skip to Main Content

মনোজাল I সেন্সরি মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি

কার্য সম্পাদনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যেখানে মুখ্য নয়; বরং শক্তিশালী স্মরণীয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ক্রেতার মন আঁকড়ে ধরার অভিনব কৌশল। স্থায়ী সংযোগ সৃষ্টির সংবেদনশীল বিপণন প্রক্রিয়া, যা গ্রাহকদের পরিণত করে সমর্থকে

মাল্টি-সেন্সরি মার্কেটিং বা বহু-সংবেদনশীল বিপণন। এটি বিজ্ঞাপনের এমন নতুন ধারণা, যা মানুষের পাঁচটি ইন্দ্রিয়কেই কাজে লাগানোর মাধ্যমে কাজ করে। যেখানে মনে করা হয়, প্রচারণায় একাধিক সংবেদনশীল উপাদান অন্তর্ভুক্ত করলে গ্রাহকেরা বিজ্ঞাপনটি অনেক বেশি মনে রাখতে এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারেন। এটি এমন এক কৌশল, যা মনুষ্য ইন্দ্রিয় (দৃষ্টি, শব্দ, স্পর্শ, স্বাদ ও গন্ধ) কাজে লাগিয়ে অনেক গুণ কার্যকর একটি ব্র্যান্ড অভিজ্ঞতা তৈরি করে। ভিজ্যুয়াল ওভারলোডের যুগে, এ ধরনের বিপণন পদ্ধতি ব্র্যান্ডগুলোকে নয়েজ কমানোর পাশাপাশি মানসিক সংযোগ এবং ভোক্তাদের সঙ্গে মনে রাখার মতো একরকম মিথস্ক্রিয়া তৈরিতে সহায়তা করে। ব্র্যান্ডের প্রচারের জন্য সমস্ত ইন্দ্রিয় ব্যবহার করার মানে হচ্ছে, গ্রাহকদের মনে করিয়ে দেওয়া, যাতে তারা বারবার সেই ব্র্যান্ডের কাছে ফিরে আসেন। খুব সহজ করে বললে, এটি এমন এক ধরনের সংবেদনশীল মার্কেটিং, যা দর্শকদের কাছে আবেদন সৃষ্টির জন্য পাঁচটি মনুষ্য ইন্দ্রিয়কে একত্র করে। দর্শকদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের মানসিক অবস্থাকে ইতিবাচক করে তুলতে এবং মেজাজ উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম। বিশেষ করে যে অভিজ্ঞতা মানুষের মনে আনন্দ জাগায়, বিজ্ঞাপনে তার ব্যবহার করার কথা ভাবা হয় সবচেয়ে বেশি। কারণ, গবেষকেরা মনে করছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে মানুষের জন্য আনন্দ-অনুভূতি কেবল মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার একটি উপায় হবে না; বরং বিশ্বকে সবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরাপদ স্থান হিসেবে পুনর্কল্পনা করার একটি কৌশলগত হাতিয়ারও হয়ে ওঠবে। আসলে ২০২০ সাল থেকে আনন্দকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোক্তা অনুভূতি হিসেবে পর্যবেক্ষণ করে আসছেন তারা। দ্য হ্যাপিনেস স্পেকট্রাম ফোরকাস্টে কীভাবে আনন্দ এবং আনন্দের ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলো গ্রাহকদের বিশ্বব্যাপী মহামারির ফলে সৃষ্ট শোক, ভয় আর অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় সাহায্য করে, তার বিশদ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মানুষের মনের সুখ নিয়ে গবেষণা করছেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ গ্রেচেন রুবিন বলেছেন, ‘আমরা সবাই বেশ কঠিন কয়েক বছর পার করেছি এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের সবার সুখের অভাব রয়েছে। সবাই এমন সব অভিজ্ঞতার জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে আছি, যা আমাদের আনন্দ দিতে পারে বা হাসিয়ে তোলে। মার্কেটিং ব্র্যান্ডগুলো তাতে ব্যাপক সাহায্য করতে সক্ষম।’
এই সুখানুভূতি তৈরির ধারণাকে ভিত্তি করে ক্রমশই বাড়ছে মাল্টি-সেন্সরি মার্কেটিং। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী ৬৫ শতাংশ গ্রাহকের চাওয়া, ব্র্যান্ডগুলো তাদের মধ্যে একধরনের সুখানুভূতি তৈরি করুক, প্রচারণার মাধ্যমে তাদের উদ্দীপ্ত করে তুলুক। ৪৯ শতাংশ ভোক্তা এমন ব্র্যান্ড থেকে পণ্য ক্রয়ে আগ্রহী, যাদের বিজ্ঞাপন তাদের একধরনের আনন্দের অনুভূতি দেয়। চীনা গ্রাহকদের ওপর সংবেদনশীল ব্র্যান্ড অভিজ্ঞতার প্রভাব পর্যালোচনা করে ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের পাঁচটি সংবেদনশীল ইন্দ্রিয় ব্র্যান্ড অভিজ্ঞতার ওপর বড় প্রভাব ফেলে, যা ব্র্যান্ড সংযুক্তি ও গ্রাহক সন্তুষ্টিতে অবদান রাখে। যদিও অতীতেও বিপণনকারীরা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সব সময় দৃষ্টিশক্তি বা শব্দের ওপর নির্ভর করে আসছেন। কিন্তু বহু-সংবেদনশীল ব্র্যান্ড অভিজ্ঞতা ক্রমবর্ধমানভাবে এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে; বিশেষ করে যেহেতু আগামী ২৫ বছরে এই শিল্প সংবেদনশীল বিপণনে আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ব্র্যান্ডগুলোকে এমন বিপণন কৌশল তৈরি করতে হবে, যা গ্রাহকদের মনে বিস্ময় জাগিয়ে তুলতে, স্মরণীয় অভিজ্ঞতা তৈরি করতে এবং সংবেদনশীল আবেদনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। এ ধরনের মার্কেটিং ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি গ্রাহকের আনুগত্যকে উৎসাহিত করতে পারে এবং সঠিকভাবে করা হলে বিক্রয়ও বাড়ানো সম্ভব।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্র্যান্ডের আবেদন বৃদ্ধিতে সেন্সরি মার্কেটিং কীভাবে ব্যবহার করা যায়? তার জন্য গবেষকেরা চমৎকার সব টিপস দিয়েছেন। সেগুলোর কিছু এখানে উল্লেখ করা হলো।
 স্টোরগুলোতে একটি মনোরম এবং আমন্ত্রণমূলক পরিবেশ তৈরি করতে সুগন্ধি ব্যবহার করা;
 নিশ্চিত করা যে পণ্যগুলো দৃশ্যমান হয় এবং সহজে কাছে পৌঁছানো যায়;
 কেনাকাটা করার সময় গ্রাহকদের স্বাচ্ছন্দ্য এবং মনোযোগী রাখতে মৃদু ভলিউমে সংগীত বাজানো;
 একটি নির্দিষ্ট মেজাজ বা পরিবেশ তৈরি করতে দোকানে বা স্টোরে দৃষ্টি আকর্ষক রং ব্যবহার করা ইত্যাদি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুগন্ধির শক্তি প্রায়শই অবমূল্যায়ন করা হয়। সুগন্ধি ব্র্যান্ডিং ক্রেতার মনে ছাপ তৈরির পাশাপাশি যেকোনো পণ্যকে অনুকূলভাবে স্মরণ রাখার একটি শক্তিশালী উপায় হতে পারে। তবে কোন ধরনের গন্ধ ব্র্যান্ডকে সবচেয়ে কার্যকরভাবে উপস্থাপন করবে, তা নির্ধারণ করাটা সবচেয়ে জরুরি।
অনেকের হয়তো জানা, বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বিক্রয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আবেগময় আবেদন ও আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অতএব, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে মাল্টি-সেন্সরিং মার্কেটিং বা সংবেদনশীল বিপণন এই সংস্থাগুলোর জন্য দারুণ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার; যা এমন একটি উদ্দীপক ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা তৈরি করে, যা অবচেতনভাবে গ্রাহকদের প্রভাবিত করতে পারে, যাতে তারা ক্রয়ে ইচ্ছুক হয়ে ওঠেন। তবে তার জন্য প্রথমে শনাক্ত করতে হবে, কোন পণ্যবাজার কোন ইন্দ্রিয়ের প্রতি সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়াশীল। তারপর, বিপণন উপকরণ ও প্রচারাভিযানে সেই ইন্দ্রিয়গুলোকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করা চাই। উদাহরণস্বরূপ, যদি ভিজ্যুয়াল গ্রাহকেরা টার্গেট হয়, তাহলে ব্র্যান্ডিংয়ে উজ্জ্বল রং এবং উত্তেজনাপূর্ণ ভিজ্যুয়াল ব্যবহারের কথা বিবেচনা করা যায়।
দ্বিতীয়ত দর্শকদের পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে একটি ওভারভিউ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে ভিডিও। সেখানে যারা এরই মধ্যে পণ্য বা পরিষেবা ব্যবহার করেছেন, তাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসাপত্র অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তা ছাড়া নিশ্চিত করতে হবে, সমস্ত মার্কেটিং উপকরণ যেন এক পৃষ্ঠায় থাকে। গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একটি ফোন নম্বর এবং ই-মেইল এ ক্ষেত্রে জরুরি।
বিনা মূল্যে নমুনা অফারও দারুণ একটা স্ট্র্যাটেজি। যাতে সম্ভাব্য গ্রাহকেরা পণ্য কেনার আগে সেগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন। মনে রাখা চাই, পণ্য বা পরিষেবার সঙ্গে গ্রাহকের সম্পৃক্ততা শুরুতেই থাকে। তা একসময় গ্রাহকের ধারণা প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। তবে সবকিছুর আগে টার্গেট মার্কেটিং এবং তাদের চাহিদা সম্পর্কে গবেষণা করা জরুরি। কোন মাধ্যমগুলো সবচেয়ে ভালো কাজ করবে, তা চিহ্নিত করা যেতে পারে। এটি ব্যক্তিগতভাবে ই-মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি হতে পারে। তারপর একটি যুক্তিসংগত বিজ্ঞাপন বাজেট তৈরি করা চাই। কেননা, অযথা অর্থ ব্যয়ের মানে হয় না।
গ্রাহকদের আচরণের ওপর বিভিন্ন পরিবেশের প্রভাব বিবেচনা করতে হবে। মিটিং ও ইভেন্টগুলোতে তাজা ও স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করা যায়। একটি সৃজনশীল, আকর্ষণীয় শিরোনাম থাকা চাই। তা ছাড়া ডিজাইনের জন্য যে রঙের স্কিম ও ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, তা পণ্যের সঙ্গে কতটা সম্পর্কিত, তা-ও বিবেচনায় থাকা শ্রেয়। তৈরি প্রতিটি কনটেন্টের সঙ্গে একটি ছবি যুক্ত করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্য একটি এক্সাইটিং ও ইন্টার‌্যাকটিভ ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। যেখানে এটি অন্তত নিশ্চিত করতে হবে যে পণ্যের প্যাকেজিং কেবল শিপিংয়ের উদ্দেশ্যে নয়, বরং গ্রাহকের অভিজ্ঞতার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
অনেকের মনে হতে পারে, এই সেন্সরি মার্কেটিংয়ের কার্যকারিতা কেবল গল্পকথা বা বড় বড় বুলি ছাড়া কিছু নয়, তাহলে কিন্তু ভুল হবে। গবেষণায় রীতিমতো প্রমাণিত, সংগীত, ভিজ্যুয়াল ও সুগন্ধি যদি উপভোগ্য পরিবেশ তৈরি করে, তবে ৯০ শতাংশ ক্রেতার সেই স্টোরে পুনরায় আসা বা পণ্য কেনার সম্ভাবনা থাকে। খুচরা পরিবেশে, ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ ক্রেতা সক্রিয়ভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দেখে, যা প্রমাণ করে যে সূক্ষ্ম সংবেদনশীল উপাদানগুলো গ্রাহকের অভিজ্ঞতাকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ, সময় দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে, যেখানে আধুনিক গ্রাহকেরা কেবল পণ্য নয়, অভিজ্ঞতা আশা করেন।

 রত্না রহিমা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top