নখদর্পণ I পোস্ট পার্টি
সঠিক যত্নের অভাবে সমস্যা হতে পারে নখে। অবস্থা গুরুতর হলে সংকট হবে দীর্ঘস্থায়ী। বাঁচার উপায় বাতলে দিচ্ছেন বিদিশা শরাফ
শীতের শেষ। উৎসবের সূচনা। মানে, নিজের একটু বাড়তি যত্ন। বছরের এই সময়টাতে পারলারগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। নখযত্নের নানা সেবা নিতে। কেউ নেইল এক্সটেনশন নিয়ে ব্যস্ত, কেউবা পেডিকিউর-মেনিকিউর। আবার কারও পছন্দ জেল বা অ্যাক্রিলিক সার্ভিস। কিন্তু সাবধান! নখের ব্যাপারে ডার্মাটোলজিস্টদের কথা অগ্রাহ্য করে যারা পরতের পর পরত নেইলপলিশ অ্যাপ্লাই করছেন, কিংবা একের পর এক অ্যাক্রিলিক সেশন নিচ্ছেন, অথবা রেগুলার মেনি-পেডিকিউরের নামে নখকে প্রায়ই কেমিক্যালের সংস্পর্শে আনছেন, তাদের জন্যই এখন সময় একটু যত্নশীল হওয়ার। নখের ওপর বাড়তি ঘষামাজা নখকে ভঙ্গুর করে দিতে পারে। তাই উৎসবের এই মৌসুমে যতই নিজেকে সাজানো হোক না কেন, শুধু নখ বিশ্রী দেখালে তা-ই হয়ে দাঁড়াবে পারফেক্ট লুকের অন্তরায়।
‘উৎসবের সময় নখের ওপর একটু বাড়তি অত্যাচার হয়েই যায়। একটু নাটকীয়তা, একটু রঙের খেলা—এসবেই থাকে আকর্ষণ। দেখা যায়, গ্রাহকের আকাক্সক্ষার শেষ নেই; নেই কোনো সীমা। কেউ চান গ্লিটার, কেউ আবার এক্সটেনশন, কারও অ্যাক্রিলিক। নখের ওপর হরেক রকম এক্সপেরিমেন্ট করতে সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ—কেউই বাদ পড়েন না। ফলে নখের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ক্ষতির মুখে পড়ে’—কথাগুলো লন্ডন বেজড বিউটি এক্সপার্ট মেনিকিউরিস্ট ম্যাডি ডোগ্রারের। তবে স্টাইলিং করলেই যে নখের সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে আপোস করতে হবে, ব্যাপারটা ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে মেনে চলা চাই সঠিক নেইল রুটিন।
অগ্রাধিকারসূত্রে
ছোটবেলায় স্কুলের দিনগুলোতে মায়েরা যেভাবে নখ কেটে দিতেন, শুরুটা করা যেতে পারে তেমনভাবে। নখের স্বাভাবিক ট্রিমের চেয়ে ট্রেন্ডি আর ক্ল্যাসিক—লুক হতে পারে না কোনো কিছুই। অনেকের মনে হতে পারে, শুধু নখ কেটে রাখলেই চলবে? পরিষ্কার করে কাটা সুস্থ নখ থেকে সুন্দর আর কিছুই হতে পারে না, সে কথা মানেন খোদ নেইল এক্সপার্টরা। নেইলপলিশ অ্যাপ্লাই করা থাকলে রিমুভার দিয়ে মুছে নেওয়া যেতে পারে। এরপর হ্যান্ডওয়াশ আর নেইল ক্রিম মাসাজ করে নিতে হবে। যাদের নখে অ্যাক্রিলিক অথবা জেলের এক্সটেনশন আছে, তাদের জন্য বাড়িতে বসে রিমুভাল প্রসেসে না যাওয়াই শ্রেয়। অবশ্যই কোনো নেইল প্রফেশনাল বা বিউটি এক্সপার্টের সাহায্য নিয়ে এক্সটেনশন সরিয়ে নেওয়া উচিত, নইলে হিতে বিপরীতের শঙ্কা।
হ্যান্ডক্রিমে অনীহা নয়
আবহাওয়ার পরিবর্তন এই সময় ত্বক রুক্ষ করে ফেলে। যেহেতু হাত দুটো বেশির ভাগ সময় অনাবৃত থাকে, তাই হাতের ত্বক শরীরের অন্য অংশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত রুক্ষ হয়। সারাতে হ্যান্ডক্রিম আর কিউটিকল হতে পারে দারুণ সমাধান। ড্রয়ারের কোনায় বা ব্যাগের ভাঁজে রাখা হ্যান্ডক্রিমটা বের করার উপযুক্ত সময় তবে এখনই। নখে যদি নেইলপলিশের বাড়তি কোনো রং না থাকে, তবে হাতের ত্বক কিংবা নখগুলোর উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে হ্যান্ডক্রিম অ্যাপ্লিকেশনের চেয়ে ভালো সমাধান আর কিছু হতে পারে না।
এগুলো মাখার বেস্ট টাইম হতে পারে রাতে শোয়ার আগে। এ সময়ে বারবার হাত ধোয়ার ঝামেলা থাকে না। রিঅ্যাপ্লিকেশনেরও ঝক্কি নেই। একবার হাত ভালো করে কোনো একটা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ঘুমুতে যাবার ১০ মিনিট আগে হাতে মাখিয়ে নেওয়া যায় হ্যান্ডক্রিম কিংবা কিউটিকল অয়েল।
সুষম খাবারে সৌন্দর্য রক্ষা
নখের পুরো অংশটাই প্রোটিনে তৈরি। তাই নখের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে ডায়েটে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার; যেমন ডিম, মাংস, দুধ—এসব রাখা যেতে পারে। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলেও নখ ভেঙে বা ফেটে যেতে পারে; তাই ডায়েটে রাখা যায় দই, পনির, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট। ক্ষতিগ্রস্ত নখের কথা মাথায় রেখে অনেক স্যালনই চালু করেছে নেইল স্ট্রেনদেনিং ট্রিটমেন্ট। শুধু ডায়েটে যে কাজ হবে এমনটা নয়, নখে অতিরিক্ত কেমিক্যাল যদি নখের দুরবস্থার জন্য দায়ী হয়, তবে একজন মেনিকিউরিস্টের সাহায্য নিলে সবচেয়ে ভালো হবে।
নিরাপদে নখ রাঙাতে
নখে রং নিয়ে যাদের খেলা করার অভ্যাস, নেইলপলিশ অ্যাপ্লিকেশনের আগে বেইজ কোট প্রয়োগ ভোলা যাবে না। একের পর এক লেয়ারিং নিজেদের মধ্যে কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে রং বদলে ফেলে। এতে নেইলপলিশ ফাঙ্কি লাগলেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে নখ।
নেইলপলিশ ঘষে ঘষে তুলে ফেলা কখনোই উচিত নয়; এতে নেইলপলিশের সঙ্গে নখের উপরিভাগের স্তর উঠে আসতে পারে। নেইলপলিশ রিমুভারের সাহায্যে পাতলা কাপড় কিংবা তুলো দিয়ে আলতো করে ঘষে দিলেই উঠে আসবে নেইলপলিশ। নেইলপলিশ অ্যাপ্লিকেশনের পর, ওপরে ওয়াটার কালারের বেইজ কোট বাইরের অক্সিজেনের সঙ্গে নেইলপলিশের রিঅ্যাকশন রুখে দিতে পারে।
ওভারলেয়ারিংয়ে বিপদ
নখের ওপর জেল কিংবা অ্যাক্রিলিকের বারবার অ্যাপ্লিকেশন নখকে ভঙ্গুর করে দিতে পারে। যাদের ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস, তারা জেল নয়; অ্যাক্রিলিক অ্যাপ্লিকেশন বেছে নিলেই ভালো। তবে জেলের ব্যবহার অ্যাক্রিলিক থেকে কিছুটা সহজ। জেল হোক বা অ্যাক্রিলিক, অ্যাপ্লিকেশন কিংবা রিমুভাল—কোনোটাই এক্সপার্ট ছাড়া করানো উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে নখ দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্টাইলিংয়ের জন্য ঘন ঘন জেল অ্যাপ্লিকেশন নখের স্বাভাবিক বৃদ্ধি রুখে দিতে পারে। স্বাভাবিক হাইড্রেশন ধরে রাখতে তাই প্রতি দুই মাস পর একটা ব্রেক নেওয়া জরুরি। এতে নখ তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে বেড়েও ওঠে দ্রুত। উজ্জ্বলতাও ফিরে আসে।
কথায় বলে, হাতের ত্বক দেখলেই বয়স আন্দাজ করা যায়। আর সুন্দর নখ তো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতীক। তাই ত্বকের মতো হাতেরও যত্ন নেওয়া চাই, ঘরে বসে কিংবা স্যালনে, রেগুলার ডায়েট কিংবা ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শে; নখের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে।
ছবি: সংগ্রহ