রিভিউ I জীবনসংগ্রামের চিত্রমালা
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এর কালরাত। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা। বিদেশে এক বর্ডার থেকে অন্য বর্ডারে দুই মেয়ের ছুটে বেড়ানো। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের রাজধানী দিল্লিতে তালুকদার পদবি নিয়ে জনচক্ষুর আড়ালে একপ্রকার লুকিয়ে থাকা। ইন্দিরা গান্ধীর স্নেহ।
এবং শৈশব। বাবাকে ঘন ঘন জেলে যেতে দেখা। বাবা-মায়ের স্নেহ। দুই বোনের একজন পরিপাটি, আরেকজন অলস। কিন্তু যিনি অলস, তিনিই এখন স্বাধীন বাংলাদেশের অভিভাবক। তিন ভাই। দুই ভ্রাতৃবধূ। কামালের বিয়ে। পান্নালালের গলায় পিতার পছন্দের রামপ্রসাদী গান, ‘আমার সাধ না মিটিলো আশা না পুরিলো…’
এসব প্রসঙ্গের ভেতর দিয়ে এই ডকুমেন্টারিতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার জীবনের ন্যারেটিভ কাব্যিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক পিপলু খান। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনার থেকেও বেশি করে উঠে এসেছে বাপ-মা হারা কন্যার অশ্রু, হাহাকার, জীবনসংগ্রামের চিত্রমালা। আর তাঁর একমাত্র পারিবারিক ছায়াসঙ্গী ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তাঁদের পারস্পরিক নির্ভরতা, ইমোশনের চালচিত্র। অতীতের সুখ-দুঃখ, ঝড়-ঝঞ্ঝার দৃশ্যকল্প শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দৃষ্টিকোণ থেকে শৈল্পিক কল্পনার আশ্রয়ে রচিত হয়েছে ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’ নামক তথ্যচিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি। এ ছবিতে অশ্রু, হাহাকার ও জীবনসংগ্রামের ইতিবৃত্তকে দৃশ্যশ্রাব্যের পাশাপাশি ধারণ করেছে আবহসংগীত। এসব মিলিয়ে এই তথ্যচিত্র নান্দনিক মাত্রা অর্জন করেছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বর্তমান ব্যক্তিজীবনের অন্দর, রান্নাঘর থেকে খাওয়ার টেবিল, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি- এ সবকিছুই প্রকাশ পেয়েছে যথার্থভাবে। পুরোনো রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, বিশ্বাসঘাতকতার রক্তাক্ত ইতিহাস- এসব তো আছেই। সঙ্গে অতিরিক্ত পাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কিছু দুষ্প্রাপ্য লাইব্রেরি ফুটেজ। ন্যারেটর হিসেবে শেখ রেহানা অসাধারণ। তাঁর বর্ণনা এ ছবির প্রাণ।
কিন্তু এত কিছুর পরেও ১৫ নভেম্বর বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে এ তথ্যচিত্রের প্রিমিয়ার দেখে মনে হয়েছে, এ ছবি আরও ডিটেইলে প্রবেশ করতে পারতো। টুঙ্গিপাড়ায় আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারতো ক্যামেরা। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার নিকটজনদের মুখোমুখিও হতে পারতেন ছবির পরিচালক। ১৫ আগস্টের নারকীয় ঘটনার ওপর আরেকটু ফোকাস করা যেত। একটু বেশি করে উঠে আসতে পারতো গ্রেনেড হামলার বিষয়ে কথাবার্তা। কেননা, এই তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। তাই আরও কিছু আবেগঘন মুহূর্ত মন্থন করতে পারতেন পরিচালক পিপলু।
যাই হোক, ভালো কাজের ব্যাপারে অতিরিক্ত প্রত্যাশা থাকেই। সে কথা না বাড়িয়ে এটা বলা যায়, ছবিটি সুন্দর। ক্যামেরা, সম্পাদনা, মিউজিক, রামপ্রসাদের গানের ব্যবহার, শব্দগ্রহণ- সব বিষয়েই ছবিটি সফল। বিশেষত সাদিক আহমেদের সিনেমাটোগ্রাফি আর দেবজ্যোতি মিশ্রর আবহ সংগীত। নবনীতার সম্পাদনাও সফল। সব মিলিয়ে বলা যায়, পিপলু খান অভিনন্দনযোগ্য তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন।
এই মুহূর্তে দেশের ২৭টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবেও ছবিটি পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগির আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পেতে চলেছে ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’।
অতনু সিংহ
ছবি: সংগ্রহ