যাপনচিত্র I বর্ষণমুখরতা
ইমতিয়াজ বর্ষণ। জনপ্রিয় অভিনেতা। একের পর এক ভিন্নধর্মী চরিত্রে পর্দায় উপস্থিতির মাধ্যমে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন। ছোট পর্দা, ওটিটি ও বড় পর্দা—সবখানেই বিচরণ। চলচ্চিত্রে অভিষেক ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’-এর মাধ্যমে
তার লাইফস্টাইলের বড় অংশজুড়ে গান ও অভিনয়। যদিও শেখার যথাযথ সুযোগ পাননি, তবু ইতিমধ্যে ১০-১৫টি গান হয়েছে তার কণ্ঠবন্দী। সুমন টিংকুর লেখায়, প্রথম গান সুর করেন প্রায় ১৭ বছর আগে। বহুদিন পর সেই গানই মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমায় জায়গা পেয়েছে, ‘প্রথম’ শিরোনামে, কিংবদন্তি বেজিস্ট ও রকস্টার সুমনের কণ্ঠে।
চট্টগ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইমতিয়াজ বর্ষণের পথচলা নিষ্কণ্টক ছিল না। বেশ কিছু সামাজিক প্রতিকূলতার মুখে পড়লেও মঞ্চে অভিনয়ের পাঠ নিতে শুরু করেন। ২০০০ সালে ‘তির্যক নাট্যগোষ্ঠী’র মাধ্যমে সেই যাত্রার সূচনা; এরপর যোগ দেন ‘আভাঁ-গার্দ’-এ। ঢাকায় পাড়ি জমান ২০১০ সালে। এর পরের বছর পর্দায় প্রথম অভিনয় করেন ‘শাস্তি’তে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বিখ্যাত ছোটগল্পকে টিভি নাটকে রূপ দিয়েছিলেন নূরুল আলম আতিক।
অবসর পেলে ঘুম থেকে একটু দেরিতে ওঠেন বর্ষণ। কাজ শেষে দেরিতে ঘুমোতে যাওয়াই কারণ। সকালের নাশতায় থাকে রুটি, ডিম ও বাটারের মতো সহজলভ্য খাবার। দুপুরে ভাতই প্রাধান্য দেন; সঙ্গে মাছ বা মাংস ও সবজি। সন্ধ্যায় ভারী খাবার খেলে সেদিন আর আলাদা করে ডিনার সারেন না।
অবসরে স্ক্রিপ্ট পড়েন; কোন গল্প বা চরিত্রে অভিনয় করবেন, ঠিক করে নেন তা। পছন্দ হলেই কাজে নামেন। এখন অবশ্য অখণ্ড অবসর তেমন মেলে না; তবু যেটুকু সময় পান, গান শুনে, সিনেমা দেখে, বই পড়ে ও ব্যায়াম করে কাটিয়ে দেন।
নব্বইয়ের দশকে জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, হাসানের মতো রকস্টার এবং ওয়ারফেজ, মাইলস, সোলস, ফিডব্যাকের গান তাকে দারুণ বুঁদ করে রাখত; রাখে এখনো। পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাক, আর্টসেল, শিরোনামহীন, অর্থহীন, নেমেসিস, আরবো ভাইরাসেরও অনুরাগী হয়েছেন। দেশের বাইরে পছন্দের ব্যান্ড পিংক ফ্লয়েড, কুইন, স্করপিয়ন, গানস অ্যান্ড রোজেস, দ্য ঈগলস, ইউটু প্রভৃতি। অনুপ্রেরণা পেয়েছেন জন ডেনভার, এলটন জন, বব মার্লির গান থেকেও।
মন খারাপের সময়ে সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ সিনেমাটি ইমতিয়াজ বর্ষণকে খুব অনুপ্রাণিত করে। তা ছাড়া একই নির্মাতার ‘হীরক রাজার দেশে’, জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে কোহিনূর আক্তার সুচন্দার ‘হাজার বছর ধরে’ মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছেন বারবার। জহির রায়হানের নির্মাণও বেশ পছন্দের। বাংলার বাইরে মার্টিন স্করসেজি তার পছন্দের ফিল্মমেকার। রবার্ট ডি নিরো, আল পাচিনো আছেন প্রিয় অভিনেতার তালিকায়। বিদেশি মুভির মধ্যে পছন্দের তালিকায় ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’, ‘ক্যাসাব্লাঙ্কা’, ‘রোমান হলিডে’, ‘টাইটানিক’ প্রভৃতি। সেলিব্রিটি ক্রাশ বলতে তার মানসপটে ভেসে ওঠে ড্রিউ ব্যারিমোর, ঐশ্বরিয়া রাই ও আলিয়া ভাটের মুখ।
প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের কল্যাণেই বই পড়ার নেশা চাপে বর্ষণের জীবনে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’ উপন্যাস তাকে মুগ্ধ করেছে। এ ছাড়া বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন প্রিয় লেখকের তালিকার শীর্ষে। সময়স্বল্পতায় ইদানীং জিমে নিয়মিত হতে পারেন না। তবে বাসায় ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করেন। কার্ডিওতে বেশি আগ্রহী; ৭০ ভাগ সময় কার্ডিওতে আর বাকি ৩০ ভাগ ব্যয় করেন ওয়েট লিফটিংয়ে।
ভ্রমণ ঘিরেই তার যত শখ। তবে দেশে ঘোরাঘুরি বেশি। রাঙামাটির পাহাড়, নদী ও কাপ্তাই লেক খুব পছন্দ। দেশের বাইরে বলতে ভারতে দুবার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় একবার একটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গিয়েছিলেন। চলতি বছর সময় বের করতে পারলে নেপাল ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ায় আরেকবার ঢুঁ মারার ইচ্ছা রয়েছে।
ইমতিয়াজ বর্ষণকে একেক সময় একেক রকম হেয়ারস্টাইলে দেখা যায়। শুটিংয়ের স্বার্থে হেয়ারস্টাইল চেঞ্জ করতে হলেও চুল বড় রাখতেই পছন্দ। অ্যাকসেসরিজের প্রতি রয়েছে মুগ্ধতা। স্পোর্টস ওয়াচ এবং রেভলন কিংবা গুচি সানগ্লাস; সঙ্গে ডিওরের পারফিউম। প্রাত্যহিক জীবনে ঘড়ি, সানগ্লাস আর সেলফোন তার কাছে পার্ট অব লাইফ। স্টাইলে প্রথমে খোঁজেন কমফোর্ট, তারপর কালার ও ফিটিংস। পোশাকে প্রিয় রং কালো, সাদা ও নীল।
হোম ইন্টেরিয়রে খুব সাধারণ ও ফাঁকা রুমে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, যেখানে স্পেসের অধিকাংশ থাকবে খালি। কথা বললে ইকো হয় এবং হেঁটে বেড়ানো যায়—এমন। বেডরুমে হয়তো একটি বিছানা, কাপড় রাখার জন্য আলমারি বা ওয়্যারড্রোব এবং ড্রয়িংরুমে বসার জন্য সোফা আর একটা টিভি, ব্যস! খুব বেশি ফার্নিচার পছন্দ নয় তার; একটু খোলামেলা থাকবে, আর একটু আলোছায়া। ওয়ার্ম লাইট পছন্দ করেন।
ভবিষ্যতের জীবনসঙ্গী সম্পর্কে জানতে চাইলে তার উপলব্ধি, ‘পার্টনার আমার কাছে সেটেলমেন্ট। পার্টনার হচ্ছে এমন মানুষ, যার কাছে মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাব। কোনো বিশেষণে বিশেষায়িত না করে সেটি সম্পূর্ণ অনুভবের বিষয়।’
ইমতিয়াজ বর্ষণ আড্ডাবাজ। আড্ডায় বসলে দিন-রাত মনে থাকে না! এ ক্ষেত্রে শৈশবের, চট্টগ্রামের কিছু বন্ধু আছে, তারা ঢাকায় এলে কিংবা নিজে চট্টগ্রামে ঘুরতে গেলে দেখা হয়। বর্তমানের ফ্রেন্ড সার্কেল অবশ্য মিডিয়াকেন্দ্রিক। ডিরেক্টর, অ্যাকটর, ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ যারা করেন, তাদের সঙ্গেই বেশি সময় কাটে। ইনডোরেই আড্ডা হয় বেশি।
কর্মই তার কাছে জীবনদর্শন। ‘কর্মে সাফল্য পাবেন, নয়তো কিছু না কিছু শিখবেন’—এমনটাই অভিমত। তার প্রিয় ব্যক্তিত্ব বাবা, গুরু অসীম দাস এবং জীবনে বিভিন্ন সময়ে পাওয়া কয়েকজন শিক্ষক।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন