টেকসহি I হালাল সার্টিফাইড
ইসলামি বিশ্বাসে ইন্ধনজাগানিয়া। জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রে তা বজায় রাখা যাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের জন্য। কনসেপ্ট ক্রুয়েলটি-ফ্রি এবং ভেগান কসমেটিকসের সদৃশ
বিশ্বজুড়ে ব্যাপারটি নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। সংশয়ও রয়েছে মেলা। কারণ, ইসলামে অনুমোদিত হওয়া মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। সৌন্দর্যসংক্রান্ত ব্যাপারটি তো আরও কড়াকড়ি। এটি মূলত সেসব ভোক্তার চাহিদা মেটায়, যারা তাদের দেহের সংস্পর্শে আসা যেকোনো পণ্যের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। মনভোলানো কোনো কনসেপ্টের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়নি হালাল বিউটি; বরং ভিতটা শক্তিশালী বিশ্বাসের। তাই বলে যে শুধু মুসলিম হলেই হালাল সার্টিফাইড পণ্য ব্যবহার করা যাবে, ব্যাপারটা মোটেই তেমন নয়। যারা ক্লিন এবং ক্রুয়েলটি-ফ্রি ট্যাগের বাইরে বিউটি প্রোডাক্ট ট্রাই করতে চান, তাদের জন্য চমৎকার অপশন হতে পারে এটি।
হালাল বিউটি কী
হালাল সার্টিফাইড মূলত নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নির্ণীত। ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক অনুমোদিত উপাদান দিয়ে তৈরি মানসম্মত এসব সৌন্দর্যপণ্য। বিশ্বজুড়ে খাবারের ক্ষেত্রে এই টার্মের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। তবে সৌন্দর্যবিশ্বেও এ নিয়ে চর্চা বেড়েছে।
অ্যালকোহল, শূকর অথবা এমন কোনো প্রাণী থেকে প্রাপ্ত উপাদান; যা ইসলামি আইনবিরোধী—এগুলোর কোনোটিরই উপস্থিতি থাকে না হালাল সৌন্দর্যপণ্যে। ইসলামি স্বাস্থ্যবিধি ও মানদণ্ড মেনে। এসব পণ্য মেখে অজুর কাজ হবে সম্পূর্ণ, এমনকি নামাজও আদায় করে নেওয়া যাবে অনায়াসে। হালাল সার্টিফিকেশন সেসব ভোক্তার মনে স্বস্তি জোগায়, যারা অসাবধানতাবশত এমন পণ্য ব্যবহার করে ফেলেন, যেগুলো ইসলামবিরোধী। এ ছাড়া ময়শ্চারাইজার, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের মতো ত্বকচর্চার পণ্যে হালাল সার্টিফিকেশনের তকমা সেসব গ্রাহককে আশ্বস্ত করতে পারে, যারা রূপচর্চার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু উপাদান এড়িয়ে চলতে ইচ্ছুক।
হালাল বিউটি প্রোডাক্টকে ক্লিন বিউটির কাতারেও ফেলা যায়। কারণ, এসব পণ্যে সালফেট, প্যারাবেন, ফরমালডিহাইড, ফ্যালেটস আর জিএমও-এর নামনিশানাও থাকে না। এ ছাড়া কোনো ধরনের প্রাণীর ওপর পরীক্ষা করা হয় না বলে ক্রুয়েলটি-ফ্রিও বলা চলে। তবে হালাল বিউটি প্রোডাক্ট যে সব সময় ভেগান হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ, প্রায়শই এতে মধু আর বিওয়াক্সের মতো উপাদানের উপস্থিতি মেলে।
হালাল হয়ে উঠতে
হালাল নির্দেশিকা মেনে বাছাই করা উপাদান ব্যবহারে তৈরি পণ্য মানেই যে তা অফিশিয়ালি হালাল সার্টিফাইড, তা মোটেই নয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাপার জেনে রাখা ভালো। কাঁচামাল এবং তার সোর্সিং ছাড়াও হালাল সার্টিফিকেশনের জন্য কোনো কিছু তৈরির পুরো প্রক্রিয়ায় অশুদ্ধ বস্তুর সংস্পর্শে যেন না আসে পণ্যটি, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। হালাল সার্টিফাইড পণ্যে অবশ্যই একটি হালাল সার্টিফিকেশন প্রতিষ্ঠানের সিলমোহর থাকা চাই। আগ্রহীরা মূলত সেটা দেখেই নিশ্চিত হবেন পণ্যের ধরন সম্পর্কে। তবে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, হালাল সার্টিফিকেশনের জন্য কম করে হলেও দুই বছর লেগে যায়; যা পণ্যের চাহিদা ও লভ্যতার মধ্যে বিস্তর ফারাক সৃষ্টি করে।
বাজারের সেরাটা
ইনক্লুসিভ স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড ফ্লোরা অ্যান্ড নূরের জেল ময়শ্চারাইজার ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় সচেতনদের কাছে। পলকা অনুভূত হওয়া এ পণ্য তৈলাক্ত অথবা মিশ্র ত্বকের জন্য দুর্দান্ত। সহজে শুষে নেয় ত্বক, করে তোলে হাইড্রেটেড, কোনো ধরনের চটচটে অবশিষ্টাংশ ছাড়াই। এর জেল টেক্সচার মেকআপের নিচে সুন্দর বেজ তৈরিতে সহায়তা করে। আর শুধু এটি ব্যবহারে চেহারায় ফুটিয়ে তোলে উজ্জ্বল আভা। ত্বকের জন্য কোমল, অর্গানিক ফর্মুলায় তৈরি, বেকড টেক্সচারের ইনিকা অর্গানিকের ব্লাশ ডুও ত্বকে দেয় সুন্দর, উজ্জ্বল ফিনিশ; যা দিনভর টিকে থাকে।
এ ছাড়া মিলবে অনেক ধরনের হালাল নেইলপলিশ। যেগুলো ব্রিদেবল টেকনোলজিতে তৈরি হয় সাধারণত। অজু ফ্রেন্ডলি হওয়ায় পানি ও বাতাস সহজে পলিশ ভেদ করে পৌঁছে যেতে পারে নখে। এসব নেইলপলিশ ফর্মুলেট করা হয় ভিটামিন ও মিনারেলের মতো প্রাকৃতিক উপাদানে। দেয় দীর্ঘ সময় টিকে থাকার নিশ্চয়তা। এ ছাড়া লিপ প্রোডাক্ট, সানস্ক্রিনসহ সৌন্দর্যচর্চার নানা হালাল পণ্য মিলবে বাজারে। শুধু দেখেশুনে নিশ্চিত হয়ে কিনে নেওয়ার দেরি।
বিউটি ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট