তনুরাগ I বডি সেরাম vs বডি অয়েল
ঘুরেফিরে সব কটির আসল কাজ একটাই। কিন্তু কিছু মৌলিক পার্থক্যের কারণে দেহভেদে পাল্টে যায় কার্যকারিতা। জানা থাকা চাই সঠিকটা বাছাইয়ের জন্য
আজকালকার দিনে দেহ আর্দ্র রাখার উপায় মিলবে অসংখ্য। বাম অথবা ক্রিমের মতো ভারী বিকল্প যেমন আছে, আছে পলকা লোশন বা সেরামের মতো একদম বিপরীতও। সব কটির মূল কাজ দেহত্বককে আর্দ্র রাখা বটে; কিন্তু একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো মিল নেই। যেমন বডি সেরাম বা অয়েলের কথাই ধরা যাক। যদিও দুটোর কাজ ত্বকের ময়শ্চার বুস্ট করে ত্বক কোমল রাখা; কিন্তু পার্থক্য রয়েছে উপাদান, শোষণ ক্ষমতা, টেক্সচার আর প্রয়োগে। সেরামের মলিকিউলগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট হয়ে থাকে এবং ফর্মুলা ওয়াটার-বেসড। ফলে ত্বকের গভীরে পৌঁছে যায় সহজে। অন্যদিকে বডি অয়েল গঠিত হয় বড় মলিকিউল দিয়ে; যা ত্বকের ওপরে বসে থাকে, আর্দ্রতা আটকে রাখতে সহায়তা করে।
বডি সেরাম কী
ওয়াটার-বেসড লাইটওয়েট ময়শ্চারাইজার। মূলত হায়ালুরনিক অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর পেপটাইডের মতো উপাদানগুলো সরবরাহ করে ত্বক আর্দ্র রাখে। তবে কোনো ধরনের চিটচিটে অনুভূতি ছাড়া। ত্বকবান্ধব উপাদানগুলোকে পৌঁছে দেয় ত্বকের অনেক গভীরে। কারণ, সেরামের মলিকিউলগুলো ছোট এবং ওয়াটার-বেসড। ক্লিনজিংয়ের পর, ভারী ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের আগে এর ব্যবহার জরুরি। সেরামের দ্রুত শোষিত হওয়ার সক্ষমতার পাশাপাশি আর্দ্রতা আর জরুরি উপাদানগুলোর ত্বকের গভীরে পৌঁছে দেওয়ার কার্যকারিতার ফলে অনেক উপকার একসঙ্গে পাওয়া যায়। সেলুলার টার্নওভারের উন্নতি সাধিত হয়, কোলাজেন উৎপাদনের হার বাড়ে এবং ত্বক গভীর থেকে তারুণ্যদীপ্ত হয়ে ওঠে। সব ধরনের ত্বকে মানানসই বডি সেরাম। আর অ্যাকনে-প্রন অথবা স্পর্শকাতর হলে তো কথাই নেই। শুধু সেরামের পর বাড়তি পণ্য ব্যবহারে একটু সতর্ক হলেই চলবে। খুব বেশি শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে সেরামের পর ভারী ময়শ্চারাইজার মাখা প্রয়োজন। স্বাভাবিক থেকে তৈলাক্ত ত্বকে সেরাম ভালো কাজ করে। সারিয়ে তুলতে পারে হাইপারপিগমেন্টেশন, নির্জীবতা আর বয়স বাড়ার চিহ্ন।
বডি অয়েল কী
অয়েল-বেসড এই লুব্রিকেন্টগুলোর কাজ দেহকে আর্দ্র রাখা। ত্বক উজ্জ্বলও দেখায় এগুলোর ব্যবহারে। বড় মলিকিউলযুক্ত হওয়ার ত্বকের ওপরে সুন্দর করে বসে থাকে। গভীরে প্রবেশের সুযোগ পায় না। তাই ত্বকবান্ধব অন্য যেকোনো উপাদানের সরবরাহকারী হিসেবে বডি অয়েল কার্যত দুর্বল। সেরা বডি অয়েলগুলোতে এসেনশিয়াল অয়েলের উপস্থিতি থাকবেই; পাশাপাশি আরও থাকে বিশেষ নানান সুবিধা দেওয়া সব উপাদান। এমনকি কুশনের মতো প্রতিরক্ষা দেয়ালও তৈরি করে দেয় বাহ্যিক ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান থেকে ত্বককে রক্ষার জন্য। সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা গেলেও শুষ্ক, পরিণত এবং ডিহাইড্রেটেড ত্বকের জন্য খুব ভালো। বডি অয়েল ব্যবহারে দেহত্বকের ওপর বাড়তি স্তর তৈরি হয়, যা ত্বকের আর্দ্রতা আটকে রাখে। করে তোলে কোমল। বিশেষ করে শুষ্ক, শীতল সময়ে। কিছু কিছু তেলে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান আবার অ্যাকনে আর রোজাসিয়ার মতো ত্বক সমস্যা সারায়।
পাওয়া যায় পার্থক্য
উপাদান তো বটেই, গঠনগত দিক থেকেও বিস্তর ফারাক বিদ্যমান বডি সেরাম আর অয়েলের মধ্যে। সেরাম উচ্চমাত্রার সক্রিয় উপাদান সরবরাহে সক্ষম। অন্যদিকে তেল শুধু অয়েল-বেসড উপাদানেই সীমাবদ্ধ। এ ছাড়া তেল সেরামের মতো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে প্রতিরক্ষা দেয়াল মেরামত, বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ অথবা সেল সিগন্যালিংকে প্রভাবিত করতে পারে না। বডি অয়েল আর সেরামের উপাদানেও মেলে ভিন্নতা। যেমন সেরাম সাধারণত হায়ালুরনিক অ্যাসিড, পেপটাইড, ভিটামিন সি, নিয়াসিনামাইড, উদ্ভিজ্জ নির্যাস আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে তৈরি হয়। অন্যদিকে বডি অয়েলের উপাদান তালিকায় জোজোবা, আমন্ড, আরগান, রোজহিপ, স্কোয়ালেনের উপস্থিতি চোখে পড়বেই।
এ ছাড়া বডি সেরামের মলিকিউলগুলো ছোট হবার দরুন ত্বকে দ্রুত শুষে নেয়, চিটচিটে ভাব ছাড়াই। অন্যদিকে তেলের বড় মলিকিউলের কারণে এর দৌড় ত্বকের উপরিস্তর অবধি। আর তেল চিটচিটে ভাব তো থাকবেই।
সেরাম ত্বককে গভীরভাবে হাইড্রেট করতে সক্ষম, একদম ভেতর পর্যন্ত আর্দ্রতার জোগান দেওয়ার মাধ্যমে। পুষ্ট ও পুনরুজ্জীবিত দেখাতে। অন্যদিকে তেল আর্দ্রতাকে ধরে রাখার কাজ করে হাইড্রেশনকে প্রতিরক্ষামূলক দেয়ালের মাধ্যমে আটকে রেখে। সেরাম ব্যবহার করা উচিত সিক্ত ত্বকে। গোসলের পর ব্যবহার করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। এ সময় ত্বকের শুষে নেওয়ার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে। অন্যদিকে তেল ব্যবহার করা যেতে পারে সেরাম মাখার পরে। অথবা কিছু ছাড়া মাখলেও চলবে। রাতে তেল মেখে ঘুমালে সকালে মিলবে মাখন-মসৃণ ত্বক। সামান্য ভেজা ত্বকে কিংবা সেরাম মাখার পর ব্যবহারে মিলবে সবচেয়ে উপকার। তারপর সকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার মাস্ট।
সমস্যা সারাইয়ে
শুষ্ক ত্বকের জন্য বডি অয়েলের চেয়ে অ্যাকটিভ সেরামই বেশি কাজের। ফাইন লাইন, ডার্ক স্পট, টেক্সচার আর টোন নিয়ে সমস্যা থাকলে তা সারাইয়ে বেশি কার্যকর হবে। তেল ত্বকে সেবামের প্রভাব অনুকরণে সহায়তা করে। অ্যাকনে আর রোজাশিয়ার ফলে সৃষ্ট প্রদাহ সারাতে সহায়ক।
বাছাইয়ের আগে
বডি সেরাম নাকি অয়েল? বাছাই নিয়ে বিভ্রান্ত থাকলে ত্বকের ধরন, সমস্যা আর ঋতুভিত্তিক পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ত্বক স্বাভাবিক থেকে তৈলাক্ত হলে এবং সমস্যাজনিত হলে সেরামই সেরা পছন্দ। এগুলো পলকা অনুভূত হয় এবং সক্রিয় উপাদানগুলো ত্বকে শুষে যায় সহজে। অন্যদিকে শুষ্ক, পরিণত ত্বকের জন্য অথবা শীতকালে বডি অয়েল ব্যবহারই শ্রেয়। জরুরি বাড়তি ময়শ্চারাইজেশন এবং প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল তৈরি, বিশেষ করে শীতকালে। যাদের ত্বক মিশ্র, তারা প্রথমে সেরাম, তারপর তেল মেখে নিলেই মিলবে একদম সঠিক মাত্রার হাইড্রেশন এবং দীর্ঘস্থায়ী আর্দ্রতা।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: মৃদুলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সালেক বিন তাহের