কুন্তলকাহন I শ্যাম্পুর প্রাকৃতিক সঙ্গী
প্রাকৃতিক নানা উপাদান শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য থাকে অটুট
চুলের যত্নে খুব প্রচলিত একটি উপকরণ হলো শ্যাম্পু। তবে এটিই যথেষ্ট নয়। বাড়তি পুষ্টির জন্য অবশ্যই কিছু প্রাকৃতিক উপকরণ শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। চুল মজবুত করতে, ঝরে যাওয়া রোধে ও দ্রুত বৃদ্ধিতে রেগুলার শ্যাম্পুর সঙ্গে এগুলো মিশিয়ে নেওয়া ভালো।
লেবুর রস: প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েশন, অ্যান্টি-ফাংগাল ও অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণে ভরা লেবু খুশকি নিরাময়ের সেরা উপায়। ক্লিনজিং হিসেবে এটি বেশ ভালো কাজ করে। স্টাইলিংয়ের জন্য বিভিন্ন হেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করা হয়, এতে চুল নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এসব উপকরণ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে লেবুর রস সাহায্য করে। মাথার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে এটি বেশ কার্যকর। তেলগ্রন্থির কোনো ক্ষতি না করেই খুশকি ও মাথার তৈলাক্ত ত্বক চুল পাতলা করে ফেলে ও ভঙ্গুরপ্রবণ করে তোলে। শ্যাম্পুতে নিয়মিত লেবুর রস ব্যবহার করলে চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব।
দুই টেবিল চামচ মাইল্ড ন্যাচারাল শ্যাম্পুর সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মাথার ত্বকে আলতো করে ম্যাসাজ করুন কিছু সময়। এবার ভালো করে ধুয়ে নিন।
মধু: অপ্রক্রিয়াজাত মধু প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাংগাল। মাথার ত্বকে ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা হলে মধু ব্যবহারে তা নিরাময় সম্ভব। এটি একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। মাথার ত্বক হেলদি করে তুলতে, ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে ও চুলের ময়শ্চার ধরে রাখতে বেশ কার্যকর। চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তাকারী ফলিসেলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে মধু সহায়ক। এর ঠিকঠাক ব্যবহার নিষ্প্রাণ ফলিসেলকে সতেজ করে তুলতে পারে, যাতে চুলের বৃদ্ধি শতগুণ বাড়িয়ে দেয়।
হাফ টেবিল চামচ অর্গানিক মধু দুই টেবিল চামচ শ্যাম্পুর সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে শ্যাম্পু করে নিন। তবে প্রতিদিন মধু চুলে ব্যবহার করলে চুলের রঙ হালকা হয়ে যাবে।
অ্যালোভেরা: বহুগুণ সমন্বিত অ্যালোভেরা চুল ঝরে যাওয়া, খুশকি ও মাথার ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধ এবং ময়শ্চার ধারণ ও ভারসাম্য রক্ষায় সক্ষম। যেকোনোভাবে এটি ব্যবহার করা যায় নিশ্চিন্তে। কারণ, এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
এক টেবিল চামচ তাজা অ্যালোভেরা জেল ও দুই টেবিল চামচ ন্যাচারাল শ্যাম্পু মিশিয়ে নিন। এবার শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নিন।
গোলাপজল: চুলের বৃদ্ধিতে, মাথার ত্বক শীতল রাখতে এবং খুশকি দূর করতে গোলাপজলের জুড়ি নেই। এটি চুল ও মাথার ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য ঠিক রাখে।
এক টেবিল চামচ অর্গানিক গোলাপজল ও দুই টেবিল চামচ শ্যাম্পু একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি ব্যবহার করুন।
গ্লিসারিন: ময়শ্চারকে চুলে লক করে দেয় গ্লিসারিন- যা শুষ্ক, রুক্ষ ও ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য জরুরি। চুল হাইড্রেট করতে এটি অসাধারণ।
ন্যাচারাল শ্যাম্পুর সঙ্গে সামান্য গ্লিসারিন মিশিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে শ্যাম্পু করে নিন। ভালো করে চুল ও মাথার ত্বক ধুয়ে নিন।
চিনি: শরীরের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর হলেও চিনি শ্যাম্পুতে মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা দেবে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যবান চুল। শ্যাম্পুতে চুলের সব চটচটে ভাব কমানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। এতে শুধু চুল পরিষ্কার হলেও মাথার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার হয় না। চিনির ব্যবহারে তা সহজেই সম্ভব।
দুই টেবিল চামচ শ্যাম্পুর সঙ্গে এক টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। এবার শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নিন। এবং প্রতি চারবার ধোয়ার পরপর এটি করে নিতে পারেন, যাতে ওভার এক্সফোলিয়েট না হয়ে যায়।
আমলকী: মাথার ত্বকের চামড়া ওঠা বা মৃতকোষ ও খুশকি দূর করতে বেশ পরিচিত ও কার্যকর আমলকী বা আমলা। এটি লোমকূপের মুখ উন্মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। ফলে মাথার ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই স্বাভাবিক তেল উৎপাদনের সুযোগ পায়। এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সহায়ক।
হাফ টেবিল চামচ আমলকীর রস ও দুই টেবিল চামচ রেগুলার শ্যাম্পু মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
এসেনশিয়াল অয়েল: রোজমেরি বা ল্যাভেন্ডার অয়েল সুগন্ধের জন্য বেশ পরিচিত এবং খুশকি, মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সক্ষম। টি-ট্রি অয়েলও ভালো কাজ দেয়। এটি হেয়ার ফলিসেলকে উদ্দীপিত করে। ফলে চুল দ্রুত বাড়ে, মজবুত ও উজ্জ্বল হয়।
তিন থেকে পাঁচ ফোঁটা পছন্দের এসেনশিয়াল অয়েল দুই টেবিল চামচ হারবাল শ্যাম্পুতে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
আহমেদ বুবলি
মডেল: রিফা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন