সামান্য শব্দেই আজকাল অনেকেই মানসিক স্থৈর্য হারাচ্ছে। আগ্রহ হারাচ্ছেন কাজে। কাজ থেকে ফোকাস সরে যাচ্ছে। যেমন ধরা যাক, অফিসে কোনো কর্পোরেট মিটিংয়ের মাঝে কেউ চা-বিস্কুট খেলে, চা পানের শব্দে অথবা বিস্কুটে কামড় দেওয়ার শব্দে মিটিংয়ে উপস্থিত অপর এক কলিগ মিটিং থেকে সম্পূর্ণ মনোসংযোগ হারিয়ে ফেললেন। কারণ, চা পান অথবা বিস্কুটে কামড় দেওয়ার মতো সূক্ষ্ম শব্দগুলোও বিরক্ত করছে।
নিঃশ্বাস, প্রশ্বাসের শব্দ, বৃষ্টির শব্দ, বাতাস বইবার শব্দ, খাবার চিবানোর শব্দের মতো অতি স্বাভাবিক শব্দেও বিরক্ত হওয়া বা মানসিকভাবে অস্থির হয়ে ওঠার এই রোগের নাম মিসোফোনিয়া। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের নিউক্যাস্টল ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, মিসোফোনিয়া আক্রান্ত মানুষের মস্তিষ্কের গঠন সাধারণ মানুষের থেকে কিছুটা আলাদা।
এই ধরনের মানুষের আবেগজনিত প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক হয়। সামান্য শব্দ এদের মস্তিষ্কে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর ফলে তাদের হৃৎস্পন্দনের মাত্রা বেড়ে যায়। সামান্য শব্দেই মিসোফোনিয়ার রোগীরা অস্বাভাবিকভাবে ঘামতে শুরু করেন। বাচ্চার কান্না কিংবা টেলিভিশনের শব্দও এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
মাত্রাতিরিক্ত কাজের প্রেসার, মেট্রোসিটিতে বেড়ে চলা শব্দদূষণ, আরবান সিটিজেনের পেশাজগৎ ও পারিবারিক জীবনে মাত্রাতিরিক্ত জটিলতার মতো নানা কারণেই মিসোফোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাউন্সেলিং আর মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে ট্রিটমেন্টের পাশাপাশি শহর থেকে দূরে নিরিবিলি পরিবেশে কিছুদিন অবসর যাপনের মাধ্যমে এ রোগের মোকাবিলা করা যেতে পারে। তবে সম্পূর্ণ নিরাময় কীভাবে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। যদিও এই অসুখ ছড়িয়েও পড়ছে দ্রুত।