ত্বকতত্ত্ব I রোজার প্রভাব
পুরোটাই শারীরিক ও মানসিক। যা সরাসরি প্রভাবিত করে সামগ্রিক সৌন্দর্যকে। বিস্তারিত জানতে হবে তো
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পানাহারে বিরত থাকার মাধ্যমে আসে মানসিক স্বচ্ছতা। ধৈর্যের অভ্যাসে ফিরে আসে স্বস্তি। এক মাস রোজা রাখার সময় ধীরে ধীরে যখন এর সঙ্গে শরীর খাপ খাইয়ে নিতে থাকে, তখনই দেহে কিটোনের প্রোডাকশন শুরু হয়। এটি মানসিক স্বচ্ছতা দেওয়ার পাশাপাশি মস্তিষ্ককে জ্বালানি দেয়, অর্থাৎ এনার্জি প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করে। রোজা রাখার ফলে শরীরে বিডিএনএফ নামের একধরনের প্রোটিন উৎপাদিত হয়, এটি মস্তিষ্কের সঠিক বৃদ্ধি ও কাজ করতে সহায়তা করে। এই প্রোটিন সামগ্রিকভাবে মুড কন্ট্রোলের সঙ্গেও জড়িত। রোজা রাখার আরও গুণাবলির মধ্যে রয়েছে স্ট্রেসের পরিমাণ কমা, ঘুম ভালো হওয়া, রক্তসঞ্চালন বাড়া এবং ব্রণ কমে যাওয়া।
ডিটক্সিফিকেশন
রোজা রাখার ফলে শরীর একপ্রকার ডিটক্সিফিকেশনের মধ্য দিয়ে যায়। পুরো বছরে ধরে জমতে থাকা টক্সিন ফাস্টিংয়ের মাধ্যমে শরীর থেকে ধীরে ধীরে দূরীভূত হয়। ভেতর থেকে ডিটক্স হওয়ার ফলে ত্বকও এক্সফোলিয়েট হওয়ার সুযোগ পায়। দেখায় কোমল ও মসৃণ। ত্বকের সঠিক ডিটক্সিফিকেশনের জন্য রোজার সময় যতটুকু সম্ভব চিনিযুক্ত শরবত পরিহার করা যেতে পারে। ঘরে তৈরি ডিটক্স ওয়াটার (ইফতার কিংবা সেহরির ৬ ঘণ্টা আগে পানিতে লেবু, শসা, আদা ভিজিয়ে রাখা পানি) পান করার মাধ্যমে ইফতার শুরু করা যেতে পারে। শরীর এতে ভেতর থেকে শীতল হবে; পাশাপাশি হঠাৎ সুগার স্পাইকিং থেকে বাঁচা যাবে। পানি কম পান করা হলে ডিটক্সিফিকেশনের কারণে শরীর শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই ইফতার-পরবর্তী সময়ে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি ত্বকে নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে ত্বক হাইড্রেটেড রাখা যায়।
স্ট্রেস কমাতে
কর্টিসল অর্থাৎ স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোজা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানসিক চাপ কমে যাওয়ার ফলে মনে স্বচ্ছতা ত্বরান্বিত হয়, শরীরে চাঙা ভাব আসে, সেই সঙ্গে ত্বকেও আসে উজ্জ্বলতা। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ত্বকে ব্রেক আউটের পাশাপাশি চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল, আর অনুজ্জ্বল ত্বকের সৃষ্টি করতে পারে, যা রোজা রাখার মাধ্যমে খুব সহজে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
এ ছাড়া পরিপাকতন্ত্রের অতিরিক্ত কাজ করতে হয় না বলে শরীর নিজেই তার স্ট্রেস হরমোনগুলোতে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। মানসিক চাপ কম মানেই ত্বকের ওপর অতিরিক্ত কোনো ঝক্কি নেই। এতে ফিরে আসে হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা।
সঠিক স্লিপ সাইকেল
বছরের পুরোটা ঘুমের সময় নিয়ে হেলাফেলা করলেও রোজায় কেউ সাধারণত ঘুম নিয়ে হেলাফেলা করেন না। সঠিক সময়ে সেহরির জন্য ঘুম থেকে ওঠা কিংবা ঘুমাতে যাওয়ার সার্কেলটা একই থাকে, তাই ত্বকও খুব ভালোভাবে নিজেকে পুনরুদ্ধারের কাজটা করতে পারে। ঘুম ভালো হওয়া মানে ত্বক থেকে বলিরেখার ছাপ সরে যাওয়া, ডার্ক সার্কেল কমে যাওয়া এবং স্ক্রিনে লাইটের প্রভাব থেকে সুরক্ষা। ফলাফল—কোমল আর সতেজ ত্বক, ঠিক যেমনটা ঈদের আগে আকাঙ্ক্ষিত।
হাইড্রেশন
শরীরে হাইড্রেশন ধরে রাখার মাধ্যমেই নিশ্চিত হয় ত্বকের জরুরি আর্দ্রতা। এ ক্ষেত্রে রোজার পুরো সময়টাতে পানি পান করা চাই নিয়ম মেনে। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে, ইফতার আর সেহরিতে পানিযুক্ত খাবার; যেমন আঙুর, আপেল, পেঁপে, লাউ, শসা, দই, দুধ—এগুলো যোগ করা যেতে পারে। মনে রাখা ভালো, শরীর আর্দ্রতা ধরে রাখলেই ত্বক থাকবে প্রাণবন্ত।
রক্তসঞ্চালন বাড়াতে
রোজা রাখার মাধ্যমে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ইফতার ও সেহরির খাবারে চিনির মাত্রা যেন কম থাকে। জমে থাকা গ্লুকোজ ভাঙার মাধ্যমে শক্তির সঞ্চার হয় শরীরে; ত্বক আগের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে রোজা দেহকে আরও অ্যাকটিভ এবং ত্বক সতেজ করে তোলে।
শরীর আর মনের পাশাপাশি, ত্বকের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে রমজানের সময়টা হতে পারে দারুণ একটা অপশন। অগোছালো জীবনযাত্রাকে গুছিয়ে আনতে রমজানের সময়টা কার্যকরী ভূমিকা রাখে। দরকার শুধু একটু সদিচ্ছার। অর্থাৎ অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস কিংবা লাইফস্টাইল ভেঙে ত্বক আর শরীরের যত্নে মনোনিবেশ করার।
বিদিশা শরাফ
মডেল: ষড়ঋতু
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল