দেহযতন I পায়ে প্রাণচাঞ্চল্য
এক জোড়া সবল পা সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি সাধারণ চলাফেরার জন্যও। তাই লেগ ওয়ার্কআউটে হেলা নয়
পা সবল ও শক্তিশালী করতে স্কোয়াট, ডেডলিফটসহ সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম আপনাকে সহায়তা করবে। সপ্তাহে ২-৩ দিনের রুটিনে লেগ ওয়ার্কআউটকে অন্তর্ভুক্তকরণ আপনার সুস্বাস্থ্যের পেছনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। হয়তো ভাবছেন, কোথা থেকে শুরু করবেন? জিমে গিয়ে ঘাম ঝরান কিংবা বাড়িতে বসেই ব্যায়াম করুন—একটি কার্যকরী লেগ ওয়ার্কআউট জটিলই হতে হবে, এমন নয়। সার্টিফাইড ট্রেইনার সাদিয়া শীলার কাছ থেকে জানা যাক কিছু দিকনির্দেশনা।
লেগ মুভমেন্ট
লেগ ওয়ার্কআউট প্রক্রিয়া সহজ হওয়াই শ্রেয়। স্কোয়াট, হিপ হিঞ্জস (ডেডলিফটস) এবং পা সামনের দিকে প্রসারণ অর্থাৎ শরীরের নিম্নাংশের মুভমেন্ট এই ওয়ার্কআউটে গুরুত্বপূর্ণ। স্বভাবতই এই মুভমেন্টগুলো পায়ের প্রধান পেশির ওপর ফোকাস করে। যেমন গ্লুটস, কোয়াডস, হ্যামস্ট্রিং ও কাভস। একবার এই মুভমেন্টগুলো আয়ত্ত করতে পারলে বিভিন্ন বৈচিত্র্য ও অগ্রগতির সম্ভাবনা আছে। এখানে লেগ ওয়ার্কআউট পরিকল্পনার একটি সহজ উপায় রয়েছে। স্কোয়াট দিয়ে শুরু করে, হিপ-হিং মুভমেন্টের পর সিঙ্গেল লেগ মুভমেন্ট।
এ ক্ষেত্রে শুরুর দিকে ফিটনেস বাড়াতে লেগ ওয়ার্কআউটে ৩-৫টি ব্যায়াম বেছে নিন। তারপর প্রতিটি ব্যায়াম ৮-১২ বার পুনরাবৃত্তি করে ৩ সেট সম্পন্ন করুন। খেয়াল রাখা চাই, আপনি নিজের পেশিগুলো ক্লান্ত করতেই কাজ করছেন।
সাদিয়া শীলার পরামর্শ, প্রতিদিন ৫টি ব্যায়ামের বেশি না করাই শ্রেয়। কেননা, এতে প্রতিটি মুভমেন্টে ফোকাস করার বেলায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা প্রয়োগ সম্ভব। যদি আপনার ওয়ার্কআউট প্রয়োজনের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা কার্যকারিতা হারাতে পারে।
সপ্তাহে কতবার লেগ ওয়ার্কআউট করা উচিত? শীলার মতে, পেশির সর্বাধিক বৃদ্ধিতে সপ্তাহে একবার ও তিনবার অনুশীলনের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। অনুশীলনের পরিমাণ অনুযায়ী সহ্য করার সক্ষমতাই পেশি বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি পার্থক্য তৈরি করে। অর্থাৎ আপনি পুনরাবৃত্তিসহ কত সেট ব্যায়াম সম্পন্ন করছেন। সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে ৩ সেট ১২ বার অথবা ৪ সেট ৮ বার চর্চা সপ্তাহে একাধিকবার ওয়ার্কআউট করার চেয়ে বেশি ফলপ্রসূ।
নিজেকে কীভাবে ওয়ার্কআউটের জন্য প্রস্তুত করবেন? একটি কার্যকরী ওয়ার্কআউটে প্রয়োজন সঠিক ওয়ার্মআপ ও কুলডাউন। ওয়ার্মআপের জন্য, আপনার হৃৎস্পন্দন ও রক্তসঞ্চালন বাড়াতে ৫ মিনিট হালকা কার্ডিও দিয়ে শুরু করুন। সময় থাকলে, সফট-টিস্যু প্রাণবন্ত করতে ৫ মিনিটের জন্য ফোম রোলারে হপ করুন। তারপর লেগ সুইং, হিপ ওপেনার, বডিওয়েট স্কোয়াট এবং লাঞ্জের মতো গতিশীল স্ট্রেচিংয়ে মনোযোগ দিন।
প্রয়োজনীয় ব্যায়াম
পরবর্তী লেগ ওয়ার্কআউট প্ল্যান তৈরির জন্য কিছু কার্যকরী ব্যায়াম বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাদিয়া শীলা।
ব্যাক স্কোয়াট
এটি সম্পন্ন করতে গ্লুটস, হ্যামস্ট্রিংসহ শরীরের নিম্নাংশে খেয়াল রাখুন।
সামনের দিকে তাকিয়ে, বুক টান টান করে, কাঁধে একটি বারবেল নিয়ে, কাঁধ বরাবর পা প্রশস্ত করে, পায়ের আঙুলের ওপর হালকা ভর দিয়ে দাঁড়ান।
হাঁটু ভাঁজ করে উঠবস করুন। নিশ্চিত করুন, হাঁটু আপনার সামনের দিকে যাচ্ছে।
ঊরু মাটির সমান্তরাল হওয়া পর্যন্ত অথবা নিজের সামর্থ্যের মধ্য থেকে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।
ফ্রন্ট স্কোয়াট
এটি সম্পন্ন করতে নিজের শরীরের সামনের অংশে মনোনিবেশ করুন।
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের কাঁধের সামনের দিকে একটি বারবেল রাখুন এবং কনুই ওপরের দিকে ঠেলুন।
হাঁটু ভাঁজ করে উঠবস করুন। নিশ্চিত করুন, হাঁটু আপনার সামনের দিকে যাচ্ছে।
ঊরু মাটির সমান্তরাল হওয়া পর্যন্ত অথবা নিজের সামর্থ্যের মধ্য থেকে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।
রোমানিয়ান ডেডলিফট
এর সাহায্যে গ্লুটস, হ্যামস্ট্রিং ও কাভসের পাশাপাশি হিপসের সচলতা বাড়ানো সম্ভব।
দৃষ্টি সামনে রেখে, পিঠ সোজা করে, দুটি ডাম্বেল অথবা একটি বারবেল ধরে রাখুন।
পায়ে ভর রেখে, হাঁটু সামান্য বাঁকা করে, সামনের দিকে ঝুঁকে হ্যামস্ট্রিং প্রসারিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
বিরতি নিয়ে, তারপর দাঁড়ানোর জন্য হিপসকে সামনের দিকে ধাবিত করুন, এতে গ্লুট নড়াচড়ায় শক্তি পাবে।
গুড মর্নিং
হিপ-হিং মুভমেন্টের গুড মর্নিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার হ্যামস্ট্রিংকে ক্রিয়াশীল করে তুলুন।
কাঁধে একটি বারবেল নিয়ে, কাঁধ বরাবর পা প্রশস্ত করে দাঁড়ান।
হাঁটু নমনীয় রেখে, মাথা নিচু করে, হিপস পেছনের দিকে নিন। এটি করার সময় বুক টান টান এবং দৃষ্টি সামনের দিকে রাখুন।
হ্যামস্ট্রিংয়ে প্রসার অনুভূত না হওয়া পর্যন্ত নিচের দিকে নামুন। এরপর গ্লুটসের সাহায্যে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।
ওয়াকিং লাঞ্জেস
ওয়াকিং লাঞ্জেস মুভমেন্টের মাধ্যমে কোয়াডস, হ্যামস্ট্রিং, গ্লুটস, সেই সঙ্গে পুরো শরীরের ভারসাম্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন।
আপনি যদি ওয়েটেড ওয়াকিং লাঞ্জ করতে চান, সে ক্ষেত্রে দুটি ডাম্বেল হাতে নিয়ে দুই পা একত্র করে দাঁড়ান।
বুক টান টান করে, দৃষ্টি সম্মুখে রেখে সামনে দিকে পা ফেলুন। ডান পা দিয়ে লাঞ্জিং করুন, যতক্ষণ না ঊরু ভূমির সমান্তরাল হচ্ছে।
ডান পায়ের গোড়ালিতে ভর দিয়ে পুশ করুন এবং আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।
একই চর্চা বাঁ পা দিয়ে করুন।
রিভার্স লাঞ্জ
ওয়াকিং লাঞ্জেরই অনুরূপ রিভার্স লাঞ্জ। আদর্শ লাঞ্জ পজিশনিং কার্যকর করার জন্য এটি চমৎকার অনুশীলন।
বাহুগুলো নিচের দিকে রেখে পা দুটো কাঁধ বরাবর প্রশস্ত করে দাঁড়ান।
ডান পায়ের পাতা পেছনের দিকে আনুন এবং বাঁ পা ৯০ ডিগ্রি কোণ না হওয়া পর্যন্ত লাঞ্জিং করুন। ঘাড় সোজা রাখুন।
বাঁ পায়ের গোড়ালিতে ভর দিয়ে পুশ করুন এবং আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।
লেটারাল লাঞ্জ
আমরা সাধারণত সামনে-পেছনে চলাচল করি। তবে লেটারাল লাঞ্জের মতো সাইড-টু-সাইড মুভমেন্ট আমাদের স্থিতিশীলতা ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
মাঝারি দূরত্বে পা ছড়িয়ে দাঁড়ান।
ঘাড় সোজা রেখে, বাঁ হাঁটু ভাঁজ করে, বাঁ হিপের ওপর বসুন। এরপর বাঁ পা ৯০ ডিগ্রি কোণ না হওয়া পর্যন্ত নিচের দিকে নামান।
আগের অবস্থানে ফিরে আসুন এবং পুনরাবৃত্তি করুন। প্রতি পাশের কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক পুনরাবৃত্তি সম্পন্ন করুন।
স্টেপআপ
এর সাহায্যে নিজের শক্তি, ভারসাম্য ও সামর্থ্য বাড়াতে পারবেন।
একটি বেঞ্চ অথবা এক ফুটের মতো উঁচু কোনো স্থানে দাঁড়ান। যদি ওয়েটেড স্টেপআপ করতে চান, তাহলে দুটো ডাম্বেল হাতে রাখুন।
ডান পা বেঞ্চের ওপর রাখুন। দুই পা একত্র করতে বাঁ পায়ের গোড়ালিতে ভর দিয়ে পুশ করুন।
আগের অবস্থানে ফিরে আসতে বাঁ পা নিচে নামান।
গ্লুট ব্রিজ
ব্যায়ামটি সম্পন্ন করতে প্রয়োজন শুধু শরীরের ভর।
বাহু দুপাশে নিচ দিকে নিয়ে, পা ভূমির সমতলে রেখে, হাঁটু ভাঁজ করে, পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ুন।
নিশ্বাস নিন, দুই পায়ের গোড়ালিতে ভর দিয়ে পুশ করুন এবং হিপ ওপরের দিকে উঠিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করুন।
নিশ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।
হিপ থ্রাস্ট
এর মাধ্যমে গ্লুটের আকার ও শক্তি বাড়ানো সম্ভব।
একটি বেঞ্চ বা সোফার মতো উঁচু স্থানে বসে হিপের ওপর একটি বারবেল, ডাম্বেল অথবা প্লেট রাখুন। এই প্রক্রিয়া চলাকালে শরীরের সম্পূর্ণ ভর হাতের ওপর রাখা চাই।
সেটআপ করার জন্য কাঁধ বরাবর পা ছড়িয়ে ভূমির সমতলে রাখুন এবং হাঁটু ভাঁজ করে হিপস নামিয়ে আনুন বেঞ্চের উচ্চতা থেকে। খেয়াল রাখুন, বেঞ্চটি আপনার কাঁধ বরাবর অবস্থান করছে এবং পা জোড়া ৯০ ডিগ্রি কোণ তৈরি করেছে কি না।
চিবুক শক্ত রাখুন এবং হিপস মাটির দিকে নামিয়ে আনুন। পা স্থির রেখে নিচের দিকে নামুন এবং ঘাড় মাটির সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোণ তৈরি করলে থামুন।
ঊরু পুনরায় ভূমির সমান্তরাল হওয়া অব্দি গোড়ালিতে ভর দিয়ে পুশ করুন।
গ্লুট কিছুক্ষণ একই অবস্থানে ধরে রেখে আগের জায়গায় ফিরে আসুন।
পায়ে প্রাণচাঞ্চল্য আনতে আরও কিছু লেগ ওয়ার্কআউট যেমন গোব্লেট স্কোয়াট, লেগ প্রেস, লেগ কার্ল, বুলগেরিয়ান স্প্লিট স্কোয়াট, সিঙ্গেল লেগ ডেডলিফট প্রভৃতির চর্চা করতে পারেন। প্রয়োজনে পরামর্শ নিন বিশেষজ্ঞের।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট