সেলুলয়েড I উমা
কাহিনি, চিত্রনাট্য, পরিচালনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
প্রযোজনা: ভেঙ্কটেশ ফিল্মস
সংগীত: অনুপম রায়
অভিনয়ে: যীশু সেনগুপ্ত, সারা সেনগুপ্ত, অঞ্জন দত্ত, শ্রাবন্তী, জারা সেনগুপ্ত, রুদ্রনীল ঘোষ, গার্গী রায়চৌধুরী, মনোজ মিত্র, বাবুল সুপ্রিয়, সৃজিত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
আর্য দেবী দুর্গার মহৎ আখ্যান বা গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ থেকে বাংলায় উমার ঘরে ফেরার লৌকিক কাহিনি অনেক বেশি জনপ্রিয়। সময়ের সঙ্গে সামাজিক বিনির্মাণে কালে-কালে তার বহু রূপান্তর ঘটেছে বাংলা সাহিত্যে, চলচ্চিত্রে, শিল্পের নানা মাধ্যমে। উমা-আখ্যানের রূপান্তরের এই ধারাবাহিকতায় কলকাতার চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় নির্মাণ করেছেন তার নতুন ছবি। সেই ছবির নামও ‘উমা’।
কৈলাস থেকে মা মেনকা ও গিরিরাজের কন্যা উমার বঙ্গভূমিতে নিজের গৃহে ফেরার আখ্যানের আভাস রয়েছে এ ছবির ন্যারেটিভে। সুইজারল্যান্ডে বাবা হিমাদ্রী সেনের সঙ্গে বসবাসকারী বাঙালি কিশোরী উমাকে নিয়ে এ ছবির বিস্তার। দুরারোগ্য অসুখে অসুস্থ উমার সাধ ছিল কলকাতার দুর্গাপূজা দেখার। সেই মতো শরৎকালে বাবার সঙ্গে কলকাতায় আসার কথা তার। উমা তার বাবা-মায়ের শহর কলকাতায় কখনো যায়নি। সেই শহরের দুর্গাপূজার কথা বহু শুনেছে, অথচ নিজের চোখে কখনো দেখেনি সেই পূজা। যেমন সে দেখেনি তার মাকে। কারণ, শৈশবেই বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের ফলে মায়ের থেকে দূরে সরে যেতে হয় উমাকে। যেকোনো মুহূর্তে তার কিছু একটা হয়ে যেতে পারে, তাই যত শিগগির সম্ভব মেয়ের সাধ পূরণের লক্ষ্যে বসন্তকালেই কলকাতায় ‘নকল’ এক দুর্গাপূজার আয়োজনের কথা মাথায় আসে উমার বাবা হিমাদ্রীর। আর্ট ইনস্টলেশনের মতো শহরের একাংশজুড়ে সত্যিকারের দুর্গাপূজার মতো একটা উৎসবের আয়োজন করার ব্যাপারে একসময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ব্রহ্মানন্দের সাহায্য নেন। উমা কলকাতায় তার নিজের শিকড়ে ফেরে। এদিকে বসন্তে শারদ উৎসবের ফলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে মার্চ মাসে দুর্গাপূজায় বাদ সাধেন হিন্দুত্ববাদী এক নেতা। পূজা বানচাল করার চেষ্টা চালান তিনি। কিন্তু মানুষ উমার পাশে, তাই তাঁকে ক্ষান্ত হতে হয়। পরে মেয়েটার শারীরিক অবস্থার কথা শুনে নিজের একগুঁয়ে অবস্থান থেকে বের হয়ে আসেন। দুর্গাপূজার আনন্দ উপভোগ করে উমা। বিসর্জনের দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে উমাকে ফিরে যেতে হয় সুইজারল্যান্ডে।
এ ছবির ভাবনাটা মোটাদাগে ভালোই ছিল। কিন্তু ন্যারেটিভের ঘটনা-পরম্পরার অনেক ক্ষেত্রেই এমনভাবে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে, যা সামনে এনেছে চিত্রনাট্যের দুর্বল দিকগুলো। ছবিতে উমার মা মেনকাকে উমার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি, বরং অন্য এক মহিলাকে মেনকা সাজানো হয়েছে উমার কাছে। কিশোরী উমা তা বুঝতেও পারে, বাবা-মায়ের পুরোনো ফটোগ্রাফে। কিন্তু মেনকার চরিত্রটিতে ফোকাস এতই কম যে লৌকিক উমার আখ্যানের বিষয়টি এখানে ধাক্কা খেয়েছে। পৌরাণিক ও লৌকিক উমার আখ্যানে মা মেনকা যেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এই চরিত্রই ছবিটিতে প্রায় ব্রাত্য। এ ছাড়া হিন্দুত্ববাদী ও বিহারি গুন্ডারা হঠাৎ বিবেকের দংশনে ছবিতে যেভাবে ‘ভালো’ হয়ে গেলেন, তা-ও অবাস্তবিক।
তবে ব্রহ্মানন্দ চরিত্রে অঞ্জন দত্তের অভিনয় দারুণ। হিমাদ্রী চরিত্রে যীশু সেনগুপ্তও স্বাভাবিক। মারিয়ম বা ভাড়া করা মায়ের ভূমিকায় শ্রাবন্তীও মন কেড়েছে। আর উমার চরিত্রে সারা সেনগুপ্তের অভিনয়ও সুন্দর। ক্যামেরা, এডিটিং ইত্যাদি আহামরি কিছু না হলেও কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো। তবে আর্ট ডিজাইন প্রশংসনীয়। পোশাক, হেয়ারস্টাইল ইত্যাদি ছবিটিকে বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে সাহায্য করবে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রডাকশন ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যাট ডিরেক্টর, একসময়ের বিখ্যাত ও আজকের ব্যর্থ পরিচালক, অডিশন দিতে আসা মানুষেরা, বিদেশে থাকা করপোরেট পিতা, কলকাতার করপোরেট ব্যক্তি, হিন্দুত্ববাদী নেতা, বিহারি গুন্ডা এবং ফুটফুটে কিশোরী উমার সাজসজ্জা, পোশাক- সবই প্রয়োজনমতো হয়েছে। ছবির সংগীত সুখকর।
অতনু সিংহ
কুইজ
১। ব্রহ্মানন্দ চরিত্রে কে অভিনয় করেছেন?
ক. সৃজিত মুখোপাধ্যায় খ. অঞ্জন দত্ত গ. রুদ্রনীল ঘোষ
২। উমা চরিত্রে কে অভিনয় করেছেন?
ক. সারা সেনগুপ্ত খ. জারা সেনগুপ্ত গ. শ্রাবন্তী
৩। উমা ও তার বাবা বিদেশের কোথায় থাকতেন?
ক. নিউইয়র্ক খ. সিঙ্গাপুর গ. সুইজারল্যান্ড
গত সংখ্যার বিজয়ী
১. ফাহিমুর রহমান সিয়াম, উত্তরা, ঢাকা।
২. ফারিয়া ইয়াসমিন, ধানমন্ডি, ঢাকা।
৩. শুভ্র, চকবাজার, চট্টগ্রাম।