এই শহর এই সময় I অতিপ্রাকৃত অসীমতা
আষাঢ় ও শ্রাবণ—বর্ষা ঋতুর দুই মাসকে ভাগাভাগি করে নিয়েছে জুলাই। স্বভাবতই বৃষ্টিস্নাত আবহে এ মাসে কেটেছে রাজধানীবাসীর জীবন। এ সময়ে শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্য অঙ্গনগুলোতে ছিল বেশ কিছু মনোমুগ্ধকর আয়োজন। তাতে বাস্তবতার সঙ্গে অতিপ্রাকৃতের, আত্মিকতার সঙ্গে মহাজাগতিকতার মিলন ঘটতে দেখেছেন দর্শক-শ্রোতা।

নারী, মহাবিশ্ব: তার অন্তহীন অসীমতা
‘নারী, মহাবিশ্ব: তার অন্তহীন অসীমতা’ (শি, দ্য ইউনিভার্স: দ্য ইনফিনিটি উইদিন হি’)। চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার লিটন করের একক সৃষ্টিকর্ম প্রদর্শনী। ১৮ থেকে ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে। ধানমন্ডিতে এই ফরাসি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের লা গ্যালারিতে শোভা পেয়েছে শিল্পীর আঁকা ২৫টি বৃহৎ আকারের তেলচিত্র। সেগুলোতে বিশ্লেষণধর্মী ও কাব্যিক ভঙ্গিতে প্রকাশ পেয়েছে নারীর আত্মিকতা, স্মৃতি ও মহাজাগতিক অবস্থান। বাস্তবতা ও কল্পনার মিশ্রণ ছিল চিত্রকর্মগুলোতে। থিয়েটার, গল্প বলার কৌশল ও সামাজিক বাস্তবতা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা দৃশ্যমান ছিল প্রতিটি ক্যানভাসে। নারীর প্রতিচ্ছবিতে ফুটে উঠেছিল সহিষ্ণুতা, সৌন্দর্য ও মহাজাগতিক শক্তির প্রতীক। চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সংগীত পরিবেশনা। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত লিটন করের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আইসিইউ (আই সি ইউ) [ICU (I See You)] দেখানো হয় প্রতিদিন।

বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল
১১ জুলাই সন্ধ্যায় একটি হোটেলে আয়োজিত হয় ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল’। তাতে গান ও কবিতার যুগলবন্দী দর্শকদের বিমোহিত করে। সারাহ আলমের উপস্থাপনায় এই সাংস্কৃতিক আয়োজনে গান পরিবেশন করেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী শামা রহমান। তালিকায় জায়গা পায় ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল’, ‘আবার এসেছে আষাঢ়’, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি’, ‘ও যে মানে না মানা’, ‘আজি ঝড়ের রাতে’, ‘মেঘের ’পর মেঘ জমেছে’, ‘এসো হে নিশীথ রাতে’ প্রভৃতি। ফাঁকে ফাঁকে কবিতা আবৃত্তি শোনান প্রসিদ্ধ অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন। তার পাঠের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের কবিতা।

ইনভিজিবল স্টোরিজ
৪ ও ৫ জুলাই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তন মঞ্চে পরিবেশিত হয় ‘ইনভিজিবল স্টোরিজ’। এটি বডি পাপেট থিয়েটার পরিবেশনা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকা ও কোম্পানি ঘেন দ্য ডির যৌথ উদ্যোগ। নির্দেশনা দেন ও অভিনয় করেন ফরাসি পাপেটশিল্পী লহি ক্যানাক। তার সহ-অভিনেতা ছিলেন বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পী, নৃত্য পরিচালক, থিয়েটার শিল্পী ও পাপেটিয়ার মো. ফারহাদ আহমেদ। এতে দেখা যায়, দুজন বিজ্ঞানী ঢাকার প্রাত্যহিক জীবনে ভূতের প্রভাব নিয়ে গবেষণায় মগ্ন। এই মগ্নতা ধীরে ধীরে এক অতিপ্রাকৃত অভিযানে রূপ নেয়, যা তাদের নিয়ে যায় সুন্দরবনের গহিনে। এই পরিবেশনায় নানা ধর্ম ও লোককথা থেকে সংগৃহীত ভূতের গল্প ও অতিপ্রাকৃত বিষয়বস্তুকে নাচ, গান আর পাপেট্রির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ
