skip to Main Content

মনোজাল I উইন্টার স্লো-মো

হিমশীতল দিনরাত্রিতে আলসেমি পেয়ে বসা অসম্ভব নয়। তাতে ত্বকযত্ন কারও কারও কাছে গুরুত্ব হারায়। এতে আরেক বিপত্তি! মনে উঁকি দেয় স্কিন কেয়ার গিল্ট। এমন বাস্তবতায় ত্বকের পাশাপাশি মনের যত্নেরও রয়েছে উপায়

শীত আসে একঝুড়ি আলস্য নিয়ে! তাপমাত্রা হারায় গতি; সূর্যও দেখা দেয় দেরি করে। শরীর হয়ে পড়ে জবুথবু। ইচ্ছা আর অনিচ্ছার দোলাচল মনজুড়ে। কাজের ব্যস্ততার বাইরে অনেকের এ সময়ে আর কিছুই করতে ইচ্ছা করে না। স্লো লাক্সারির অনুভূতি আলিঙ্গনকেই সেরা টাইমপাস মনে হয়। সোয়েটার ওয়েদারে স্কিন কেয়ারকে পাশ কাটানো হয়ে যায়, না চাইলেও। আবার, মন যে এ নিয়ে ভাবে না, তা নয়। শুধু অলসতার অবসর খুঁজে পাওয়া যায় না দেখে যত্নটা নেওয়া হয় না। এটাই মূলত উইন্টার হাইবারনেশন বনাম স্কিন কেয়ার গিল্ট।
শীতে আলো কমে যায়, ঘুম ঘুম ভাব বাড়ে, আর শরীর নিজে থেকে চায় স্লো-লিভিং লুক- ঠিক ওভারসাইজড সোয়েটারের মতো, একটু বড়সড় আরাম। ভোরবেলা অ্যালার্ম বাজলেও কম্বলের ভেতর থেকে বের হওয়া যেন ছোটখাটো যুদ্ধ। শীতের ঠান্ডা পানি, বাথরুমে যাওয়ার বিরক্তি—সব মিলিয়ে স্কিন কেয়ার তখন ঝক্কি। ফ্যাশনের ভাষায় বললে, শরীর শীতকালে মিনিমাল মুভমেন্ট মোডে থাকে আর স্কিন কেয়ার চায় ম্যাক্সিমাম কমিটমেন্ট। এই দুটি জগৎ একসঙ্গে কখনোই ভালোভাবে জোড়া লাগে না।
শীত এলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হিড়িক পড়ে বিষাদী স্ট্যাটাসের। কেউ তো আবার প্রকৃতির রুক্ষতাকে টেনে আনেন সেসব পোস্টে। তবে এরও আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। শীতকাল শুধু শরীরে নয়; মনেও আঘাত হানে নীরবে। দিন ছোট হয়ে আসে, সূর্যালোকের সময় কমে যায়; ফলে শরীরে সেরোটোনিন ও ডোপামিন নামের সুখের হরমোনের উৎপাদনও কম ঘটে।
প্রিটি প্রেশার
আজকের বিউটি ও ফ্যাশন দুনিয়ায় স্কিন কেয়ার শুধু ত্বকযত্ন নয়; সেলফ লাভেরও অংশ। তাই আরাম কিংবা ব্যারাম—যে কারণেই ত্বকযত্নের রুটিন বাধাগ্রস্ত হোক, তা মেনে নেওয়া স্বস্তিদায়ক নয়। ময়শ্চারাইজার প্রয়োগ যেন নিজের প্রতি দায়িত্ব। আবার, এসপিএফ ভুলে যাওয়া যেন স্টাইল মিসটেক। সোশ্যাল মিডিয়া এই চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। একদিকে ওভারসাইজড সোয়েটারে উইন্টার উইনসাম; অন্যদিকে মাস্ট ডু স্কিন কেয়ার—এই দুই ধরনের রিলই দেখা যায় একের পর এক! তখন মাথায় মাথায় তৈরি হয় গিল্ট-ট্যাপেস্ট্রি।
বাংলাদেশের জলবায়ু অনুযায়ী শীত এলে বাতাসে আর্দ্রতা একেবারে কমে যায়; তাতে বাতাস হয়ে ওঠে শুষ্ক। ফলে আমাদের ত্বক থেকেও আর্দ্রতা হারাতে থাকে ধীরে ধীরে। এ সময় গরম পানিতে ঘন ঘন গোসল কিংবা ঠান্ডা বাতাসে ঘোরাঘুরি—এগুলো ত্বকের আর্দ্রতা আরও কমিয়ে দেয়। এই অযত্নে চুলকানি, রুক্ষ ত্বক, ঠোঁট ফাটা, এমনকি অনেকের হাত-পা ফেটে রক্তপাত পর্যন্ত হয়। বিশেষত শুষ্ক ত্বক যাদের, তাদের জন্য শীত এক ভীতিকর মৌসুম। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শীতের শুষ্কতার সঙ্গে লড়াই করার উপায়ও আছে। ঠান্ডা কিংবা ধোঁয়া ওঠা গরম নয়; কুসুম গরম পানিতে গোসল করা যেতে পারে। কারণ, গরম পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে। চলতে-ফিরতে হাতের কাছেই রাখা যেতে পারে লিপ বাম। অলিভ অয়েল, নারকেল তেল বা বাদাম তেল ত্বকে হালকা মাসাজ করা যেতে পারে রাতে, ঘুমানোর আগে। শীত উপভোগও করা যেতে পারে। রোদের আলোতে ১৫-২০ মিনিটের অবসর যাপন দূর করতে পারে ভিটামিন ডির অভাব।
উইন্টার হাইবারনেশন গিল্ট কমানোর জন্য স্কিন কেয়ারকে সহজ, কমপ্যাক্ট আর মেন্টালি কমফোর্টিং রুটিনে পরিণত করা সবচেয়ে কার্যকর। শীতের সকালের শক্তিশালী, জটিল রুটিন মানুষের মাঝে ক্লান্তি এবং ডিসিশন ফ্যাটিগ এনে দেয়। অর্থাৎ ত্বকযত্নের জন্য, সাজের জন্য একটির পরে একটি প্রসাধন ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সহজে ব্যবহার করা যায়, কম লেয়ারিংয়ে সম্ভব—এমন বিউটি কেয়ার প্ল্যান এ সময়ে কাজের। ক্রিমি টেক্সচারের ক্লিনজার, মাইসেলার ওয়াটার, রিচ ময়শ্চারাইজার, অল-ইন-ওয়ান সেরাম ময়শ্চারাইজার বেছে নিলে রুটিন সহজ হতে পারে। তাতে যত্ন নেওয়া হয়, আত্মগ্লানিও কমে। সকালের চেয়ে সন্ধ্যায় তুলনামূলক বেশি উদ্দীপ্ত বোধ করলে সে সময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে এক্সফোলিয়েন্টস, কনসেন্ট্রেড সেরাম। কারণ এই পর্বে সময় বেশি লাগে। সেনসরি উপাদান এ সময়ে বেশ কার্যকরী। ওয়ার্ম হ্যান্ড অ্যাপ্লাইড ক্লিনজার, সফট সেন্টেড ময়শ্চারাইজার, শিট মাস্ক, স্লিপিং মাস্কের মতো আনন্দদায়ক যত্ন চলতে পারে নিয়মিত। তাতে মানসিক চাপ কমে আসবে। হাইড্রেটিং উপাদান যেমন হায়ালুরনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন এবং বেরিয়ার প্রটেক্টিং অয়েল ব্যবহারে ত্বকে দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তন আসে; যা নিয়মিত যত্নকে উৎসাহিত করে। মাঝেমধ্যে ফান বুস্টার ওয়ার্ম ফেশিয়াল স্টিম নেওয়া যেতে পারে, দু-তিন মিনিটের জন্য। প্রিয় সুগন্ধি থাকতে পারে রোজকার রুটিনে। এতে মানসিক চাপের পাশাপাশি অনুশোচনাও কমবে।

 উম্মে হানী
মডেল: তাজরিয়ান
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top