skip to Main Content

ফিচার I ফাগুন থেকে ফাগুনে

প্রেম একসময় ছিল লুকিয়ে রাখার অনুভূতি। যেন একই সঙ্গে মহাপাপে ডুবেছে দুজন। অপরাধের বোঝায় তাই মুখ দেখানো দায়! যুদ্ধ-বিদ্রোহ করে সেখানে এসেছে পরিবর্তন। ভালোবাসা এখন উদ্‌যাপিত হচ্ছে মহাযজ্ঞের আয়োজনে। বিশেষভাবে পোশাক পরিকল্পনাও তারই একটি অংশ

আকাশের চাঁদ আর প্রেম লুকিয়ে রাখা যায় না—পুরোনো কথা। খনার বচন নয়, কিন্তু গুরুজনদের মুখে বহুবার আওড়ানো বুলি। মন দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক লুকিয়ে রাখার চল ছিল নব্বইয়ের দশকেও। তারপরে ধীরে ধীরে এসেছে পরিবর্তন। ভালোবাসা দিবস ঠিক সে সময় থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এই দিনকে ঘিরে হাজার রকমের আয়োজন হয়ে থাকে। ভালোবাসার বার্তা লেখা কার্ড-ফুল-চকলেটে চলে দারুণ সেলিব্রেশন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়; এরপরে ভালোবাসার রং সাজিয়ে তোলে ফ্যাশন বাজারও। সেই শুরু। এখন প্রতিবছর দেশের ফ্যাশন বাজারে দেখা যায় কাপল ড্রেসের আয়োজন। কিন্তু সেই তিন যুগের বেশি সময় ধরে চলা কাপল ড্রেস ফ্যাশন কি এখনো একই জায়গায় থেমে আছে? নাকি সেখানে এসেছে পরিবর্তন?
ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন আপডেটে জানা যায়, এবারে লাল আর গোলাপি থাকবে পছন্দের তালিকার ওপরের দিকে। এই দুই রঙের সুন্দরতা এবারেও হবে প্রকাশিত। রোমান্টিক প্রিন্টেও আগ্রহ দেখা যাবে। আর ম্যাচিং আউটফিট পাবে দারুণ মনোযোগ। দেশের ফ্যাশন বাজারেও এই ট্রেন্ডের কিছুটা প্রভাব পড়বে।
আমাদের দেশি ব্র্যান্ডগুলো উৎসবকেন্দ্রিক আয়োজনে সিদ্ধহস্ত। ধর্মীয় উৎসব আর পয়লা বৈশাখের পাশাপাশি ভালোবাসা দিবসও গুরুত্বপূর্ণ। তাই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিশেষ সংগ্রহ বাজারে নিয়ে আসে বেশির ভাগ ফ্যাশন লেবেল। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই সেসব সংগ্রহ থেকে কেনাকাটা শুরু করেন ক্রেতারা। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু কিছু নতুনের কেতন উড়ছে। এথনিক আর ওয়েস্টার্ন—দু-ই থাকবে এ সময়ের আলোচনায়। ব্যক্তি অনুযায়ী ভাবনার প্রকাশ দেখা যাবে পোশাকে।
কালার ম্যাচ
রং মিলিয়ে পোশাক বেছে নেওয়ার চল বহু পুরোনো। কিন্তু এখনো ইন ফ্যাশন। দেশীদশ, আজিজ সুপার মার্কেট, বেইলি রোড, মোহাম্মদপুর, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কে দেশের ব্র্যান্ডগুলোর সাজানো পসরায় ঢুঁ মেরে দেখলে তেমনটাই মনে হয়। লাল, ম্যাজেন্টা, সাদা, কমলা, মেরুনের জুটিবদ্ধ পোশাক নজর কাড়ছে সহজে। কারুকাজের বাড়বাড়ন্ত তেমন গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেনি এ বছরে। রং মিলান্তিতেই হবে বাজিমাত—এমনটাই ধারণা ফ্যাশন জগতের গুরুজনদের। অতিরঞ্জনের অত্যাচার নেই। রঙে প্রকাশ পেয়েছে সৃজনশীলতার চর্চা।
গ্রাফিক টি অর হুডিস
পারসোনালাইজড লুক মিলেনিয়ালস এবং জেনারেশন জেড—উভয়ের পছন্দের তালিকায় আছে। এ বছরের ভ্যালেন্টাইন ফ্যাশনে গ্রাফিকের ম্যাজিক আলোচনায় থাকার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বেশ। প্রিয়জনের নাম, স্বাক্ষর, ছবি উপস্থাপন করা যেতে পারে টি-শার্ট অথবা হুডির ক্যানভাসে। আবার চাইলে প্রিয় কবিতা, প্রিয় ক্যারেক্টারকেও স্থান দেওয়া যেতে পারে।
কো-অর্ডিনেশন কেয়ার
কো-অর্ডিনেটেড ড্রেস এবারে বেশ ট্রেন্ডি। ভালোবাসার উদ্‌যাপনের দিনেও বেছে নেওয়া যেতে পারে এমন পোশাক। রং, ফ্যাব্রিক, প্রিন্ট, ডিজাইন—এসবের যেকোনোটিতে মিল রাখা যেতে পারে। আবার কোনো মিল না রাখলেও সমস্যা নেই। শুধু দুজনেই এই এক ঘরানার পোশাক পরলেও চলবে।
বিপরীত বিলাস
বৈপরীত্যেও হতে পারে ভালোবাসার প্রকাশ। সেটা কেমন? সাদা-কালো, লাল-নীল এমন। প্রেমিকের গায়ে সাদা পাঞ্জাবি থাকলে প্রেমিকা পরতে পারেন কালো শাড়ি। এই সূত্র মেনে আরও কিছু রং নিয়েও ভাবা যেতে পারে। যেমন হলুদ-রানী গোলাপি, লেমন-ম্যাজেন্টা, পার্পল-ব্যানানা ইয়েলো। এ তো গেল সহজ-সরল সূত্রে বৈপরীত্য বিলাস। এর বাইরে স্টাইলিং নিয়েও দেখানো যেতে পারে ম্যাজিক। সে কেমন? একদম সাজানো-গোছানো আউটফিটে তৈরি হতে পারেন একজন। অন্যজন স্ট্রিট ওয়্যারে রেডি হলেও বেশ লাগবে।
ইনকগনিটো মোড অন
এদিন নিজেদের সেলেব কাপল মনে করে তৈরি হওয়া যেতে পারে। যেন পাপারাজ্জিদের ক্যামেরা থেকে বাঁচতে আড়াল করা হচ্ছে নিজেদের। ক্যাপ, মাস্ক, হ্যাট, স্কার্ফ ব্যবহারে এই স্টাইলিং করা যেতে পারে। ভালোবাসা উদ্‌যাপনের এই দিনে সবাইকে আড়াল করে শুধু দুজন ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি নব্বইয়ের দশকের মানুষের কাছে খুব চেনা। ভয়ে ভয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সবাইকে লুকিয়ে ঘুরে বেড়াতে অনেকে তখন মাথায় ক্যাপ পরে নিতেন। একই সঙ্গে প্রেমিকাও মুখ ঢেকে নিতেন ওড়নায়। সেই অনুভূতিও পরখ করার সুযোগ থাকবে। আমাদের দেশে এই থিমের কোনো সংগ্রহ অফিশিয়ালি না থাকলেও নিজের চেষ্টায় তৈরি করে নেওয়া সম্ভব হবে।
কাউবয়-কাউগার্ল
কাউবয় হ্যাটের কথা মনে আছে? বড়সড় আকারের সেই হ্যাট পরে নিতে পারেন দুজনে। অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আনকোরাভাবে উপস্থাপন করতে চাইলে কাউবয় ফ্যাশন কোরের সাহায্য নিতে পারেন। হেড টু টয় কাউবয় স্টাইলিং করে নিলেই চলবে। টপ-বটমের হিসাব-নিকাশ সহজে করা যাবে। ব্রাউন লেদার, ভিনটেজ বুট আর টাসেলের সঙ্গে আঁটসাঁট শার্ট-প্যান্টের সন্ধিতে।
ফ্লাই দ্য ফ্ল্যাগ ফর ইচ আদার
দুজনেই যদি খেলাপ্রেমী হয়ে থাকেন, আর পছন্দের দল যদি হয় ভিন্ন, তাহলে নিজের পছন্দকে প্রিয়জনের গায়ে তুলে দিয়ে তার ফেভারিট টিমের জার্সি পরে নেওয়া যেতে পারে। একই কাজ করা যেতে পারে রঙের ক্ষেত্রেও। পার্টনারের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে।

 সারাহ্ দীনা
মডেল: সিয়াম, ফাবলিহা, সজিব,
রাহি ও ষড়ঋতু
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: কে ক্র্যাফট ও রঙ বাংলাদেশ
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top