ফিচার I শর্ত সাপেক্ষে
কেনার আগে মেনে চলায় নিশ্চিত হবে ফুলপ্রুফ আই মেকআপ লুক। সেরে নেওয়া যাবে স্বচ্ছন্দে। ফলস ল্যাশ বাছাইয়ের সহজপাঠই শর্ত
ইনডিভিজ্যুয়াল
এই ধরনের ল্যাশ প্রাকৃতিক আইল্যাশকে অলওভার বুস্ট দিতে সহায়ক। ভরাট ভাবের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি দৈর্ঘ্য যোগ করে বলে আরও বেশি সংজ্ঞায়িত দেখায়। পুরোটা জুড়ে তো বটেই, ল্যাশ লাইনের পছন্দসই যেকোনো অংশে এগুলো আটকে দেওয়া যায়। ইনডিভিজ্যুয়াল এ ল্যাশগুলো পাওয়া যায় সেটে। ৩০ থেকে ৬০ ধরনের আলাদা দৈর্ঘ্যের ল্যাশ স্ট্র্যান্ড থাকে কাস্টমাইজেবল লুক তৈরির জন্য। কন্ট্রোলটাও বেশি থাকে এ ক্ষেত্রে। ল্যাশ আর্টিস্টদের মতে, সব ধরনের ফলস ল্যাশের মধ্যে সবচেয়ে ভার্সাটাইল এটি। কারণ, নানা ধরনের লুক তৈরি করে নেওয়া যায়। গর্জাস ন্যাচারাল ‘ডে’ ল্যাশ লুক থেকে ইনটেন্স ড্রামাটিক ‘নাইট’ লুক—সবই সম্ভব এগুলো দিয়ে। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ইনডিভিজ্যুয়ালগুলো এত সুন্দর করে ন্যাচারাল ল্যাশের সঙ্গে মিশে যায় যে আলাদা করে ঠাহর করা যায় না সহজে। ব্যবহারের সময় সাবধান থাকা জরুরি। টুইজার অথবা বিশেষভাবে নকশা করা ল্যাশ অ্যাপ্লিকেটর এ ক্ষেত্রে কাজে আসবে। শুরুতে একটু সময় লাগতে পারে ল্যাশ প্লেসিংয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু মূলমন্ত্র একটাই—প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস। হাতের কাছে থাকতে হবে ম্যাগনিফায়িং মিরর। ল্যাশের মাঝে মাঝে এগুলো জুড়ে দিলে ঘন দেখাবে পুরো ল্যাশ লাইন। আর আউটার এন্ডে অর্থাৎ বাইরের কোণে যোগ করতেই চোখে আসবে ওয়াইড আইড ইফেক্ট। এ দুইয়ের কাস্টমাইজেশনও করে নেওয়া যেতে পারে।
এ ধরনের ল্যাশ কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা কৌশলী হওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা প্রয়োজন। এই ল্যাশগুলো সাধারণত একটা ছোট বল বা ফ্ল্যাট ব্যান্ডের মাধ্যমে আটকে থাকে। তবে সমস্যা হচ্ছে, সিঙ্গেল বল দেওয়া ল্যাশগুলো ব্যবহারের সময় একটুতেই উল্টে যায়। ফলে এগুলো পরা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। দুটো অথবা তিনটা বলের ক্লাস্টারে তৈরি ইনডিভিজ্যুয়াল ল্যাশগুলো বরং টুইজার দিয়ে সহজে ধরা এবং অ্যাপ্লাই করা যায়। ফ্ল্যাট-ব্যান্ড ভার্সনগুলো ধরা সহজ, কিন্তু ল্যাশ লাইনে ফ্ল্যাট করে বসানো চ্যালেঞ্জের চেয়ে কম নয়। তাই যার যেমন পক্ষতা, তা বুঝে ল্যাশ বেছে নিতে হবে। যাদের কাস্টম লুকই চাই, তাদের জন্য দৈর্ঘ্য বুঝে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ল্যাশ আর্টিস্টরা। সে ক্ষেত্রে একই ব্র্যান্ডের ভিন্ন ভিন্ন সেট কিনে নেওয়া যায়। অথবা এমন কোনো সেট বেছে নিতে হবে, যাতে একসঙ্গে অনেকগুলো আলাদা দৈর্ঘ্যরে ল্যাশ থাকবে। যারা আইল্যাশে ফ্লাফিনেস চান, তাদের আসলে অনেক লম্বা ল্যাশ ব্যবহারের দরকার নেই। ছোট, ফ্লাফি ইনডিভিজ্যুয়াল দিয়েই পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত ন্যাচারাল লুকিং ল্যাশ লাইন।
স্ট্রিপ
ফলস ল্যাশ বলতেই এগুলো বুঝে থাকেন বেশির ভাগ সৌন্দর্যপ্রেমী। একটা সমান্তরাল ব্যান্ড জুড়ে ফো উইসপ ল্যাশ লাগানো থাকে; যা স্ট্রিপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, আপার ল্যাশ লাইনে। চোখের আকার অনুযায়ী জুতসইটা বেছে নিতে পারলে এই ধরনের ল্যাশের ব্যবহারে পুরো লুকই পাল্টে যেতে পারে। গোলাকার চোখের পুরোটাজুড়ে উইংগড অথবা শুধু আউটার কর্নারে ডেমি ল্যাশ লাগালে চমৎকার দেখায়। ডিপ-সেট আই শেপে সামান্য লম্বা ল্যাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। হুডেড চোখে এমন ল্যাশ ভালো দেখায়, যেগুলো মাঝ বরাবর লম্বা।
ফুল ল্যাশ স্ট্রিপ মানেই চটজলদি ড্রামাটিক লুক। কারণ, বাড়তি ভলিউম আর লেন্থ অ্যাড হয় ল্যাশে। সবচেয়ে বেশি ধরনের এবং নকশার স্ট্রিপ ল্যাশ পাওয়া যায় বাজারে। নানা রেঞ্জের প্রাইস পয়েন্টে। কালো ব্যান্ড ছাড়াও ‘ইনভিসিবল’ ব্যান্ডের স্ট্রিপ ল্যাশ মিলবে। কালো ব্যান্ড ব্যবহারে চোখকে সংজ্ঞায়িত দেখাবে আর ইনভিসিবল ব্যান্ডে চেহারায় আসবে সূক্ষ্ম পরিবর্তন, তবে লক্ষণীয় মাত্রায়। সাধারণত সিনথেটিক ফাইবারেই তৈরি হয় এই ল্যাশগুলো। কিন্তু অনেক বেশি লাক্সারিয়াসগুলোতে মাঝেমধ্যে ব্যবহার করা হয় মিঙ্ক অথবা সিল্কের মতো ন্যাচারাল ফাইবার।
ল্যাশ অ্যাডহেসিভ দিয়ে আটকে নেওয়া হয় এই ফলসিগুলো। টুইজার অথবা ল্যাশ অ্যাপ্লিকেটর দিয়ে। আইশেপের সঙ্গে মানিয়ে যাওয়া খুব জরুরি এই ল্যাশগুলোর। প্রয়োজনে ট্রিম করে নেওয়া যেতে পারে কাঙ্ক্ষিত আকার পাওয়ার জন্য। দুই অথবা তিন টুকরায় ভাগ করে তারপর ল্যাশ গ্লু দিয়ে আটকে নেওয়া যেতে পারে ন্যাচারাল ল্যাশ লাইন বরাবর। প্রথম দিকে খানিকটা সময় লাগতে পারে; তবে একবার অভ্যাস হয়ে গেলে কাজটা আরও সহজ হয়ে উঠবে।
অবশ্য কেনার আগে কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। নো মেকআপ মেকআপপ্রেমীদের জন্য ট্রান্সলুসেন্ট স্ট্রিপগুলো বেশি কাজের হবে। ফুল ফ্রিঞ্জ লুক দেবে; তবে অনেক বেশি হ্যাপা ছাড়া। অন্যদিকে, সলিড ব্ল্যাক ব্যান্ডে মিলবে গ্ল্যাম গার্ল লুক। কারণ, এটি পরে নিলেই চোখে আসবে ফুল অন লাইনড আই লুক। তাই ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুসারে বেছে নেওয়া চাই ল্যাশের ব্যান্ডও। এমন ল্যাশ বেছে নিতে হবে, যা লম্বা ব্রাও বোনের খানিকটা নিচ অব্দি থাকবে। এতে করে চোখ খোলা হলে চোখের বাঁকে ল্যাশের খোঁচা লাগবে না। অনেকটা আন্দাজ করেই কিনতে হবে সে ক্ষেত্রে। কিন্তু লম্বা যদি কিনেই ফেলা হয়, সমস্যা নেই। যেকোনো সময় ছেঁটে নেওয়া যাবে। ভালো মানের স্ট্রিপ বেছে নিতে হবে কেনার সময়। এতে করে বারকয়েক ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাবে। একবার ব্যবহারের পর পাত্রে নিয়ে এর ওপর মেকআপ রিমুভার ঢেলে নিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে নির্দিষ্ট সময়। কিছুক্ষণ পর গ্লু গলে গেলে পেপার টাওয়েল দিয়ে ভালো করে মুছে নিতে হবে। ব্যস! পুনরায় ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠবে ল্যাশ।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: কণিকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: নাইমুল ইসলাম