নাবিলা নবি। বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া যুক্তরাজ্যপ্রবাসী শিল্পী। টেক্সটাইল আর্টের মাধ্যমে নিপুণ কারুকাজে সুতা, বুনন ও ঐতিহ্যের ঘটিয়েছেন চমৎকার সমন্বয়। শব্দে নয়; রং আর টেক্সচারে প্রকাশিত এক শিল্পভাষা গড়ে তুলেছেন তিনি।
সুতা ও বুননের মধ্য দিয়ে তিনি বলে যান প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও আত্মার কথা। তার হাতে গড়া শিল্প যেন আত্মদর্শনের এমন এক আয়না, যেখানে জীবনের গতিময়তা মিশে থাকে প্রতিটি ফোঁড়, প্রতিটি রঙে।

ম্যানচেস্টারে বসবাসকারী এই শিল্পীর কাজের শিকড় ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মাটি, সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও ঐতিহ্যে। তাঁতের মাধ্যমে তার গড়ে তোলা শিল্পভাষায় মিশে গেছে অতীত ও বর্তমান; লোকজ গল্প এবং পরিবেশ সচেতনতার বার্তা।
এ দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁত ও লোকশিল্পকে ঘিরে তিনি তৈরি করেছেন নিজের প্রতিটি কাজ। নাবিলা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্র্যাফটে বিএফএ ও এমএফএ করার সময়ই বুননের ভেতর নিজস্ব এক আত্মিক অনুভব খুঁজে পেয়েছি আমি। বিশ্বাস করি, প্রকৃতির আত্মা কখনো নিঃশেষ হয় না; সে রূপ বদলে ফিরে আসে নতুনভাবে।’
এই বিশ্বাস থেকেই তার প্রতিটি বুননে জন্ম-মৃত্যু-পুনর্জন্মের চক্র, জীবনের আলিঙ্গন এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অদৃশ্য যোগসূত্র ফুটে ওঠে। লোকজ মোটিফ ব্যবহারের পাশাপাশি পরিবেশ সংকট, মানবিক দুর্বলতা ও আত্মদর্শনকেও তুলে ধরেন তিনি নিজের কাজে।

নাবিলার অন্যতম অনুপ্রেরণা বিশ্বখ্যাত টেক্সটাইল শিল্পী শীলা হিক্স। তার মতো নাবিলাও টেক্সচারের মাধ্যমে স্মৃতি, আত্মা ও সংস্কৃতির গল্প তুলে ধরেন; তবে নিজস্ব ঢঙ, বাংলার মাটি ও গন্ধ সঙ্গী করে। এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় ২০২৩ সালের অক্টোবরে সলফোর্ডে তার প্রদর্শিত ইনস্টলেশনের কথা; যেখানে একটি প্রতীকী বৃক্ষ ও গর্ভস্থ শিশুর চিত্রের মাধ্যমে ‘বন উজাড় ও মানবিক হুমকির সংযোগ’ তুলে ধরেছিলেন এই শিল্পী।
ইতিমধ্যে বিশ্বের নানা প্রান্তে জায়গা করে নিয়েছে তার কাজ। তিনি অংশ নিয়েছেন বেইজিং আন্তর্জাতিক আর্ট বিয়েনালের ৭ম ও ৮ম আসরে; তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ফিলিপাইন ও ভুটানে করেছেন প্রদর্শনী। বিভিন্ন দেশের সরকারি ও ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে তার টেপেস্ট্রিগুলো।

শুধু প্রদর্শনী নয়; নিয়মিত কর্মশালা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনেও অংশ নেন নাবিলা নবি। চলতি বছর আলজেরিয়ার একটি আন্তর্জাতিক উৎসব এবং দুবাইয়ের একটি শিল্প প্রদর্শনীতে অংশ নিতে যাচ্ছেন, যা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তার উপস্থিতিকে আরও দৃঢ় করবে বলে আশা রাখা যায়।
নাবিলা নবির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট: https://nabilanabi.com।
- ক্যানভাস অনলাইন
ছবি: নাবিলা নবি’র সৌজন্যে

