়েই যেন ওঠানামা করে জীবনের উষ্ণতার পারদ। অফুরান ভালোবাসা যে ভালো থাকার জিয়নকাঠি, তা নিয়ে সন্দেহ নেই বটে। কিন্তু সৌন্দর্যের সমীকরণ যে এতে এসেই মেলে, তা হয়তো অনেকের অজানা। প্রেমের প্রতিপর্বেই জেল্লার যোগ-বিয়োগের অঙ্ক আছে। তাই তো ভালোবাসার মানুষের মুখে নিজ সৌন্দর্যের বয়ান শুনে পেটে প্রজাপতির ওড়াউড়ির পাশাপাশি আরও শত বাল্বের আলোর ঝলকানি ফুটে ওঠে চেহারায়। তেমনি কথা-কাটাকাটির খেলায় নিভে যায় সেই আভা। মুখখানা দেখায় মলিন, ম্যাড়মেড়ে। প্রেমহীন বিষাদে হৃদয় ভেঙে চৌচির; সঙ্গে ব্রণের ইতিউতি উঁকি। আবার আনন্দে আত্মহারা বা উত্তেজনাতেও পাল্টে যায় ত্বকের পরত। লালিমার সে রং হারিয়ে দিতে পারে হাজার ডলারের ব্লাশ প্যালেটের শেডকেও।
পর্বে প্রোজ্জ্বল
হঠাৎ কাউকে দেখে একরাশ ভালো লাগা, মনের কথা জানাবার সব অদ্ভুতুড়ে জল্পনা। তারপর জল আরও গড়ালে মনের কথা মুখে। আর তাতে যদি একবার গ্রিন সিগন্যাল মিলে যায়, তাহলে তো পুরো কেল্লা ফতে। রোমান্টিক ডেট, হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়ানো, পপকর্ন সাবাড় করতে করতে সিনেমা দেখা, লং ড্রাইভ। পরে বাড়ি থেকে সম্মতি মিলে গেলেই সোজা ছাঁদনাতলা। সাদা-কালো এই জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার শহরে লাল-নীল সংসারের স্বপ্ন। অতঃপর দে লিভড হ্যাপিলি এভার আফটার—এই তো প্রেমের আলটিমেট ফ্রেম। সিঙ্গেল, ইটস কমপ্লিকেটেড, ইন আর রিলেশনশিপ থেকে অফিশিয়াল কাপল হয়ে ওঠার এই দীর্ঘ পথে দেখা মেলে নানা রঙের আবেগের। কিছু অনুভূতি অকালে প্রাণ হারায়, তো কারও জীবনে নিরন্তর বয়ে চলে চিরবসন্তের হাওয়া। অতশত আবেগ পুরোপুরি পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয় চেহারায়। না, মশকরা নয়। একেবারে সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে। খোদ বিশেষজ্ঞরাই বলেছেন, সৌন্দর্য অনেকাংশেই আবেগের মাধ্যমে প্রভাবিত, মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। কীভাবে?
প্রথম পর্ব
সবে প্রেমে পড়েছে মন। বিশেষ মানুষটাকে দেখলে তাই বুকের মাঝে কেমন যেন ধুকপুকানি। আর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই সেরেছে! হার্টবিট বেড়ে প্রাণপাখি খাঁচা ছেড়ে উড়ে যাওয়ার জোগাড়। আর তাকিয়ে যদি একবার হেসে দেয়, তাহলে তো হৃদয়ে একেবারে একশ শটের আতশবাজি। কথা বলতে গেলে হাঁটু কেঁপে, তোতলে, কেশে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। এই তো প্রেমের উত্তেজনা। এমন সব সময় একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, চেহারায় ফুটে ওঠে অস্তমিত সূর্যের লালিমা। কারণ, অ্যাড্রেনালিন রাশের ফলে ত্বকে থাকা হাজারখানেক ক্যাপিলারিসের প্রসারণ। ঠিক যেমন ব্যায়াম, হট শাওয়ার আর সেক্সের মতো ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটির পর দেখা যায় চেহারায়। বিশেষজ্ঞদের মত, যখন ক্যাপিলারিস এমনভাবে প্রসারিত হতে শুরু করে, তখন মুখত্বকজুড়ে গোলাপি আভা সৃষ্টি হয়। ফলে ত্বক আরও বেশি আর্দ্র ও মসৃণ দেখায়। তবে এমন রোজি গ্লোর জন্য যে শুধু প্রেমই একমাত্র উপায়, তা কিন্তু মোটেই নয়। এমন ব্লাশি ফ্লাশ রিক্রিয়েট করতে চাইলে রূপরুটিনে যোগ করা যেতে পারে রেডিয়েন্স বুস্টিং স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট। রেটিনল, ভিটামিন সি অথবা ল্যাকটোবায়োনিক অ্যাসিডসমেত। প্রতিটি উপাদানই উত্তেজনার ফলে সৃষ্ট উজ্জ্বলতাকে উদ্দীপ্ত করতে সহায়ক। তবে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া জরুরি। বুঝতে তো হবে, প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না ত্বকে।
দ্বিতীয় পর্ব
হি লাভস মি, হি লাভস মি নট আওড়ানোর সময় মনে যে চাপ অনুভূত হয়, তা কি কম স্ট্রেসের নাকি! ফলাফল—কর্টিসলের নিঃসরণ এবং ত্বকে এর নেতিবাচক প্রভাব। চোখের চারপাশে গভীর কালো দাগ। পরিশ্রান্ত, মলিন চেহারা। ঠিক যেমনটা হয় কাজের ডেডলাইন কাছাকাছি চলে এলে কিংবা ট্যাক্সের কাজ গোছানোর সময়। কর্টিসল তো আছেই, সঙ্গে শরীরে মাসল টেনশন উপরি পাওনা। কুঁচকে থাকা অবস্থায় মুখত্বক ফ্রিজ হয়ে যেতে পারে। এতে করে স্ট্রেসে যাদের আইব্রো ভাঁজ করে রাখার অভ্যাস অথবা চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক সেই অংশে গভীর বলিরেখা পড়তে শুরু করে। এ ছাড়া স্ট্রেসের দরুন ত্বকের রক্তসঞ্চালনের স্বাভাবিকতায় ব্যাঘাত ঘটে। শরীর ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ মোডে চলে যায়। রক্ত ত্বকে নয়, সরাসরি পেশিতে পৌঁছাতে শুরু করে। ফলে ত্বকের ভেতর থেকে আসা উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়।
তৃতীয় পর্ব
প্রেমের এ পর্বে মনে উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধতে শুরু করে। কী করে বলা যাবে মনের কথা। সহজে, অকপটে, গুছিয়ে। বাই চান্স যদি প্রস্তাব শুনে ফ্রেন্ডজোন করে দেয়, সে শঙ্কাও তো আছে। আর অতশত চিন্তা মানেই কর্টিসলের নিঃসরণ অবধারিত। এর পারদ ওপরে উঠতে শুরু করলে তো আরও বিপদ। ইমিউন সিস্টেমের বারোটা বাজিয়ে ত্বকের প্রদাহ বাড়িয়ে দেবে। এমন ত্বককোষগুলোর কোলাজেন ভাঙার প্রবণতা থাকে। কোলাজেন মূলত ত্বককে মসৃণ ও শক্তিশালী রাখতে সহায়ক। উচ্চমাত্রার কর্টিসল ত্বকের সুরক্ষিত রাখার ফাংশনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠার পাশাপাশি আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। ফলাফল—দৃশ্যমান শুষ্কতা আর বলিরেখা।
চতুর্থ পর্ব
চোখের সামনে সাতরঙা রংধনুর ঘোরাফেরা আর হৃদয়ে সপ্তসুরের প্রতিধ্বনি। প্রাক্-প্রেমের পর্ব পেরিয়ে এখন ভালোবাসাবাসি চলছে পুরোদমে। সঙ্গে বাড়তি পাওনা শ্রীবৃদ্ধি। ওই যে লোকে বলে না, প্রেমে পড়লে রূপ আরও খোলতাই হয়, কথা কিন্তু সত্য। পেটে চঞ্চল প্রজাপতির ওড়াউড়ি আর সব সময় আহ্লাদে গদগদ থাকার যে ঘটনা প্রেম চলাকালীন ঘটে, পুরোটাই কিন্তু একধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার প্রতিফলন; যা ত্বকের জন্যও ফায়দার ব্যাপার। পুরো এই ঘটনার জন্য অক্সিটোসিন নামক হরমোনকে শুকরিয়া জানাতেই হবে। হরমোন অব লাভ হিসেবে জানা যায় একে। অ্যাটাচমেন্ট হরমোন হিসেবেও পরিচিত; যা সম্পর্কের বন্ধন তৈরিতে সিদ্ধহস্ত। হোক তা সেক্সুয়াল পার্টনারদের ভেতর, কিংবা মা আর সন্তানদের মাঝে। এমনকি প্রিয় কুকুরের প্রতি মানুষের মায়ার নেপথ্যেও প্রভাবক অক্সিটোসিন। এই হরমোন প্রদাহজনিত জ্বালাপোড়ায় প্রশান্তি দেয়। তাই অক্সিটোসিনের মাত্রা বেশি মানেই ত্বকে কম অস্বস্তি, বেশি উজ্জ্বলতা। এ ছাড়া স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের উৎপাদনের লাগাম টেনে ধরে এই লাভ হরমোন।
পঞ্চম পর্ব
প্রেমের অন্য পিঠে কিন্তু বিষাদের আখ্যান অবধারিত। ভালোবাসায় দুটি মানুষের মধ্যে ঠোকাঠুকি, কাঠ-কাঠ কথার আদান-প্রদান, অভিমান, বাগ্বিতণ্ডা থেকে জোর ঝগড়া হতেই পারে। আর এগুলো ঘটা মানেই মনের আকাশে বিষাদের ঘনঘটা। বেজার মুখে তার পরিষ্কার প্রতিফলন। আর ব্রেকআপ হলে তো কথাই নেই। হৃদয়ের পাঁজর ভাঙার শব্দ যেন স্পষ্ট শোনা যায় বিধ্বস্ত চেহারার ভাঁজে। ক্রমাগত কান্নায় চোখের চারপাশে ফুটে উঠতে শুরু করে বলিরেখা। আর কান্নার স্বাদ যেহেতু নোনতা, তা ত্বককে শুষ্ক করে ফেলতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ, নিদেনপক্ষে এক প্যাকেট ময়শ্চারাইজিং টিস্যু হাতের কাছে রাখার। আর সঙ্গে সবচেয়ে ভালো বন্ধু। এতে কিছুটা হলেও ড্যামেজ কন্ট্রোল করা যাবে হয়তো! এ ছাড়া পোস্টব্রেকআপ বুকের জ্বালা মেটাতে যেসব হাবিজাবি খাবার পেটে পোরা হয়েছে, তারও তো পরিণাম রয়েছে। চিনিতে পরিপূর্ণ মিষ্টি, ক্যান্ডি কিংবা কেক থেকে কার্বে ভরপুর হোয়াইট ব্রেড আর পাস্তা শরীরে সুগারের মাত্রা বাড়াতে যথেষ্ট; যা সরাসরি প্রদাহের সঙ্গে সম্পর্কিত, এমনকি তারুণ্যোজ্জ্বল কোলাজেনকে ভেঙে অনমনীয় করে তোলে। ফলাফল—প্রি-ম্যাচিউর এজিং অর্থাৎ অকালবার্ধক্য। অনাকাঙ্ক্ষিত বলিরেখা আর ব্রণে ভরপুর ত্বক। সে ক্ষেত্রে সমাধান? খুব সহজ। শুধু একটু মনোবল দরকার আরকি! জাঙ্ক ফুডের সঙ্গে এক বোল স্যালাদ যদি নিয়ম করে খাওয়া যায়, তাহলে ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যাবে। মনের জ্বালা ঠান্ডা করতে পুরো আইসক্রিমের বক্স নিয়ে না হয় বসা হলো। একটা বাটিতে তুলে খেলে বরং ব্যাপারটা তুলনামূলক সেফ।
ব্রেকআপের পর হঠাৎ করে মনের মতো ত্বকটাও কেমন যেন সেনসিটিভ হয়ে ওঠে। হুটহাট একজিমা, রোজাসিয়া আর সোরাইসিসে আক্রান্ত হতে দেখা যায় অনেককে। সবচেয়ে সাধারণ দৃশ্য—মুখ, গলা আর বুকজুড়ে ব্রণ। এক্সট্রিম স্ট্রেস থেকে অ্যাড্রেনালিন বেড়ে যায়। ফলে দেহ হাই অ্যালার্ট মোডে পৌঁছায়। যার প্রতিফলন ত্বকে এভাবেই চোখে পড়ে। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি কিছু করার নেই। মনই মানছে, ত্বক তো সে কোন ছার! আরামদায়ক পজিশনে বসে ব্রিদ ইন আর ব্রিদ আউট প্র্যাকটিস করা যেতে পারে দশবার। এটা দেহের ন্যাচারাল রিলাক্সেশন রেসপন্সকে অ্যাকটিভেট করে দিতে সহায়তা করবে। মনের সঙ্গে ত্বকও খানিকটা শান্ত হয়ে উঠবে আশা করা যায়।
ব্রেকআপের পর ত্বকের কর্টিসল বাঁধনহারা হয়ে যায়। ফলে তেলতেলে গ্রন্থিগুলো আরও বেশি তেল উৎপন্ন করতে শুরু করে। ফলে লোমকূপ আটকে যায়, দেখা দেয় ব্রণ। এমনকি শুষ্ক ত্বকেরও এ থেকে রক্ষা নেই। তার ওপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে যখন দুঃখবিলাসে ব্যস্ত, তখন ত্বকের আলাদা করে চর্চার সময় আর কই। যার পরিণতি মেলে শোক কাটিয়ে ওঠার পর। ম্যাড়ম্যাড়ে, শুষ্ক, প্রাণহীন ত্বক দেখে তখন আর মন খারাপ করেও লাভ হয় না। তাই একবুক কষ্ট নিয়েও যদি ত্বকটা পরিষ্কার করে একটু ময়শ্চারাইজার মেখে নেওয়া যায়, পরে অন্তত ত্বক নিয়ে দুঃখ করতে হবে না। আর এ সময়টায় চেহারা হয়তো খানিকটা খারাপই দেখাবে, তাতে কী! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাঙা মন যেমন জোড়া লেগে যাবে, ত্বকও ফিরে পাবে তার হারানো জেল্লা। কঠিন এ সময়ে হার মানা যাবে না কিন্তু।
হিসাব মেলে হরমোনে
প্রেম মানেই কিন্তু শরীরে তখন নানান হরমোনের কারসাজি। সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন, ডোপামিন—হ্যাপি এসব হরমোনের চাপে শর্ষে ফুলও যেন গোলাপের মতো সুবাস ছড়ায়। এর মধ্যে অক্সিটোসিন হচ্ছে লাভ হরমোন। সম্পর্কের বন্ধনকে মজবুত করে এমন যেকোনো কার্যকলাপে এটি নিঃসরিত হয়। স্কিন হিলার অর্থাৎ ত্বকের বৈদ্য হিসেবেও এর সুনাম রয়েছে। অক্সিটোসিনে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টি আছে, যা ত্বকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব কসমেটিক সায়েন্স মোতাবেক অক্সিটোসিনের প্রো-মাইগ্রেটরি ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব ক্ষত নিরাময়ের পাশাপাশি ত্বকের পুনরুজ্জীবনে সহায়তা করে। প্রদাহ কমায়; নিরাময়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ত্বকের স্বাস্থ্যোজ্জ্বলতা নিশ্চিত করে।
মেজাজ-মর্জির সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেকটি নিউরোট্রান্সমিটার হচ্ছে সেরোটোনিন। এবং অনুমান সঠিক! এটিও ত্বককে প্রভাবিত করে। জার্নাল অব ডার্মাটোলজিক্যাল সায়েন্সের একটি পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, সেরোটোনিনের রিসেপ্টরগুলো ত্বকে উপস্থিত থাকে। যা চুলকানি ও ব্যথার মতো স্পর্শকাতর সংবেদনগুলো সংশোধনে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এর সবচেয়ে বড় গুণ, এটি ত্বককোষের স্থানান্তর ও উৎপাদনকে প্রভাবিত করে ক্ষত নিরাময়কে উৎসাহ জোগায়। প্লেজার হরমোন হিসেবে পরিচিত ডোপামিন পুরস্কার প্রাপ্তির মতো তীব্র আনন্দ-অনুভূতি দেয় মনে। ‘ফিল-গুড’ নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে এর সুখ্যাতি বহুল চর্চিত। শুধু মেজাজ-মর্জিকেই প্রভাবিত করে না, ত্বকের সুস্বাস্থ্য রক্ষায়ও এর অবদান আছে। জার্নাল অব ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজির একটি গবেষণামতে, ত্বকের কোষগুলোতেও ডোপামিন রিসেপ্টরের উপস্থিতি মেলে; যা ত্বকের সুরক্ষা দেয়ালের কার্যক্রমকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া ত্বকের মেলানিন উৎপাদনের মাত্রাকে সক্রিয় রাখে বিধায় ত্বক দেখায় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। এমনকি প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বলতাও বাড়ে বহুগুণ।
হ্যাপি হরমোনের তালিকায় আরও অন্তর্ভুক্ত করা যায় অ্যাস্ট্রোজেনকে। যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের সঙ্গে মূল সংশ্লিষ্টতা থাকলেও এটি দেহের ইলাস্টিন, কোলাজেন আর হায়ালুরনিক অ্যাসিড উৎপাদনকে উদ্দীপ্ত করে। ফলাফল পরিপুষ্ট ত্বক। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল ডার্মাটোলজির একটি গবেষণা অনুযায়ী, ত্বকের ফাইব্রোব্লাস্টে অ্যাস্ট্রোজেন রিসেপ্টর থাকে, কোলাজেন সিনথেসিসে যার সরাসরি প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া এই হরমোন দেহের ময়শ্চার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ত্বকের লোমকূপের আকার কমিয়ে আনে; দেখায় মসৃণ ও কোমল। তেমনি মেলাটোনিন নামক হ্যাপি হরমোন শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো কাজ করে। ত্বকের রিপেয়ার মুড অন করে দেয়। ফলে ত্বক ফ্রি র্যাডিক্যাল ড্যামেজ যেমন পরিবেশের দূষণ আর সূর্যের ক্ষতিকর আলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।
তাই বলে শুধু হ্যাপি হরমোন আর প্রেমের ভরসায় ত্বকচর্চা ছেড়ে দিলে কিন্তু ফেঁসে যাওয়ার শঙ্কা আছে। শুধু প্রেমে যেমন পেট ভরে না, ঠিক তেমনি সঠিক যত্ন না নিয়ে শুধু ভালোবাসাবাসিতে মেতে থাকলে ত্বক কখনো ওয়েল গ্রুমড দেখাবে না, এটা নিশ্চিত। হরমোনগুলোকে বরং নিজের কাজ করতে দিয়ে কিছুটা ভালোবাসা বরাদ্দ থাকুক ত্বকের জন্য। রোজকার সৌন্দর্য রেজিমে সামান্য সেলফ লাভ নিজের জন্যই না হয় তোলা থাক। এই যোগ প্রিয় মানুষটার চোখে করে তুলবে আরও আকর্ষণীয়। প্রেম আরও বাড়বে বৈ কমবে না।
জয়তু প্রেম, জয়তু জীবন।
মডেল: আজিম ও অহনা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ক্লাবহাউস এবং এ জেড
ছবি: কৌশিক ইকবাল