ফুড বেনিফিট I আলুবোখারা
শরীরের অভ্যন্তরে যেমন, ত্বকেও তেমন এই ফলের অবদান। স্বাদে, পুষ্টিতে আর রোগ প্রতিরোধে এর তুলনা নেই
ফলটির নাম কোথাও কাটিংকা, কোথাও ফ্লাউমেন কিংবা হানিটা নয়তো আওয়াবাখার, প্রেজেন্টা। বাঙালিরা একে বলে আলুবোখারা। এই ফলের প্রথম গাছটি ঠিক কোথায় কবে আবিষ্কৃত হয়েছে, তা আজও অজানা। তবে সপ্তদশ শতাব্দীতে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে আলুবোখারার উন্নত জাতগুলো উদ্ভাবিত হয়েছিল। টক-মিষ্টি স্বাদের এ ফল বাংলাদেশিদের কাছে খুব আদৃত। সুস্বাদু বলেই। সারা বিশ্বে প্রায় দুই হাজার ধরনের আলুবোখারা পাওয়া যায়। জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে এ ফল মেলে। চাষের ভিন্নতায় এর রঙ একেক দেশে একেক রকমের হয়। সাধারণত লাল, কফি, গাঢ় নীল, ম্যাজেন্টা, হলুদ ও হালকা সবুজ রঙের হয় আলুবোখারা। প্রায় বৃত্তাকার। মাঝে মাঝে হৃদয়াকৃতিরও পাওয়া যায়। মসলা হিসেবে এটি রসনায় ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে স্বল্প ব্যবহৃত। তা উচ্চমূল্যের কারণেই।
পুষ্টিগুণে ঠাসা আলুবোখারার প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্যশক্তি আছে ৪৬ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেটস ১১.৪২ গ্রাম, প্রোটিন ০.৭০ গ্রাম, ফ্যাট ০.২৮ গ্রাম, নিয়াসিন ০.৪১৭ মিলিগ্রাম, খাদ্যআঁশ ১.৪০ গ্রাম, ফোলেট ৫ মাইক্রোগ্রাম, প্যানথোনিক অ্যাসিড ০.১৩৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৯.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৩৪৫ আইইউ, ভিটামিন ই ০.২৬ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ৬.৪ মাইক্রোগ্রাম, পটাশিয়াম ১৫৭ মিলিগ্রাম, কপার ০.০৫৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.১৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৬ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৭ মিলিগ্রাম এবং জিংক ০.১০ মিলিগ্রাম।
আলুবোখারায় যথেষ্ট ভিটামিন এ রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার পাশাপাশি চোখের অন্যান্য রোগও দূরে রাখে। খাদ্যআঁশ থাকায় পরিপাক ক্রিয়া তথা হজমশক্তি বাড়ানোর সঙ্গে খাওয়ার রুচি বৃদ্ধি করে এ ফল। পেটে কোনো রোগবালাই থাকলে আলুবোখারা তা সারাইয়ের কাজ করে। শরীরে রক্ত বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় আয়রনের উৎস আলুবোখারা। এটি রক্তের লৌহকণিকা বাড়িয়ে শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করে। রক্তসঞ্চালনেও ভূমিকা রাখে এটি। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এটি স্ট্রোক প্রতিরোধ ও রক্তের স্বাভাবিক গতি নিশ্চিত করে। ভিটামিন কে-এর উপস্থিতির কারণে এটি খেলে রক্তের যেকোনো রোগ দূর হয়।
আলুবোখারা হৃদপি-ের বন্ধু। অতি উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বহন করে বলে এটি শরীর থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে। ফলে হৃদপি- ভালো থাকে।
ত্বকেও স্বস্তিকর প্রভাব ফেলে আলুবোখারা। এটি নিয়মিত খেলে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে না। আলুবোখারায় বিদ্যমান ল্যাক্সোটিভ ও বার্ধক্যবিরোধী গুণাগুণ সারা বিশ্বের বয়স্ক মানুষের কাছে সমাদৃত। এ ফল তারুণ্য ধরে রাখে। ত্বক ছাড়াও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় এর তুলনা হয় না। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে এই ফল। আলুবোখারায় থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস স্তন ক্যানসারের জন্য দায়ী কোষগুলোকে ধ্বংস করে। যেকোনো ক্যানসারের জীবাণু প্রতিহত করতে পারে এই উপাদান। হাড় গঠনেও এর ভূমিকা অপরিসীম। গবেষণায় দেখা গেছে, আলুবোখারা খেলে হাড়ের যত্ন নিশ্চিত হয়। বিশেষ করে মেনোপজ হয়ে যাওয়া নারীর হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে আলুবোখারার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। যখন-তখন রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয় এটি। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও আলুবোখারার অবদান প্রশংসনীয়। এ ফল নার্ভের জন্য বেশ উপকারী। এটি মানসিক চাপও দূরে রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য বিদায় করতেও আলুবোখারার জুড়ি নেই।
এই ফল শরীরে ওজন কমাতে কার্যকর। অনেকে কষ্ট করে ওজন কমানোর কিছুদিন পর তা ফিরে আসার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে নিয়মিত আলুবোখারা খাওয়া জরুরি। এটি স্থূলতা কমিয়ে স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখতে সক্ষম। জ্বরের সময় রুচি বাড়াতে আমলকীর পাশাপাশি এ ফল খাওয়ানোর চল রয়েছে। এ ছাড়া সকালের নাশতায় আলুবোখারা খেলে সারা দিন চনমনে থাকা যায়। ডায়াবেটিসের রোগীরাও এটি খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।
সাধারণত ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, ভারত, জার্মান, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, চীন, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় এর ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, স্যালাড, জ্যাম, জেলি, আচার, বোরহানিসহ নানা সুস্বাদু খাবার তৈরিতে আলুবোখারা ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া এটি চিনি, মরিচ ও সরিষার তেল সহযোগে চাটনির মতো করে কিংবা বিভিন্ন উপাদান যোগ করে রান্না করে খাওয়া যায়। মধ্য ইংল্যান্ডে সিডার জাতীয় অ্যালকোহলিক বেভারেজ আলুবোখারা থেকেই প্রস্তুত করা হয়।
শিবলী আহমেদ
ছবি: ইন্টারনেট