ইভেন্ট I ক্যানভাস মাস্টারক্লাস উইদ মুমতাহিনা টয়া স্ক্রল টু স্টারডম
মাস্টারক্লাস। ক্যানভাসের নতুন উদ্যোগ। বিভিন্ন বিষয়ে কর্মশালাভিত্তিক। প্রথম আয়োজনের বিষয়বস্তু ছিল সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষত টিকটকের কনটেন্ট নির্মাণ। তাতে পাঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় তারকা মুমতাহিনা টয়া
টিকটক, ট্রেন্ড আর ট্রান্সফরমেশন ঘিরে নতুন আলো ছড়ালেন অভিনেত্রী, মডেল ও নৃত্যশিল্পী মুমতাহিনা টয়া। ১৮ অক্টোবর বেলা ৩টায় রাজধানীর মিরপুরের পারসোনা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশেষ কর্মশালা ‘ক্যানভাস মাস্টারক্লাস উইদ মুমতাহিনা টয়া: স্ক্রল টু স্টারডম!’ ক্যানভাসের উদ্যোগে। নিবন্ধিত দর্শকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই ঘরোয়া অথচ প্রভাব বিস্তারকারী সেশনে আলোচিত হয় টিকটক জগতে তারকার উত্থান, কনটেন্ট তৈরির কলাকৌশল এবং একেবারে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড নির্মাণের গোপন ফর্মুলা। সেশনটির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা জানতে পেরেছেন, কীভাবে ‘স্ক্রল’ থেকে ‘স্টারডম’-এর যাত্রা সম্ভব, আর কীভাবে মুমতাহিনা টয়া নিজে সেই পথ পাড়ি দিয়েছেন।
টিকটক জগৎ বুঝে ওঠা
মাস্টারক্লাসের শুরুতে বিশেষত বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল এই প্ল্যাটফর্ম কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়; একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যারিয়ার ও ব্র্যান্ড নির্মাণের ক্ষেত্র হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। টয়া ব্যাখ্যা করেন, ‘টিকটকে আপনার ব্যক্তিত্বের উপস্থাপন কাজ করে। এটি শুধু ভিডিও বানানোর প্ল্যাটফর্ম নয়; নিজেকে প্রকাশ করার মঞ্চও।’
তিনি তুলে ধরেন, কীভাবে গ্লোবাল ও লোকাল ট্রেন্ড ভিন্নভাবে কাজ করে এবং কীভাবে কনটেন্ট কনজাম্পশনের ধরন বাংলাদেশে একটু আলাদা। ফ্যানবেস কী চায়, তারা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়—এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে কনটেন্ট তৈরি করাই সফলতার চাবিকাঠি বলে পরামর্শ এই তারকার।
নিজস্ব পরিচয়, নিজস্ব ব্র্যান্ড
টিকটকে ‘ভাইরাল’ হওয়া কেবল তাৎক্ষণিক নয়, দীর্ঘ মেয়াদে সাফল্য পেতে চাই সুসংগঠিত ও বিশ্বাসযোগ্য ‘পারসোনাল ব্র্যান্ড’। কর্মশালায় টয়া বলেন, ‘আপনার কনটেন্ট যেন মানুষ দেখামাত্রই চিনে ফেলে—এটাই হচ্ছে ব্র্যান্ড। তা আপনি ফ্যাশনে হোন, বিউটিতে বা লাইফস্টাইলে, আপনাকে ইউনিক হতে হবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, কীভাবে নিজের শখ ও আগ্রহের সঙ্গে সাম্প্রতিক ট্রেন্ডের সমন্বয় ঘটিয়ে একটি নির্দিষ্ট ‘নিশ’ খুঁজে বের করতে হয়। ‘সবাই সব করতে পারে না’—এ কথার মাধ্যমে টয়া ব্যাখ্যা করেন, কেন কনটেন্টের বিষয়বস্তু নির্বাচনে স্বচ্ছতা দরকার।
ভাইরাল কনটেন্ট তৈরির মূলসূত্র
এই সেশনের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ ছিল কনটেন্ট ক্রিয়েশন টেকনিক নিয়ে টয়ার আলোচনা। তিনি একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী ফর্মুলা দেন: ‘হুক = স্টোরি = রিলেটেবিলিটি = ভাইরাল পটেনশিয়াল’। প্রথম তিন সেকেন্ডে দর্শকের মনোযোগ কীভাবে কেড়ে নেওয়া যায়, গল্প বলার স্ট্রাকচার (শুরু, মাঝ, শেষ) এবং রিলেটেবল কনটেন্ট বানিয়ে দর্শকের ইমোশনাল রেসপন্স জাগানো যায়—এসব বিষয়ে ছিলেন তার স্পষ্ট এবং অভিজ্ঞতানির্ভর ব্যাখ্যা। উদাহরণস্বরূপ তিনি একটি কনটেন্টের প্রসঙ্গ টানেন, যেখানে একটি সাধারণ ‘গেট রেডি উইদ মি’ ভিডিও স্রেফ গল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের নজর কেড়েছিল।
শুটিং, এডিটিং আর টয়ার টুলবক্স
‘স্মার্টফোন থাকলেই আপনি কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে পারেন’—এই বার্তা আরও বাস্তব করে তোলেন টয়া তার প্রিয় মোবাইল অ্যাপস ও টুলস শেয়ার করে। তিনি দেখান কীভাবে ক্যাপকাট, ইনশট বা টিকটকের নিজস্ব এডিটর ব্যবহার করে একেবারে প্রফেশনাল মানের ভিডিও তৈরি করা যায়।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের টয়া ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝান, কীভাবে আলো ও ফ্রেমিং ভিডিওর মান পরিবর্তন করে, ট্রানজিশন ও সাউন্ড ইফেক্টের কৌশল, নিজের ইউএসপি অনুযায়ী কনটেন্টের ভিজ্যুয়াল স্টাইল তৈরি করা যায়। ‘ভালো কনটেন্টের পেছনে ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি নয়, দরকার হচ্ছে পরিকল্পনা ও নান্দনিকতা,’ বলেন তিনি।
অ্যালগরিদমের নিগূঢ় খেলা
টিকটকের অ্যালগরিদম সম্পর্কে এক ধাপে উচ্চতর ধারণা দেন টয়া। ‘ফর ইউ পেজ’-এ পৌঁছাতে হলে কেবল ভালো কনটেন্টই যথেষ্ট নয়; সঙ্গে দরকার সঠিক টাইমিং, জুতসই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার আর ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। তার মতে, বাংলাদেশে রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে পোস্ট করলে সবচেয়ে ভালো এনগেজমেন্ট পাওয়া যায়। হ্যাশট্যাগ নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে দিয়ে টয়া বলেন, ‘স্রেফ পপুলার হ্যাশট্যাগ দিলেই কাজ হয় না; বরং আপনার কনটেন্টের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করাটাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ।’
কমিউনিটি তৈরি বনাম ফলোয়ার বৃদ্ধি
টয়া জোর দিয়ে বলেন, ‘ফলোয়ার সংখ্যা একটি সংখ্যামাত্র; কিন্তু একটি শক্তিশালী কমিউনিটি মানে আপনার কনটেন্টের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা।’ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের তিনি শেখান কীভাবে কমেন্টের জবাব দিয়ে, লাইভে এসে কিংবা কনটেন্টের মাধ্যমে দর্শকের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। ট্রোল বা নেতিবাচক মন্তব্য সামলানোর বিষয়েও অভিজ্ঞতা থেকে টিপস শেয়ার করেন তিনি।
মনিটাইজেশন: ব্র্যান্ড কোলাব থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে একটি বড় প্রশ্ন ছিল, টিকটক থেকে কীভাবে উপার্জন করা সম্ভব? এ প্রসঙ্গে ব্র্যান্ড কোলাবের প্রসঙ্গ টেনে টয়া বলেন, ‘ব্র্যান্ড কোলাব শুরু হয় বিশ্বাস দিয়ে। যখন ব্র্যান্ড দেখবে, আপনি নিজের কনটেন্ট নিয়ে সিরিয়াস, তখন তারাই আপনাকে খুঁজে নেবে।’ কীভাবে মিডিয়া কিট তৈরি, ব্র্যান্ডের কাছে প্রস্তাব পাঠানো এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হয়, তা তিনি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন। আর প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট কীভাবে কাজ করে—এই অংশে তিনি নিজের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেন, যা অংশগ্রহণকারীদের জন্য খুবই ইনস্পায়ারিং ছিল।
মুক্ত প্রশ্নোত্তর: শেখার দরজা খোলা
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল খোলামেলা প্রশ্নোত্তর। কোন ধরনের কনটেন্টে বেশি এনগেজমেন্ট আসে, শুরুর দিকে টিকটকে কীভাবে ধারাবাহিক থাকা যায় কিংবা প্রথম ব্র্যান্ড ডিল কীভাবে পাওয়া সম্ভব—অংশগ্রহণকারীরা এসব বিষয়ে টয়ার কাছে সরাসরি জানতে চান। তিনি প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন অকপটে, কোথাও কোনো ফাঁক না রেখে। এই তারকা বলেন, ‘আমি শুরু করেছিলাম জিরো থেকে, আপনারাও পারবেন যদি নিজের কনটেন্ট নিয়ে সিরিয়াস হন।’
এটা শুধু টয়ার গল্প নয়
‘ক্যানভাস মাস্টারক্লাস উইদ মুমতাহিনা টয়া’ শুধু একটি ওয়ার্কশপ নয়; বরং ছিল নতুন প্রজন্মের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য এক দিকনির্দেশনা। এটি প্রমাণ করে, টিকটক কিংবা অন্য যেকোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শুধু বিনোদনের জন্য নয়; ক্যারিয়ার নির্মাণ, আত্মপ্রকাশ ও ব্র্যান্ড গঠনের এক শক্তিশালী হাতিয়ার। একজন শিল্পী, ইনফ্লুয়েন্সার ও উদ্যোক্তা হিসেবে টয়া তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, কৌশলী চিন্তাভাবনা আর আত্মবিশ্বাস থাকলে স্ক্রল করা মানুষও একদিন স্টার হতে পারে।
লাইফস্টাইল ডেস্ক
ছবি: ক্যানভাস
