ত্বকতত্ত্ব I জলের জোড়ে
শুধু পরিষ্কার নয়, ত্বক পরিচর্যার বিভিন্ন ধাপে এর ব্যবহার। একটু ভোল বদলে দেখাই যাক, উপকারিতায় কেমন তারতম্য মেলে
মাইসেলার ওয়াটার
ফ্রেঞ্চদের মাধ্যমে উদ্ভূত। কারণ, তাদের সাপ্লাইয়ের পানি বরাবরই ত্বকের জন্য অনমনীয়। সম্প্রতি তো মাইসেলার ওয়াটার বছর পুরোনো মাল্টিস্টেপ ক্লিনজিং রিচুয়ালকেও খুব চোখ রাঙাচ্ছে। এতে আছে ছোট ছোট তেলের মলিকিউল, যা মাইসেলস নামে পরিচিত। এগুলো মূলত ত্বকে জমে থাকা ময়লা, মেকআপ আর দূষণকে আকর্ষণ করে এবং গলিয়ে ফেলতে সহায়ক। সোপ এবং কেমিক্যাল-ফ্রি মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহারের পর ধোয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে ভীষণ ট্রাভেল ফ্রেন্ডলি। পরিষ্কার তো রাখেই, কোনো কোনো ফর্মুলায় ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ার নিশ্চয়তা দেয়। দেখায় দাগছোপহীন। ব্যবহারও খুব সোজা। পরিষ্কার কটন বলে পরিমাণমতো নিয়ে তা দিয়ে মুখ মুছে নেওয়া চাই। ব্যবহারের পরপরই টোনার বা ময়শ্চারাইজার মাখার প্রয়োজন নেই। মেকআপ রিমুভার হিসেবে ব্যবহার উপযোগী মাইসেলার ওয়াটার। আর নাইট টাইম রুটিনে তো মাস্ট হ্যাভ ক্লিনজিং স্টেপের অপরিহার্য অংশ।
ডাবের পানি
অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল আর অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রোপার্টিযুক্ত এই পানি। দেখতে স্বচ্ছ; স্বাদে সুমিষ্ট। ত্বককে তেলতেলে না করেই জরুরি আর্দ্রতার জোগান দেয়। ত্বকের স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাব বাড়ায়। আফটার—শ্যাম্পু রিনজ হিসেবেও ডাবের পানি চমৎকার। এটি মাথার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়; ফলে চুল পড়া এবং ভঙ্গুরতার প্রবণতা কমে। কোনো ধরনের কেমিক্যাল কিংবা কনটামিনেন্ট ব্যবহার ছাড়াই কন্ডিশনিংয়ের উপকারিতা মেলে। ফেশিয়াল, টোনার হিসেবে ব্যবহারে ত্বক পরিষ্কার করে তোলে; চিপচিপে দেখায় না। কোনো ক্ষত থাকলে তা সারাইয়ে সহায়তা করে। গোসলের পানিতে এর যোগ ত্বকের রক্ত চলাচল বাড়ায়; করে তোলে কোমল।
গ্লেসিয়াল ওয়াটার
ন্যাচারাল ফিলট্রেশন অর্থাৎ প্রাকৃতিক পরিস্রুতি। তা-ও আবার এক দুদিনের নয়; শত সহস্র বছর ধরে। ফলাফল—বিশুদ্ধতার চূড়ান্ত। গ্লেসিয়াল ওয়াটারই সেই উপাদান। তাই তো স্কিন কেয়ার এবং কসমেটিকস তৈরিতে এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। লাভার পাহাড় থেকে গলিয়ে সংগ্রহের পুরো প্রক্রিয়ার সময় গ্লেসিয়ার আইস ভলকানিক বেডরক থেকে মিনারেল শুষে নেয়; যা পরে ত্বকে ব্যবহারে এর পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। স্পর্শকাতরতা আর জ্বালাপোড়ায় প্রশান্তি দেয়। আইসল্যান্ডিক গ্লেসিয়াল ওয়াটার পৃথিবীর সবচেয়ে পরিশুদ্ধ উপাদানগুলোর শীর্ষে। এটি বিউটি প্রোডাক্ট তৈরিতে দূষণমুক্ত বেইজ তৈরি করে দেয়, যা অন্য কোনো উপাদানের সঙ্গে প্রতিক্রিয়াও করে না।
রোজ ওয়াটার
সহজ বাংলায় গোলাপজল। যার গুণমুগ্ধ পুরো বিশ্ব। তা-ও কি আজকালকার কথা! সেই প্রাচীন আমল থেকেই সুগন্ধি এই পানিতে মজেছেন সৌন্দর্যসচেতনেরা। এতে আছে কোমল জীবাণুনাশী ও প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য। এমনকি ত্বকের জ্বালাপোড়ায় প্রশান্তি প্রদানে সচেষ্ট। ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ গোলাপজল ত্বকে আর্দ্রতার জোগান দেয়; করে তোলে কোমল। এতে তৈরি হাইড্রেটের স্প্রে ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে, স্পর্শকারতায় আরাম দেয়, কমায় লালচে ভাব। শুধু ত্বক! চুলেও আর্দ্রতা জোগাতে দারুণ গোলাপজল; সঙ্গে যোগ করে বাড়তি উজ্জ্বলতা।
সিওয়াটার
ভিটামিন আর মিনারেলে টইটম্বুর এর প্রতিটি ফোঁটা। ত্বক শুষে নিতে পারে অনায়াসে। বাড়তি পাওনা—এতে থাকা ত্বক নিরাময়ে এবং পুনর্জীবন প্রদানের সক্ষমতা। ফলে এটি পরিণত হয়েছে হেয়ার অ্যান্ড বিউটি কেয়ার প্রোডাক্টের সবচেয়ে মূল্যবান উপাদানে। স্পর্শকাতর এবং অ্যাকনে প্রবণ ত্বকের জন্য সিওয়াটারে থাকা উচ্চমাত্রার ম্যাগনেশিয়াম দারুণ উপকারী। বাথ সল্ট, ফেসওয়াশ আর টোনার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয়। মৃত সাগর থেকে সংগৃহীত পানি কোষ পুনরুৎপাদনের ক্ষেত্রে কার্যকর। তাই এ থেকে তৈরি হয় এনরিচিং শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার। মেলে ফেশিয়াল ক্লিনজার, মাস্ক, ময়শ্চারাইজার আর সাবানেও।
থারমাল স্প্রিং ওয়াটার
একজিমা, সোরায়সিস, রোজাশিয়াসহ নানা ধরনের র্যাশ ও প্রদাহের মতো ত্বক সমস্যায় চমকপ্রদ এই উপাদান। বহু বছর ধরে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিস্রুতি এবং পাহাড়ি পাদদেশের গভীরে জীবাণুমুক্ত রেস্টিং প্লেস নিশ্চিত করে এর পরিশুদ্ধতা। মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর কার্বন ডাই-অক্সাইডে পরিপূর্ণ হওয়ায় এটি ত্বক সারাইয়ের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। কোমল রাখে; কমায় লালচে ভাব। এতে তৈরি অ্যান্টি রেডনেস সেরাম, ক্রিম আর স্প্রে বাজারে খুব জনপ্রিয়। স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য যেগুলো বিশেষভাবে তৈরি।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: নাযাহ নাওয়ার
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল
