skip to Main Content

ফিচার I জেন-জি হ্যালোইন

৩১ অক্টোবর। অল হ্যালোজ ইভ। সংক্ষেপে, হ্যালোইন। ট্রিক-অর-ট্রিট, অগ্ন্যুৎসব, আজব পোশাকের পার্টি, ভৌতিক স্থান ভ্রমণ, হরর সিনেমা উপভোগ প্রভৃতিতে মাতোয়ারা এক উৎসব। বেশ পুরোনো; তবে হালের অতি তরুণ প্রজন্মের ছোঁয়ায় পায় ভিন্নমাত্রা

হ্যালোইনের লগ্ন যখন আসে, জেন-জিরা যেন একে একে নেমে আসে পাম্পকিন স্পাইন প্লেবুকের পাতা থেকে মর্ত্য।ে যাদের বয়স এখন ১৩ থেকে ২৮। অক্টোবরের ৩১, তাদের কাছে প্রজন্মগত নিজস্ব আবহ ছড়ানোর দিন। তা আটকে থাকে না শুধুই ভুতুড়ে বেশ ধরে প্রতিবেশীদের কাছে চকলেটের জন্য হাত পাতার মধ্যে। এমনকি আটকে থাকে না একটি দিনের উদ্‌যাপনের সময় পরিধিতেও; বরং এই প্রাণোচ্ছল প্রজন্মের কাছে হ্যালোইন এখন মাসব্যাপী আনন্দ-উৎসবের উপলক্ষ। কিন্তু এই ভুতুড়ে আবহ ছড়ানো উচ্ছ্বাসের নেপথ্যে কী?
ব্যাপারটি শুধু পোশাক-পরিচ্ছদের নয়; বরং বিশেষত এ প্রজন্মের কাছে আত্মপ্রকাশ, সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সঙ্গে খানিকটা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবও যুক্ত। তাহলে ক্যান্ডির কী হলো? হ্যাঁ, ক্যান্ডির প্রতিও কৌতূহল রয়েছে এ প্রজন্মের। সহজ কথায়, হ্যালোইনের পুরোনো রেওয়াজ তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া নয়; বরং নিজেদের মতো পরিমার্জিত করে নেওয়ার প্রবণতা বেশি জেন-জি প্রতিনিধিদের। ইনস্টাগ্রাম-ওর্দি কস্টিউমে নিজেকে সাজানো কিংবা এপিক-থিম পার্টির আয়োজন—হ্যালোইন ঘিরে কোনো কিছুতেই উৎসাহের কমতি নেই তাদের।
মিলেনিয়াল বনাম জেন-জি
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, আগের প্রজন্ম তথা মিলেনিয়ালের তুলনায় জেন-জি প্রজন্ম হ্যালোইন পার্টিগুলোকে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, হ্যালোইন উদ্‌যাপন করেন, এমন ১০০০ জেন-জি ও ১০০০ মিলেনিয়ালের মধ্যে চালানো সাম্প্রতিক এক জরিপ সাক্ষ্য দেয়, এসব আয়োজনের আবহ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ জেন-জি এই পার্টিগুলোকে ভীষণ গুরুত্ব দেয়; যেখানে মিলেনিয়ালের অনুপাত ৩৪ শতাংশ। সার্বিকভাবে কোনো তুখোড় হ্যালোইন পার্টির মধ্যে তিনটি উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকে; সেগুলোর মধ্যে পোশাকের প্রতি অতি গুরুত্ব দেয় ৬৩ শতাংশ জেন-জি; অন্যদিকে, খাবার ও সাজসজ্জার প্রতি তাদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার হার যথাক্রমে ৬১ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ। পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ওই আয়োজনের দলগত কস্টিউমের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে ৫২ শতাংশ; খাবার ও মেকআপ বা ফেস-পেইন্টকেও আয়োজন অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ করায় মনোনিবেশ থাকে ৪৬ শতাংশের।
খাবারের প্রশ্নে হ্যালোইন সিগনেচার আইটেম ক্যান্ডির সন্ধানে থাকে দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬৭ শতাংশ জেন-জি; যা কিনা মাত্র ৪৩ শতাংশ মিলেনিয়ালের কাছে গুরুত্ব পায়। সত্যি বলতে, নিখুঁত ক্যান্ডি থালা সাজানোর পেছনে সাধ্যমতো শ্রম দেয় জেন-জিদের অর্ধেকের বেশিসংখ্যক প্রতিনিধি। কোনো হ্যালোইন পার্টিতে গিয়ে ক্যান্ডি না পেলে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬২%) জেন-জি মন খারাপ করে ফেলে; বর্তমানে ২৯ থেকে ৪৪ বছর বয়সী তথা মিলিনিয়াল প্রজন্মের ক্ষেত্রে যে হার ২০ শতাংশ মাত্র।
জাপানিজ কনফেকশনারি কোম্পানি মরিনাগা অ্যান্ড কোম্পানির জনপ্রিয় ক্যান্ডি আইটেম ‘হাই-চিউ’র পক্ষে, অনলাইন মার্কেট রিসার্চ অ্যান্ড পিআর সার্ভে প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ানপোল’ পরিচালিত জরিপ থেকে আরও জানা যায়, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬১ শতাংশই হ্যালোইন পার্টিতে নাশতা হিসেবে ফ্রুটি ক্যান্ডির উপস্থিতি চায়; অন্যদিকে, চর্বণযোগ্য ও চকলেট ক্যান্ডির চাহিদা যথাক্রমে ৫৯ ও ৫৭ শতাংশ। ‘হ্যালোইন পার্টিগুলোতে ক্যান্ডি ও স্ন্যাকসের উপস্থিতি অনিবার্য। অংশগ্রহণকারীরা ওই ক্যান্ডি ও স্ন্যাকসকে বেশ গুরুত্ব দেয়,’ অভিমত মরিনাগা আমেরিকা ইনকরপোরেশনের সিইও তেরুহিরো কাওয়াবে টেরির। ফ্রুটি ক্যান্ডির ক্ষেত্রে ‘রক্তলাল’ ফলের নির্যাসই বেশি পছন্দ তাদের; চাহিদার পারদে ‘ব্লাডি’ ফ্রুড পাঞ্চ ৬০ শতাংশ; ক্যান্ডি অ্যাপেল ৫৪ শতাংশ।
সাজসজ্জাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় জেন-জি। এ প্রজন্মের ৬১ শতাংশ বিশ্বাস করে, সজ্জার ‘কালো জাদু’তে আয়োজন মাত করার সক্ষমতা রয়েছে তাদের; অপরদিকে, এমন আত্মবিশ্বাস শুধু ৪০ শতাংশ মিলেনিয়ালের মধ্যে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে এমন আয়োজনের অংশগ্রহণকারীদের সাজসজ্জায় কঙ্কালের উপস্থিতি খোঁজে ৬৩ শতাংশ। এই তালিকায় ডাইনি, মাকড়সার জাল, জ্যাক ও’ল্যান্টার্নস, বাদুড়, কালো বিড়াল ও মোমবাতির উপস্থিতির প্রত্যাশা যথাক্রমে ৫৯, ৫৭, ৫৭, ২৭ ও ২৫ শতাংশের।
ভুতুড়ে বাড়ি ও মাকড়সার জালের প্রতি একঘেয়েমি এসে গেছে মিলেনিয়ালদের। যথাক্রমে এসবের প্রত্যাশা রাখে এ প্রজন্মের ২৬ ও ২২ শতাংশ প্রতিনিধি। অন্যদিকে, ডাইনির প্রতি একঘেয়েমি অনুভব করে ১৬ শতাংশ জেন-জি। ৩৮ শতাংশ জেন-জিই কোনো ধরনের সাজসজ্জা না করার পক্ষে; যেখানে মিলেনিয়ালদের ক্ষেত্রে এই অনুপাত ১৫ শতাংশ।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪১ শতাংশের স্বীকারোক্তি জানান দেয়, নিজেদের কস্টিউম কিংবা মেকআপ নষ্ট হয়ে গেলে তারা পার্টি শেষ হওয়ার আগেই বাড়ির পথ ধরে। দুই-তৃতীয়াংশের বিশ্বাস, কস্টিউম প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার আশা নিয়েই আসে তারা। পোশাক ও সাজসজ্জা ঠিক রাখতে অনুষ্ঠান চলাকালে ৫৭ শতাংশই টাচ-আপের সাহায্য নেয় এবং ঝামেলাপূর্ণ খাবার গ্রহণ এড়িয়ে চলে ৫২ শতাংশ প্রতিনিধি।
উৎসব নাকি আন্দোলন
জেন-জি প্রজন্মের কাছে হ্যালোইন কেবলই একটি উৎসব নয়, বরং জীবনদর্শন ছড়ানোর আন্দোলনও। তাই বিশেষ দিনে আটকে না থেকে, মাসজুড়ে সক্রিয় থাকে এ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। ‘উৎসবকে কেন ঘণ্টার হিসেবে আটকে রাখা হবে’—এমন জিজ্ঞাসা তাদের। ফলে শুধু অক্টোবরজুড়ে নয়, বরং জুনেই শুরু হয়ে যায় এমন মুহূর্তগুলোকে গড়ে তোলার প্রয়াস; সামারোইনের মধ্য দিয়ে। তবে ১ অক্টোবর তা চূড়ান্ত গতি পেতে শুরু করে।
জেন-জিদের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই যে হ্যালোইন থিয়েটার, তা বলা বাহুল্য। এই রোমাঞ্চকর উদ্‌যাপনের বাছাই করা মুহূর্তগুলো দুনিয়ার সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে বেশ পারদর্শী তারা। বিশেষত ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও স্ন্যাপচ্যাটের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ভেসে যায় সবিশেষ কস্টিউম, ডিআইওয়াই ডেকোরেশন আর গ্রুপ সেলিব্রেশনের ছবির জোয়ারে। ডাটা-ফার্স্ট ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কোম্পানি দ্য শেলফের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, নিজেদের হ্যালোইন এক্সপেরিয়েন্স অনলাইনে বেশ সক্রিয়ভাবেই শেয়ার করে বেশির ভাগ জেন-জি। এতে ভার্চুয়াল কমিউনিটি যেমন প্রবলভাবে গড়ে তোলা যায়; তেমনি ছড়িয়ে দেওয়া যায় নিজস্ব বার্তাও।
হ্যালোইন মৌসুম যত এগিয়ে আসে, আমরা বুঝে যাই, এটি স্রেফ এক রাতের ট্রিক-অর-ট্রিটিংয়ের খেলা নয়; তার চেয়ে বেশি কিছু। এ সময়ে এ ঘিরে জেন-জিদের সৃজনশীলতা, যোগাযোগ স্থাপন আর আনন্দ-উচ্ছ্বাসের এক রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা।

 লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top